মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দ্রৌপদী মুর্মু, নরেন্দ্র মোদী
নীতি আয়োগের পরিচালন পরিষদের বৈঠকে অগস্টে যোগ দিতে চার দিনের দিল্লি সফরে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই সফরে নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে তাঁর সৌজন্য সাক্ষাতের সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও বৈঠকের দিনক্ষণ এখনও স্থির হয়নি।
আগামী ৭ অগস্ট নীতি আয়োগের বৈঠক রয়েছে। কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের টানাপড়েন, জিএসটি নিয়ে বিবাদের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে ওই বৈঠক করবেন। দেশের সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরই ওই বৈঠকে যোগ দেওয়ার কথা। সে কারণেই আগামী ৪ অগস্ট, বৃহস্পতিবার দুপুরের বিমানে দিল্লি যাওয়ার কথা মমতার। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বকেয়া অর্থ না মেটানোর অভিযোগ বহু দিন ধরেই তুলছে বাংলার শাসকদল তৃণমূল। প্রকাশ্যে এমন অভিযোগ করেছেন স্বয়ং মমতাই। নবান্ন সূত্রে খবর, নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দিয়ে সেই বিষয়গুলিই তুলে ধরতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী।
দিল্লি থেকে মমতার ফেরার কথা আগামী ৮ অগস্ট, সোমবার। তার মধ্যে নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি নবান্ন সূত্রে খবর, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করবেন মমতা। সেই সাক্ষাতের জন্য চাওয়া হবে সময়। চলতি মাসে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এনডিএ প্রার্থী দ্রৌপদীর বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন যশবন্ত সিন্হা। যাঁর প্রাক্তন দল তৃণমূল। ওই নির্বাচনে একজোট হয়ে যশবন্তকে প্রার্থী করেছিল বিরোধী শিবির। পরে দ্রৌপদী বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের প্রার্থী হওয়ার পর মমতা বলেছিলেন, ‘‘বিজেপি আগে জানালে সমর্থনের কথা ভেবে দেখা যেত।’’ মমতার এই মন্তব্যে বিরোধী শিবিরে টানাপড়েন তৈরি হয়। যদিও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বাংলা থেকেই সব চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছিলেন যশবন্ত। তার অব্যবহিত পরেই উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধীদের প্রার্থী মার্গারেট আলভাকে সমর্থনের বিষয়ে তৃণমূলের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে মমতার দিল্লি সফর ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। উল্লেখ্য, নীতি আয়োগের বৈঠকের আগের দিন অর্থাৎ ৬ তারিখ উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন। ওই দিনই ফলাফল প্রকাশ।
রাজধানীতে নীতি আয়োগের বৈঠকে মমতা যোগ দিলেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও তাঁর সাক্ষাৎ হবে। কিন্তু দ্রৌপদীর মতো প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও তাঁর একান্ত সাক্ষাৎ হবে কি না, সে ব্যাপারে এখনও কিছু জানা যায়নি। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, শিক্ষা ক্ষেত্রে ‘কেলেঙ্কারি’র অভিযোগে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতার এবং তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ এক মডেল-অভিনেত্রীর বাড়ি থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার হওয়া নিয়ে শোরগোলের আবহে মোদী এবং মমতা সাক্ষাৎ হলে তা ভিন্ন মাত্রা পাবে।
প্রসঙ্গত, অবিজেপি রাজ্যগুলিকে রাজনৈতিক ভাবে চাপে রাখতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে কাজে লাগানো হচ্ছে, এই অভিযোগ তুলে সংসদের ভিতরে ও বাইরে এবং রাজ্যেও মোদী সরকারের বিরুদ্ধে অতীতে একাধিক বার সরব হতে দেখা গিয়েছে তৃণমূল নেতৃত্বকে। পার্থ-কাণ্ডের পর চলতি বাদল অধিবেশনে যদিও ইডি-সিবিআই নিয়ে সংসদে বিশেষ ‘উচ্চবাচ্য’ করতে দেখা যায়নি তৃণমূল সাংসদদের। এই সব মিলিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই দিল্লির রাজনৈতিক মহলে ঔৎসুক্য তৈরি হয়েছে মোদী এবং মমতার সাক্ষাতের জল্পনা নিয়ে।