গঙ্গা ভাঙন নিয়ে সেচমন্ত্রীকে সতর্ক করে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগে সরব মুখ্যমন্ত্রী। — নিজস্ব চিত্র।
গঙ্গা ভাঙন নিয়ে মন্তব্যের জন্য মুখ্যমন্ত্রী সতর্ক করলেন সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিককে। বুধবার নবান্ন সভাঘরে মন্ত্রী ও দফতরের শীর্ষ আমলাদের নিয়ে এক পর্যালোচনা বৈঠকে বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে ১০৯টি প্রকল্পের উদ্বোধনের পর বৈঠকের শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্নের মুখে পড়েন সেচমন্ত্রী পার্থ। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি পার্থ ভৌমিকের একটা স্টেটমেন্ট দেখেছি যে, গঙ্গা ভাঙন আমরাই হাতে নিয়ে করব। এটার ব্যাপারে কোনও ক্লিয়ারেন্স তো আসেনি।’’ বৈঠকে হাজির সেচমন্ত্রী নিজের বক্তব্যের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাও দেন। জবাবে মমতা বলেন, ‘‘বললে লোকের আশা জাগে। তোমরা তো একটা বিবৃতি দিয়ে খালাস। আমি এমনটা করি না। আমার সিস্টেম হচ্ছে, আমরা কাছে যে টাকা অ্যাভেলেবেল, সেটা দিয়েই আমি করব। বাড়তি কথা বলব না কাগজের নিউজের জন্য।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘কেলেঘাই, কপালেশ্বরীর টাকাও ওরা দেয়নি। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান আজ ৩০ বছর ধরে পড়ে আছে। বার বার বলা হয়েছে। যারা ১০০ দিনের কাজের টাকা দেয় না, তারা ভগবানগোলা ও মালদহের ভাঙন রুখতে টাকা দেবে ভাবলে কী করে?’’
উল্লেখ্য, সোমবার মুর্শিদাবাদ জেলার শমসেরগঞ্জের গঙ্গা ভাঙন এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন সেচমন্ত্রী। সেখানেই সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে সেচমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, প্রয়োজনে গঙ্গা ভাঙন রুখতে নিজে থেকেই কাজ করবে রাজ্য সরকার। তাঁর সেই মন্তব্যের রেশ ধরেই তাঁকে সতর্ক করেন মমতা। গঙ্গা ভাঙনের প্রসঙ্গে তিনি নীতি আয়োগ থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় সরকারের সব জায়গায় বিষয়টি জানিয়েছেন বলেও মুখ্যমন্ত্রী জানান। সঙ্গে জুড়ে দেন কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনা প্রসঙ্গও।
মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগের সুরে বলেন, ‘‘ফরাক্কা ইন্দো-বাংলাদেশ যে জলচুক্তি হয়েছিল সেই চুক্তি অনুযায়ী আমরা যে ৭০০ কোটি টাকা পাব, তাই এখনও দেয়নি। সুতরাং, আমাকে যেটা মনে রাখতে হবে, গঙ্গা ভাঙন এ ভাবে তুমি রোজ আটকাতে পারবে না। গঙ্গা ভাঙন হতেই থাকবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘প্রকৃতি, বন, জঙ্গল, আকাশ, মাটি! এগুলো আমাদের হাতে নেই। গঙ্গা ভাঙনে একটা পাড় ভাঙছে, একটা পাড় হচ্ছে। এখানে অন্য কোনও সিস্টেম আনতে হবে।’’
শমসেরগঞ্জে গঙ্গা ভাঙনের কাছাকাছি থাকা মানুষজনদের জন্য একটি পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘শমসেরগঞ্জে যাঁরা নদী ভাঙনের কাছাকাছি এলাকায় থাকেন, যাঁদের বাড়ি আগামী ৫ বছরের মধ্যে ধসে যেতে পারে। এই পরিবারগুলোকে দেখে, একটু দূরে তাদের জমি দিতে হবে। তাদের যতটা জমি, ততটা হয়তো দেওয়া যাবে না। কিন্তু তাঁদের প্রাণে বাঁচাতে হবে। তাই তাদের সেখান থেকে সরিয়ে জমি দিলে তারা নিজেরাই ব্যবস্থা করে নিতে পারবে।’’ সরকারি জমি থেকেই তাদের জমি দেওয়ার কথাও বলেছেন মমতা। গঙ্গা ভাঙন ও সেখানকার বাসিন্দাদের সমস্যার সমাধান করতে একটি এক্সপার্ট কমিটি গড়ার কথাও বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। দফতরে যাঁদের কাজ কম রয়েছে, তাঁদের নিয়ে মুখ্যসচিবকে একটি টাস্ক ফোর্স গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন।
পাশাপাশি, গঙ্গা ভাঙন রুখতে বিশ্ব ব্যাঙ্ক ও এডিবির সঙ্গে আলোচনা করার কথাও বৈঠকে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে স্পষ্ট জানিয়েছে, গঙ্গা ভাঙন রুখতে হাজার হাজার কোটি টাকা তাঁর সরকারের হাতে এই মুহূর্তে নেই।