পাশাপাশি: টিয়াবনে প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রয়েছেন পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক
সরকারি প্রকল্পের বিপুল বরাদ্দ নিয়ে ফের ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ময়নাগুড়িতে প্রাণীদের হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল কলেজ তৈরির জন্য সাড়ে তিনশো কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে শুনেই টিয়াবনে প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, “কে বানিয়েছে এই নকশা?” ময়নাগুড়ির তৃণমূল বিধায়ক অনন্তদেব অধিকারী জানান পূর্ত দফতর। মুখ্যমন্ত্রীর পাশে বসা পূর্তমন্ত্রী উঠে দাঁড়িয়ে জানান, “দফতর থেকেই আমাদের কাছে যে নকশা পাঠিয়েছিল, তাতে প্রায় ৩৪৬ কোটি টাকা খরচের প্রস্তাব ছিল। সেটা আমি আবার দফতরে ফেরত পাঠিয়েছি।” যা শুনে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, “কে তৈরি করেছে এই নকশা? মহা অবাস্তব লোক তো! যে নকশা করেছিল তার কি টাকার প্রতি কোনও দরদ নেই। শো-কজ করো! ওঁর ফাইল চেয়ে পাঠাও।’’
সরকারি প্রকল্পের বিপুল বরাদ্দ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভ প্রকাশ নতুন নয়। জুলাই মাসে উত্তরকন্যায় জলপাইগুড়ির প্রশাসনিক বৈঠকেই আধিকারিকদের সর্তক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। রায়গঞ্জে একটি কৃষি ভবন বানাতে প্রায় ১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মন্তব্য করেছিলেন, “অফিস বানাবে নাকি হোটেল!” মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য এ দিনের সভাতেই জানিয়ে দেন, এই প্রকল্প হবে না। তাঁর কথায়, ‘‘কয়েকশো কোটি টাকা করে প্রাণী মেডিক্যাল কলেজ হবে নাকি রাজপ্রাসাদ!’’ সরকারের টাকার কোনও অপব্যবহার করা যাবে না বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী। সাধারণ কলেজ যে ভাবে করে সে ভাবেই ময়নাগুড়ির প্রাণী হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজ হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন। পুরো বিষয়টি নিয়েই তিনি যে ক্ষুব্ধ তাও বুঝিয়ে দেন। মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, “সরকারের টাকা কি আকাশ থেকে আসে! মেডিক্যাল কলেজই একশো কোটি টাকায় হয়ে যায়, আর এই কাজে এত টাকা। আপনারা কি পেয়েছেন আমাকে!”
এ দিন কলেজের প্রসঙ্গ অবশ্য ময়নাগুড়ির বিধায়ক অনন্তবাবুই তোলেন। তিনি প্রাণীবিকাশ উন্নয়ন দফতরের চেয়ারম্যানও। তাঁর তত্বাবধানেই নকশা তৈরি হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। এ দিন তাঁকেই বকাঝকা করেন মুখ্যমন্ত্রী। গত জুলাই মাসেই যে কোনও সরকারি প্রকল্পের বা ভবনের নকশা অনুমোদন করার আগে ভালভাবে যাচাই করার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সরকারি প্রকল্পে অনর্থক টাকা বাড়িয়ে হিসেব করার প্রবণতা তৈরি হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছিলেন। মুখ্যসচিবের নির্দেশে কমিটি তৈরি করে সব প্রকল্পের খরচ যাচাই করার নির্দেশও দিয়েছিলেন তিনি। এ দিনের ঘটনার পরে সে নির্দেশের ফল কী হল তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর।