রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
গত দু’বছরে কোভিড নিয়ে দেশজোড়া কড়াকড়ির মধ্যেও গঙ্গাসাগর মেলা হয়েছিল। এখন দেশে কোভিড সংক্রমণ অনেকটাই কম। তাই এ বার মেলায় আরও বেশি লোকসমাগম হবে, তা ধরে নিয়েই আগাম সতর্ক থাকতে চাইছে রাজ্য প্রশাসন। বুধবার নবান্ন সভাঘরে গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্ততি নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মেলায় ভিড় সামাল দিতে, আপৎকালীন ব্যবস্থার মোকাবিলায় স্থানীয় প্রশাসন কী পদক্ষেপ করছে, তা জানতে চান তিনি। পুণ্যার্থীদের সহায়তায় প্রশাসনের তরফে নেওয়া একগুচ্ছ পদক্ষেপের কথাও ঘোষণা করেছেন তিনি।
এ বার গঙ্গাসাগর মেলা শুরু হবে ৮ জানুয়ারি। চলবে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। পুণ্যস্নান করতে আসা মানুষের মেলায় আসতে যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, তার জন্য হাওড়া, শিয়ালদহ এবং নামখানা স্টেশন পর্যন্ত অতিরিক্ত ট্রেন চালানোর জন্য রেল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। সড়কপথে যাঁরা সাগরে আসবেন, তাঁদেরও যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, তার জন্য ২,২৫০টি সরকারি বাস চালানো হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তা ছাড়াও যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যে ৫০০টি বেসরকারি বাস চালানো হবে।
যাত্রীদের নির্বিঘ্নে সাগরদ্বীপে পৌঁছে দেওয়ার জন্য থাকবে ৪টি বার্জ, ৩২টি ভেসেল এবং ১০০টি লঞ্চ। মেলাপ্রাঙ্গণে যাতে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি না হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য মেগা কন্ট্রোল রুম খোলার কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মেলাপ্রাঙ্গণে নজরদারি চালানোর জন্য লাগানো হবে ১১৫০টি সিসিটিভি ক্যামেরা। কোনও পুণ্যার্থী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে, দ্রুত চিকিৎসাকেন্দ্রে পাঠানোর জন্য মোতায়েন থাকবে ৪টি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স। স্থানীয় হাসপাতালগুলিকেও শয্যা প্রস্তুত রাখার কথা বলা হয়েছে। যাত্রীরা যাতে কোনও অসুবিধায় না পড়েন, তার জন্য বিশেষ স্বেচ্ছাসেবক দল গড়েছে রাজ্য সরকার। এই বাহিনীর নাম রাখা হয়েছে সাগরবন্ধু। মেলামুখী সব বাসেই সাগরবন্ধুরা যাত্রীদের সাহায্য করার জন্য থাকবেন।
মুখ্যমন্ত্রীকে রাজ্যের এক মন্ত্রী বলেন ভিন্ রাজ্য থেকে আসা পুণ্যার্থীদের অনেকেই তাঁবুর ভিতর আগুন জ্বালিয়ে রান্না করেন। এখান থেকে অগ্নিকাণ্ড হতে পারে বলে আশঙ্কা করেন তিনি। এ ব্যাপারে পুলিশকে নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী। স্নান করার জন্য পুণ্যার্থীরা তাড়াহুড়ো করলে পদপিষ্ট হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন করতে বিভিন্ন ভাষায় ঘোষণা করার কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী বিএসএনএল-সহ অন্যান্য টেলি পরিষেবা দেওয়া কোম্পানিগুলিকে সংযোগ শক্তপোক্ত করার অনুরোধ জানান। বিএসএনএলের সংযোগ দুর্বল থাকার কারণে গত বার অনেক সমস্যা হয়েছিল বলে সভাতেই অভিযোগ তোলেন কেউ কেউ। এ বিষয়ে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
আপৎকালীন পরিস্থিতির মোকাবিলায় সেনাকে প্রস্তুত থাকার আবেদন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। উপকূলরক্ষী বাহিনীর তরফে বৈঠকে জানানো হয় আগামী ৭ জানুয়ারি থেকে তারা বাংলাদেশ সীমান্ত ধরে জলপথে তল্লাশি চালাবে। মেলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই তল্লাশি অভিযান চলবে।
এ বার কুম্ভমেলা হচ্ছে না। তাই গত দু’বছরের তুলনায় গঙ্গাসাগরে ভিড় অনেক বাড়বে বলেই মনে করছে রাজ্য প্রশাসন। ইতিমধ্যেই রাজ্যের সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক মেলাস্থলের ব্যবস্থাপনা খতিয়ে দেখেছেন। তা ছাড়াও অরূপ বিশ্বাস, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়-সহ রাজ্যের কয়েক জন মন্ত্রীকে মেলাস্থলের ব্যবস্থাপনা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মেলার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে তিনিও এক দিন গঙ্গাসাগরে যাবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে তিনি কবে যাবেন, তা জানাননি।