(বাঁ দিকে) মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (ডান দিকে)। —ফাইল ছবি।
কলকাতা ও নয়াদিল্লি: পরিস্থিতির বদল না ঘটলে আগামী সপ্তাহে তিন দিনের দিল্লি সফরে যেতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই সফরে নীতি আয়োগের বৈঠকে অংশগ্রহণ করার কথা তাঁর। লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরে এটাই হতে চলেছে মমতার প্রথম রাজধানী সফর। তবে নীতি আয়োগের বৈঠকের বাইরে আলাদা করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর সাক্ষাৎ হবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। আবার রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের ধারণা, লোকসভা ভোটে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের ভাল ফলের পরে কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গান্ধীর সঙ্গে দেখা হতে পারে তৃণমূল নেত্রীর।
সংসদে বাজেট পেশ হবে ২৩ জুলাই। আর ২৭ জুলাই হতে চলেছে নীতি আয়োগের গভর্নিং কাউন্সিলের বৈঠক। এখনও পর্যন্ত স্থির রয়েছে, ২৫ জুলাই সন্ধ্যায় মমতা পৌঁছতে পারেন দিল্লিতে। ২৬ তারিখ সংসদে যাবেন মমতা। সেখানে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের নেতাদের সঙ্গে দেখা করার কথা। তবে সেই বৈঠকগুলি চূড়ান্ত হয়নি। নীতি আয়োগের বৈঠক ২৭ তারিখ বিকেলে। মুখ্যমন্ত্রীর কলকাতা ফেরার কথা ২৮ তারিখ। প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন মমতা। কিন্তু ২০২৩ সালের বৈঠকে বেশির ভাগ বিরোধী-শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগ দেননি। সেই তালিকায় ছিলেন মমতাও।
রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, লোকসভা ভোট-পরবর্তী পরিস্থিতিতে মমতার এই সফর তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, এ বারের ভোটে লোকসভায় ২৯টি আসন পেয়েছে তৃণমূল। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের কারও কারও ধারণা, দিল্লিতে সনিয়া-মমতা সাক্ষাৎ হতে পারে। সেই সাক্ষাতে কংগ্রেসের তরফে রাহুল ও প্রিয়ঙ্কা গান্ধীর উপস্থিতিও থাকতে পারে। লোকসভায় ‘ইন্ডিয়া’র শক্তি বৃদ্ধির পরে কংগ্রেসের সঙ্গে সমন্বয় রেখেই চলছে তৃণমূল-সহ অন্যান্য বিরোধী দল। তবে কংগ্রেসের সঙ্গে কিছু ক্ষেত্রে মতান্তরও বাধছে। মমতা নিজে সনিয়ার সঙ্গে কথা বলে গেলে দু’দলের সমীকরণ অন্য মাত্রাপেতে পারে।
নীতি আয়োগের বৈঠক যখন রয়েছে, তার বাইরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর আর সাক্ষাৎ হবে কি না, তা নিয়ে এখনও সংশয় রয়েছে। যদিও প্রশাসনিক মহলের একাংশের মতে, নীতি আয়োগের বৈঠকের আগের দিন দু’জনের বৈঠক হতেও পারে। নবান্ন সূত্রের খবর, রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ মহলও দু’ভাগে প্রস্তুতি শুরু করেছে। প্রথমটি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের জন্য। দ্বিতীয়টি নীতি আয়োগকে মাথায় রেখে। গত বছর ২০ ডিসেম্বর বকেয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বকেয়া উদ্ধারে কেন্দ্র-রাজ্যের আধিকারিকদের নিয়ে সমন্বয় কমিটি তৈরি হয়েছিল। খুব সম্প্রতি প্রায় এক বছর ধরে আটকে থাকা জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের বরাদ্দ ছেড়েছে কেন্দ্র। কিন্তু আবাস যোজনা বা একশো দিনের কাজের প্রকল্পের বরাদ্দ আটকেই রয়েছে।
প্রশাসনিক বিশ্লেষকদের মতে, আবাস প্রকল্পের বরাদ্দ ছাড়ানোর ব্যাপারে বাড়তি তোড়জোড় রয়েছে রাজ্যের। কারণ, গত লোকসভা ভোটের প্রচারে প্রায় ১১ লক্ষ বাড়ি নিজেরাই তৈরি করে দেবে বলে জানিয়েছিল বাংলার শাসক পক্ষ। রাজ্যের বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতিতে ওই খাতে কম-বেশি ১৭ হাজার কোটি টাকা বার করা কার্যত অসম্ভব।
নীতি আয়োগের বৈঠকে থাকবেন কেন্দ্রীয় কৃষি ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানও। ফলে, বকেয়া আদায় এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার দিক থেকে কেন্দ্রের কাছে রাজ্য কী প্রত্যাশা করে, নীতি আয়োগের সেই বৈঠকে তা তুলে ধরতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী।