দ্বিতীয় দফায় রাজ্যের ক্ষমতায় এসে আদিবাসী এলাকার উন্নয়নে বিশেষভাবে নজর দিতে চান মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর নির্দেশেই ‘ওয়েস্টবেঙ্গল ট্রাইবস্ অ্যাডভাইসরি কাউন্সিল’কে (ডব্লুবিটিএসি) ঢেলে সাজা হয়েছে। চেয়ারম্যান স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উপদেষ্টামণ্ডলীতে রয়েছেন ঝাড়গ্রামের সাংসদ উমা সরেন এবং রাজ্যের কয়েকজন আদিবাসী বিধায়ক।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, কাল মঙ্গলবার দুপুরে প্রথমে ঝাড়গ্রাম এসপি অফিসে জেলাস্তরের প্রশাসনিক সভা করবেন মুখ্যমন্ত্রী। বিকেলে ঝাড়গ্রাম প্রকৃতি পর্যটন কেন্দ্র লাগোয়া সেমিনার হলে ডব্লুবিটিএসি-এর রাজ্যস্তরীয় প্রথম সভাটি হবে। পৌরোহিত্য করবেন মুখ্যমন্ত্রীই। থাকবেন মুখ্যসচিব, জেলাশাসক, মহকুমাশাসক, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য উমা সরেন। জঙ্গলমহলের বিধায়কদের মধ্যে থাকবেন ঝাড়গ্রামের সুকুমার হাঁসদা, নয়াগ্রামের দুলাল মুর্মু, কেশিয়াড়ির পরেশ মুর্মু, বিনপুরের খগেন্দ্রনাথ হেমব্রম, বান্দোয়ানের রাজীবলোচন সরেন, রানিবাঁধের জ্যোৎস্না মাণ্ডি ও রাইপুরের বীরেন্দ্রনাথ টুডু। এ ছাড়াও উইলসন চম্প্রমারি, বুলুচিক বরাইক, শুক্রা মুণ্ডা, সুনীলচন্দ্র তিরকের মতো উত্তরবঙ্গের উপজাতি সম্প্রদায়ের বিধায়করাও সভায় যোগ দেবেন।
গত পাঁচ বছরে জঙ্গলমহলে রাস্তা, সেতু, স্কুল, ছাত্রাবাস, স্টেডিয়াম, সরকারি কলেজ, পানীয় জল প্রকল্প, সেচের সুব্যবস্থা-সহ অজস্র প্রকল্পের কাজ হয়েছে। বাঁকুড়া ও পুরুলিয়াতেও নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্য বেড়েছে। তবে জঙ্গলমহলে ভারী শিল্প নেই। কুটির শিল্পে কর্মসংস্থানের তেমন বেশি সুযোগ নেই। এ ছাড়া স্বাস্থ্য পরিষেবার বাহ্যিক উন্নতি ঘটলেও কার্যত অনেক পরিষেবাই মিলছে না বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ঝাড়খণ্ড সীমানাবর্তী পুরুলিয়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পাহাড় জঙ্গলে ঘেরা প্রত্যন্ত আদিবাসী এলাকাগুলিতে ফের মাওবাদীরা যাতায়াত শুরু করেছে। বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি করে ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে তারা। এই পরিস্থিতিতে আদিবাসী এলাকাগুলিতে আরও নিবিড় উন্নয়নমুখী পরিকল্পনা রূপায়ন করতে চায় রাজ্য সরকার। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সাংসদ ও বিধায়করা উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এলাকাবাসীর উন্নয়ন সংক্রান্ত দাবি-দাওয়া সম্পর্কে রিপোর্ট পেশ করবেন। নিয়মিত এলাকায় ঘুরে বাসিন্দাদের অভাব-অভিযোগ সম্পর্কে খোঁজ নেওয়ার পাশাপাশি, এলাকাবাসীর সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য বিধায়কদের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
বিনপুরের বিধায়ক খগেন্দ্রনাথ হেমব্রম বলেন, “বিধায়ক হওয়ার পরে নিয়মিত এলাকায় ঘুরে দেখেছি বেলপাহাড়ি ব্লকের কিছু জায়গায় এখনও পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। এ ছাড়া এলাকাবাসীরা বনজসম্পদ ভিত্তিক কর্মসংস্থানের কথা বলেছেন। বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীকে জানাব।”
নয়াগ্রামের বিধায়ক দুলাল মুর্মু বলেন, “আদিবাসী হস্টেলগুলিতে আসন সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন। আদিবাসী পেনশন বাবদ উপভোক্তার বরাদ্দ টাকার পরিমাণ বাড়ানো, সাঁওতালি ভাষায় অলচিকি লিপিতে পঠনপাঠনের আরও স্কুল, পরিকাঠামো বাড়াতে মুখ্যমন্ত্রীর আবেদন করব।”
বাঁকুড়ার রানিবাঁধের বিধায়ক জ্যোৎস্না মাণ্ডিও বলেন, “আমার এলাকাতেও পানীয় জলের ভীষণ সঙ্কট। প্রত্যন্ত এলাকায় স্বাস্থ্য পরিষেবার আরও উন্নতি দরকার। এলাকায় আরও বেশি সংখ্যায় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র প্রয়োজন। এলাকাবাসীর দাবিগুলি মুখ্যমন্ত্রীর সামনে পেশ করব।”