(বাঁ দিকে) আব্দুল করিম চৌধুরী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
বর্তমান বিধানসভার প্রবীণতম বিধায়ক তিনি। কিন্তু সেই তিনিই দলের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ক্ষোভ উগরে দিয়ে তৃণমূলের সব কর্মসূচি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন। তিনি উত্তরবঙ্গের ইসলামপুরের বিধায়ক আব্দুল করিম চৌধুরী। কিন্তু সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ সফরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে প্রথমে ফোন করে ও পরে সরকারি অনুষ্ঠানে নিজের পাশে বসিয়ে কথা বলতেই বরফ গলতে শুরু করেছিল। যে করিম ঘোষণা করেছিলেন আর বিধানসভা অধিবেশনে যোগ দেবেন না, সেই তিনিই বাজেট অধিবেশনের প্রথম দিন থেকেই বিধানসভায় হাজির। দীর্ঘ বিরতির পর বিধানসভায় এসে করিম বলেছেন, ‘‘আমার নেত্রী আমাকে দলের কাজে সক্রিয় হতে বলেছেন। তাঁকে আমি কথা দিয়েছি, দলের দেওয়া সব দায়িত্ব পালন করব। তা ছাড়া, মানুষের প্রতিও আমার দায়বদ্ধতা রয়েছে। যাঁরা আমাকে ভোট দিয়েছেন, তাঁদের জন্য আমাকে কাজ করতে হবে। তাই আবার বিধানসভায় এসে নিজের দায়িত্ব পালন করছি।’’ করিম আরও বলেন, ‘‘লোকসভা নির্বাচনে আমাদের ভাল ফল করতে হবে। সেই ভোট নিয়েও মমতার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি আমাকে যা যা করতে বলেছেন তা-ও আমরা করব।’’
গত বছর পঞ্চায়েত ভোটের আগে উত্তর দিনাজপুর জেলায় তৃণমূলের বেশ কয়েক জন কর্মীর মৃত্যু হয়েছিল। কথিত, দলের অন্তর্দ্বন্দ্বে তাঁদের মৃত্যু হয়েছিল। করিমের অভিযোগ ছিল জেলা তৃণমূলের সভাপতি কানহাইয়ালাল আগরওয়ালের বিরুদ্ধে। সে কথা তিনি মুখ্যমন্ত্রীকেও জানিয়েছিলেন। কিন্তু কোনও ‘ফল’ না হওয়ায় মান-অভিমানের পালা শুরু হয়। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ‘নবজোয়ার যাত্রা’ উত্তর দিনাজপুর গেলে বাড়িতে লাল কার্পেট বিছিয়ে তাঁর আগমনের অপেক্ষায় বসেছিলেন করিম। অভিষেক অবশ্য কোনও জায়গাতেই স্থানীয় তৃণমূলের নেতা, বিধায়ক বা সাংসদের বাড়ি যাননি।
তার ফলে করিমের ‘অভিমান’ আরও বেড়ে যায়। পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব তাঁর অনুগামীদের টিকিট দেননি, এই অভিযোগ তুলে দলের বিরুদ্ধে গিয়ে নির্দল প্রার্থী দাঁড় করিয়েছিলেন করিম। তাঁদের মধ্যে কয়েক জন জিতেওছিলেন। এর পরেই জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে কার্যত যুদ্ধ ঘোষণা করে দলের যাবতীয় কর্মসূচি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার কথা ঘোষণা করেন করিম। পাশাপাশিই জানিয়ে দেন, তিনি সরকারি কোনও অনুষ্ঠানে আর যোগ দেবেন না। এমনকি, বিধানসভার অধিবেশনেও হাজির হবেন না।
এর পরেই দলের ‘অস্বস্তি’ বাড়িয়ে একের পর এক দলের নেতার প্রকাশ্যেই সমালোচনা শুরু করেন ইসলামপুরের প্রবীণ বিধায়ক। সেখানে অভিষেক ও দলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষকেও আক্রমণ করেছিলেন তিনি। আরও বলেছিলেন, ‘‘প্রবীণদের ছাড়া বাংলা কেন, কোনও রাজ্য, দেশও চলবে না।’’ কিন্তু সেই করিম আর পুরনো কথা মনে করতে চান না। তিনি বলেন, ‘‘আমি ১৯৬৯ সাল থেকে বিধানসভার সদস্য। বর্তমানে দেশে এমন কোনও রাজনীতিক নেই, যিনি ১১ বার বিধায়ক হয়েছেন। মমতা আমাকে সেই সম্মান দিয়েছেন। তাই তাঁর নেতৃত্বেই লড়াই করব বলেই আমি সঙ্কল্পবদ্ধ হয়েছি।’’