মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে সাগরদ্বীপে যেতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সব ঠিকঠাক থাকলে ৩ এবং ৪ জানুয়ারি তাঁর এই গঙ্গাসাগর সফরের সম্ভাবনা রয়েছে। নতুন বছরের ১২-১৫ জানুয়ারি সাগরদ্বীপে আয়োজিত গঙ্গাসাগর মেলায় লাখ লাখ মানুষ পুণ্যস্নান করতে আসবেন। পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি, গঙ্গাসাগরে আগত গোটা দেশের মানুষের কাছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মেলা আয়োজনের ক্ষেত্রে আন্তরিকতার বিষয়টি তুলে ধরতে চাইছে রাজ্য সরকার। পুণ্যার্থীদের যাতে কোনও রকম সমস্যা না-হয় তা নিশ্চিত করতে প্রতি বছরই সরেজমিনে পরিদর্শনে যান মমতা। এ বারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না বলেই নবান্ন সূত্রে খবর। তার আগে ২৭ ডিসেম্বর আগামী বুধবার বেলা ১২টায় নবান্ন সভাঘরে গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং। রাজ্য সরকারের তরফে এই বৈঠকে হাজির থাকতে বলা হয়েছে রাজ্যের ১৫ জন প্রথম সারির মন্ত্রীকে। এছাড়াও ১৮টি দফতরের সচিবদের হাজির থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি গঙ্গাসাগর মেলার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলিকেও ওই বৈঠকে যোগদানের আমন্ত্রণ পাঠানো হয়েছে।
নবান্ন সূত্রে খবর, গঙ্গাসাগরে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কপিল মুনির আশ্রম পরিদর্শনে যেতে পারেন। মন্দির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করে মেলার আয়োজন নিয়ে কথাও বলতে পারেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর সাগরদ্বীপে পৌঁছোনোর আগেই গত বৃহস্পতিবার মুড়িগঙ্গায় ড্রেজিং থেকে শুরু করে গঙ্গাসাগর মেলা সংক্রান্ত সেচ দফতরের হাতে থাকা সমস্ত কাজের অগ্রগতি খতিয়ে দেখতে সাগরদ্বীপে পরিদর্শনে গিয়েছিলেন সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক। সেচ দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, লট-৮-এর অদূরে ২ এবং ৩ নম্বর পোলের মধ্যে নতুন করে একটি চর দেখা দিয়েছে। ড্রেজিংয়ের বাকি কাজ হয়ে গেলেও নতুন করে দেখতে পাওয়া এই চর কাটাই এখন প্রশাসনের কাছে বড় মাথাব্যাথার কারণ। এই চর কাটতে ড্রেজার নিয়ে আসা হচ্ছে ফরাক্কা থেকে। মুড়িগঙ্গার ড্রেজিং বাদ দিয়ে মেলার আয়োজনের প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ করে থাকে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। তাই মুখ্যমন্ত্রীর আগমনের খবরে তারাও মেলা আয়োজনের যাবতীয় প্রস্তুতির কাজে গতি বাড়িয়েছে। ইতিমধ্যে দফতরের মন্ত্রী পুলক রায় বেশ কয়েক বার গঙ্গাসাগর পরিদর্শন করেও এসেছেন। সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা যেহেতু সাগর বিধানসভার বিধায়ক। তাই এই মেলা আয়োজনের ক্ষেত্রে তাঁকে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করতে হচ্ছে। নবান্ন সূত্রে খবর, ২৭ তারিখের বৈঠকে মন্ত্রীদের মেলা সংক্রান্ত বিষয়ে বেশ কিছু নির্দেশ দিতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী।
জানুয়ারি মাসের ২২ তারিখে অযোধ্যায় রাম মন্দিরের উদ্বোধন। সেই উদ্বোধনের ঠিক এক সপ্তাহ আগে রাজ্যে গঙ্গাসাগর মেলার আসর বসছে। মকর সংক্রান্তিতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে গঙ্গাসাগরে পুণ্যস্নানের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই রাজ্য প্রশাসন এ বারের মেলা আয়োজনে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করছে বলে নবান্ন সূত্রে খবর। বাংলার রাজনীতির কারবারীরা অবশ্য মনে করছেন, রামমন্দির উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী নিজেদের হিন্দু ভোটব্যাঙ্কে শান দেওয়ার কাজ করবে বিজেপি। তাই গঙ্গাসাগর মেলার আয়োজনে যাতে কোনও রকম ত্রুটি না থেকে যায় সেই বিষয়ে সজাগ থাকছে রাজ্যের শাসক দল। সাগরমেলার আয়োজনের প্রত্যেকটি বিষয়ে নিজে নজর রাখছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা।