সংখ্যালঘু দফতর নিজের হাতে রাখলেন মমতা। ফাইল চিত্র।
সংখ্যালঘু উন্নয়ন এবং মাদ্রাসা দফতরের দায়িত্ব নিজের হাতে রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এত দিন ওই দফতরের দায়িত্বে ছিলেন গোয়ালপোখরের বিধায়ক গোলাম রব্বানি। তাঁকে উদ্যান পালন দফতরের দায়িত্ব দেওয়া হল। গত ২৭ ডিসেম্বর সাগরদিঘির প্রাক্তন বিধায়ক সুব্রত সাহার মৃত্যুর পর এই দফতর মন্ত্রীবিহীন ছিল। প্রয়াত সুব্রতর দফতরের দায়িত্ব পেলেন রব্বানি। সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী হচ্ছেন মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের বিধায়ক তাজমুল হোসেন। তাজমুল বর্তমানে ক্ষুদ্র এবং কুটির শিল্প দফতরের প্রতিমন্ত্রী। এ বার তার সঙ্গে সংখ্যালঘু দফতরের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হল তাজমুলকে। রাজ্য প্রশাসন সূত্রে এই রদবদলের খবর জানা গিয়েছে। এই রদবদলের মধ্যে ‘অন্য’ রাজনৈতিক তাৎপর্য খুঁজে পাচ্ছেন কেউ কেউ।
সাগরদিঘির উপনির্বাচনে বাম-কংগ্রেস জোটের কাছে পরাজিত হওয়ার পরেই এই ফলাফল নিয়ে শাসক তৃণমূলের অন্দরে কাটাছেঁড়া শুরু হয়ে যায়। ভোটের ফলপ্রকাশের পর সংখ্যালঘু ভোট ত়ৃণমূলের দিক থেকে মুখ ফিরিয়েছে কি না, সেই প্রশ্নও উঠতে শুরু করে। সাগরদিঘিতে পরাজয়ের কারণ হিসাবে বাম-কংগ্রেস-বিজেপির ‘অনৈতিক জোট’কে দায়ী করলেও সংখ্যালঘু ভোট হারানোর কারণ জানতে সক্রিয় হন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। হারের কারণ অনুসন্ধানের পাশাপাশি গোটা বাংলার সংখ্যালঘু মনের খোঁজে কমিটি তৈরি করে দেন মমতা। ওই কমিটিতে রাখা হয় রাজ্যের চার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী, সাবিনা ইয়াসমিন, আখরুজ্জামান এবং গোলাম রব্বানি। রাখা হয় জঙ্গিপুরের বিধায়ক জাভেদ খানকেও। তবে জঙ্গিপুরের সাংসদ খলিলুর রহমানকে রাখা হয়নি ওই কমিটিতে। তাই নিয়ে একপ্রস্ত বিতর্কের সূত্রপাত হয়। সাগরদিঘির ফলাফল থেকে শিক্ষা নিয়ে দলের সংগঠনেও বদল আনে তৃণমূল। দলের সংখ্যালঘু সেলের দায়িত্ব থেকে হাজি নুরুল ইসলামকে সরিয়ে আনা হয় ইটাহারের বিধায়ক মোশারফ হোসেনকে। এই আবহে মুখ্যমন্ত্রীর সংখ্যালঘু দফতরকে নিজের হাতে রাখার সিদ্ধান্তকে ইঙ্গিতবাহী বলে মনে করা হচ্ছে।
সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। বছর ঘুরলেই দিল্লি দখলের লড়াই। তার আগে সংখ্যালঘু দফতরের মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতরের দেখভাল নিজেই করতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। তৃণমূল সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে। ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের পর সংখ্যালঘু ভোট মোটের উপর তৃণমূলের সঙ্গেই থেকেছে। কিন্তু সাগরদিঘির মতো সংখ্যালঘু প্রধান বিধানসভা কেন্দ্রে বড় ব্যবধানে পরাজয়ে অশনি সঙ্কেত দেখছেন শাসকদলের নেতারা। বিরোধী শিবির থেকে দাবি করা হচ্ছে, সংখ্যালঘুরা তৃণমূল শাসনে ‘অত্যাচারিত’। এই সঙ্কটমোচনে এ বার নিজেই উদ্যোগী হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের শেষে আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক জানান, রাজ্যে আরও একটি সংখ্যালঘু উন্নয়ন বোর্ড গঠন করা হচ্ছে। ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় এসে তৃণমূল সরকার একটি সংখ্যালঘু উন্নয়ন বোর্ড গঠন করেছিল। এ বার দ্বিতীয় সংখ্যালঘু বোর্ড গঠন করতে চলেছে রাজ্য।