গত বছর নভেম্বর মাস থেকে রাজ্যপাল আনন্দ বোসের ভুমিকায় সন্তুষ্টই ছিল রাজ্য সরকার। ফাইল চিত্র।
দিনহাটায় কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের ওপর হামলার ঘটনার পর রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে কড়া বিবৃতি দিয়েছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। বৃহস্পতিবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সেই সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, রাজ্যপালের বিবৃতি প্রসঙ্গে স্পষ্ট কোনও মন্তব্য না করে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। মমতা বলেন, ‘‘কাল সুপ্রিম কোর্টের একটি রায় বেরিয়েছে খুব ভাল। পঞ্জাব ও চেন্নাই নিয়ে। একটি রাজ্যের আদালতের নির্দেশ তো আর সেই রাজ্যে কেবলমাত্র কার্যকর এমনটা নয়। সারা দেশেই সেই নির্দেশ কার্যকর হয়। বিধানসভায় যে বিল পাশ হবে, তা রাজ্যপালকে স্বাক্ষর করতেই হবে। এটাই সাংবিধানিক রীতি।’’ এর পরেই তিনি আরও বলেন, ‘‘উনি ওঁর স্বাধীনতা মতো কথা বলতেই পারেন। আমি কোনও মন্তব্য করব না। আমি আমার মতামতটা বলতে পারি। পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা সবচেয়ে ভাল। কলকাতা হল সবচেয়ে নিরাপদ শহর, বাংলাও তাই।’’
গত বছর নভেম্বর মাস থেকে রাজ্যপাল আনন্দ বোসের ভুমিকায় সন্তুষ্টই ছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু পর পর রাজভবন দুটি কড়া বিবৃতি দেওয়ায় পরিস্থিতি বদলে যায়। তৃণমূল নেতা মদন মিত্র রাজ্যপালকে চাঁচাঁছোলা ভাষায় আক্রমণ করেন। সঙ্গে তৃণমূলের দলীয় মুখপত্রে রাজ্যপালকে বিজেপির ক্যাডার বলেও অভিহিত করা হয়। এমন আক্রমণের মুখে পড়েও মৌন থেকেছেন আনন্দ বোস। আবার মঙ্গলবার রাজভবনে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে সাক্ষাতের পর রাজ্যপালের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর যৌথ সাংবাদিক বৈঠক আবার পরিস্থিতি কিছুটা হলেও স্বাভাবিক করেছে। ওই দিন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বলেছিলেন, ‘‘রাজভবন-নবান্ন সমন্বয় করেই কাজ করবে।’’ রাজ্যপালও ব্রাত্যের সমন্বয়ের তত্ত্বেই সায় দিয়েছিলেন। আর বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীও রাজ্যপালের সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য না করে কৌশলে আনন্দ বোসকে তাঁর দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, বিধানসভার অধিবেশন ডাকা নিয়ে পঞ্জাবের ভগবন্ত মান সরকারের সঙ্গে রাজ্যপাল বানোয়ারিলাল পুরোহিতের মতভেদ শীর্ষ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল। বুধবার সেই মামলায় সুপ্রিম কোর্ট বলে, রাজ্যপালের কাছে তথ্য পেশ করতে মুখ্যমন্ত্রী দায়বদ্ধ। যদি তিনি তা না করেন, তা হলে বোঝা যাবে, মুখ্যমন্ত্রী সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করছেন না। অন্য দিকে, বিধানসভার অধিবেশন ডাকার একক ক্ষমতা রাজ্যপালের নেই। বিধানসভার অধিবেশন ডাকতে বানোয়ারিলাল পুরোহিত যে ভাবে আইনি পরামর্শ নিয়েছেন, তার কোনও যৌক্তিকতা নেই বলেই মনে করেছে শীর্ষ আদালত। অধিবেশন ডাকতে রাজ্যপাল বিশেষ ভাবে দায়বদ্ধ বলেই জানিয়ে দেন বিচারপতিরা। পঞ্জাব সংক্রান্ত মামলাটিতে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় মন্তব্য করেন, ‘‘সাংবিধানিক পদে থেকে কেউ যদি দায়িত্বপালনে ব্যর্থ হন, তার মানে এই নয় যে অন্য জনকেও নিজের দায়িত্ব পালন করতে হবে না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক মতভেদ থাকবেই। কিন্তু এর মধ্যে দিয়েই ঠিক ভাবে কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আর সেই নীতি মেনে না চললে সংবিধান সঙ্কটের মধ্যে পড়বে।’’ এর সঙ্গেই প্রধান বিচারপতি মনে করিয়ে দিয়েছেন, রাজ্যপালের পদটি কোনও রাজনৈতিক দলের পদ নয়।
রাজ্যপালের বিবৃতি প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য না করলেও, মুখ্যমন্ত্রী বোঝাতে চেয়েছেন রাজ্যপালকেও সাংবিধানিক রীতি মেনেই চলতে হবে। সঙ্গে বিধানসভায় রাজ্য সরকারের আনা যে কোনও বিলকে মান্যতা দিতে হবে রাজ্যপালকে, তা-ও বোঝাতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। নিজের মন্তব্যের শেষে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘সু্প্রিম কোর্ট ভাল রায় দিচ্ছে। আমরা কৃতজ্ঞ।’’