রাহুল গান্ধী। —ফাইল চিত্র।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘প্রস্তাব’ নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি দূর করতে রাহুল গান্ধীকে ফোন করে কথা বলতে হল নীতীশ কুমারের সঙ্গে।
মঙ্গলবার বিরোধী মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’-র বৈঠকে তৃণমূল নেত্রী আচমকাই বিরোধী শিবিরের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের নাম প্রস্তাব করেছিলেন। তাঁকে আবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল সমর্থন করেছিলেন। তা নিয়ে নীতীশ কুমার যে অখুশি, তার ইঙ্গিত মিলেছিল। কারণ তাঁর দল নীতীশকে ইন্ডিয়া-র মুখ বা বিরোধী শিবিরে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে ভাবছিল। অথচ তাঁর বদলে খড়্গের নাম এসে যাওয়ায় জেডিইউ-র খুশি হওয়ার কথা নয়। আজও নীতীশের জেডিইউ-র বিধায়ক গোপাল মণ্ডল কংগ্রেস সভাপতিকে অবজ্ঞা করে বলেছেন, “কে এই খড়্গে-ভড়্গে? কেউ খড়্গেকে চেনে না। মানুষ নীতীশকে চেনেন। নীতীশই প্রধানমন্ত্রী হবেন।”
কংগ্রেস সূত্রের খবর, এই ক্ষোভ মেটাতেই রাহুল বৃহস্পতিবার নিজে নীতীশকে ফোন করেন। খড়্গের নাম প্রস্তাব নিয়ে রাহুল কংগ্রেসের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। বার্তা দিয়েছেন, এর পিছনে কংগ্রেসের মস্তিষ্ক নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে থেকেই খড়্গের নাম প্রস্তাব করেছেন। কংগ্রেস কাউকে মুখ করে ভোটে যাওয়ার বদলে ‘ম্যায় নহি, হম’-এর নীতিতে বিশ্বাসী। বিরোধী মঞ্চ জিতলে প্রধানমন্ত্রীর নাম পরে ঠিক হবে। বিরোধী মঞ্চে নীতীশকে বড় ভূমিকা নিতে হবেও রাহুল জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার নীতীশের সঙ্গে কথা বলার পরে রাহুল আজ শরদ পওয়ারের সঙ্গেও বিরোধী ঐক্য, আসন সমঝোতা, কোন কোন বিষয় নিয়ে ‘ইন্ডিয়া’ প্রচারে যাবে, তা নিয়ে কথা বলেন। যন্তর মন্তরে ‘ইন্ডিয়া’-র প্রতিবাদ সভার পরে রাহুল শরদের গাড়িতে ওঠেন। পওয়ার-কন্যা রাহুলকে জায়গা ছেড়ে গাড়ির সামনের আসনে বসেন। পওয়ারের বাড়িতে কথাবার্তার পরে রাহুল বাড়ি ফেরেন। সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গে পওয়ার আগেই কথা বলেছিলেন। আজ যন্তর মন্তরের মঞ্চেও রাহুল-ইয়েচুরির দীর্ঘ কথা হয়েছে। সূত্রের খবর, আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি খুব শীঘ্র ‘ইন্ডিয়া’-র প্রচার কমিটির বৈঠক ডাকা হবে। তারই সলতে পাকানোর পর্ব চলছে।
নীতীশই বিরোধী জোট নিয়ে প্রথমে উদ্যোগী হন। জেডিইউ শিবিরের আশা ছিল, তাঁকে বিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক করা হবে। মঙ্গলবারের ‘ইন্ডিয়া’ বৈঠকের আগে পটনায় নীতীশকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তুলে ধরার দাবিতে পোস্টারও পড়েছিল। কিন্তু বৈঠকে মমতা খড়্গের নাম তোলায় নীতীশ স্বচ্ছন্দ বোধ করছিলেন না বলে অনেকের মত। বৈঠকের মধ্যেই ডিএমকে নেতারা তাঁর বক্তৃতার ইংরেজি অনুবাদ চাওয়ায় নীতীশ মেজাজ হারান। বৈঠকের পরে সাংবাদিক সম্মেলনেও নীতীশের দেখা মেলেনি। পরে জেডিইউ সাংসদ সুনীল কুমার পিন্টু বলেন, ‘ইন্ডিয়া’-র বৈঠকে চা-বিস্কুট খাওয়া ছাড়া আর কিছুই হয়নি। নীতীশ-শিবির যে এখনও ক্ষুব্ধ আজ জেডিইউ বিধায়কের খড়্গেকে নিয়ে মন্তব্যেও স্পষ্ট হয়েছে। তার উপরে নীতীশ আগামী সপ্তাহে দলের সাংগঠনিক বৈঠকের ডেকেছেন। সেটাও চিন্তায় রেখেছে কংগ্রেসকে।
সূত্রের খবর, বিহারে কংগ্রেস, জেডিইউ, আরজেডি এবং বামদলগুলির মধ্যে আসন সমঝোতা নিয়ে কথা হয়েছে রাহুল ও নীতীশের মধ্যে। বিহারে নীতীশের জোট সরকারের মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ নিয়েও আলোচনা হয়েছে। নীতীশ জানিয়েছেন, আরজেডি-র জন্য মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ আটকে হয়েছে। তিনি কংগ্রেসের আরও বিধায়ককে মন্ত্রিসভায় নিতে তৈরি।