প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার মধ্যমগ্রামে। ছবি: সুদীপ ঘোষ
ভাঁড়ারে চাপ বাড়ছে। তাই স্থানীয় উন্নয়নে রাজ্যের পুরসভা ও সাংসদ-বিধায়কদেরই অর্থ সংস্থানের পরামর্শ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার তিনি বলেন, ‘‘কেউ আর কিছু চাইবেন না। চাইলে আমি দিতে পারব না। নিজেরা করে নিন।’’
কন্যাশ্রী, স্বাস্থ্যসাথীর মতো একাধিক প্রকল্প শুরু করেছিলেন মমতা। গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সম্প্রতি তা কার্যকর করা শুরু হয়েছে। রাজ্যবাসীকে সরাসরি আর্থিক সাহায্য দেওয়ার প্রকল্পগুলির ফলে সরকারের উপর আর্থিক চাপ যে বেড়েছে, এ দিন তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ আমার অগ্রাধিকার। ওটা চলবে। এই প্রকল্পে খরচ বছরে প্রায় ১৬ থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা। কেন্দ্রকে ( ঋণ) বাবদ দিতে হচ্ছে ৫০ হাজার কোটি।’’ তার পরই মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘আমি অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের ব্যবস্থা করব। টাকা দাও, টাকা দাও করবেন না। অত টাকা সরকারের নেই।’’
নির্বাচনের পরে উত্তরবঙ্গে একটি বৈঠক করলেও এ দিন উত্তর ২৪ পরগনা থেকে দক্ষিণবঙ্গের জেলাভিত্তিক পর্যালোচনা বৈঠক শুরু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মধ্যমগ্রামে এই বৈঠকে বারবার সরকারের আর্থিক সঙ্গতির বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন তিনি। তবে সরাসরি আর্থিক সুবিধার প্রকল্পগুলি চালাতেই যে খরচে এই নিয়ন্ত্রণ, তা-ও স্পষ্ট ছিল মুখ্যমন্ত্রীর কথায়। এ ব্যাপারে সরকারের মনোভাব স্পষ্ট করে তিনি বলেন, ‘‘সরাসরি আর্থিক সুবিধার চালু প্রকল্পগুলি চলবে। এগুলিতে কাউকে মাথা গলাতে দেব না।’’ পাশাপাশি সরকারের আয় বাড়াতে নিজের ভাবনার কথাও বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিছু অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাওয়া প্রকল্প চিহ্নিত করে সেগুলি বন্ধ করার কথাও বলেছেন তিনি। এই সূত্রেই বনগাঁ সীমান্ত দিয়ে আন্তর্জাতিক পণ্য পরিবহণ থেকে ট্রেজারির সরাসরি প্রাপ্য অর্থের প্রসঙ্গ তোলেন বনমন্ত্রী তথা হাবড়ার বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। বনগাঁ সীমান্ত দিয়ে কয়েক হাজার ট্রাক যাতায়াত করে বাংলাদেশে। তা থেকে বড় অঙ্কের অর্থ যায় পুরসভার কাছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘পুরসভা নয়, ওই টাকা সরাসরি রাজ্যের হাতে যাবে।’’ শুধু বনগাঁই নয়, এই রকম ক্ষেত্র চিহ্নিত করে রাজস্ব বাড়াতে মুখ্যসচিব-সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে বলেছেন মমতা।
সরকারি প্রকল্পের জন্য অর্থ সংস্থান করতে জনপ্রতিনিধিদের নির্দিষ্ট পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পুরসভা ও কর্পোরেশনগুলিকে নিজেদের এলাকার বকেয়া কাজের জন্য স্বনির্ভরতার কথা বলেছেন তিনি।বৈঠকে উপস্থিত বিধায়কেরা নিজেদের এলাকায় নতুন ব্রিজ বা রাস্তার কথা বললে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বিধায়কের এলাকা উন্নয়নের যে তহবিল রয়েছে, তা থেকে এই রকম কাজগুলো করুন।’’ বারাসতের বিধায়ক চিরঞ্জিত চক্রবর্তী ‘নন্দনে’র মতো একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের জন্য অর্থ বরাদ্দের কথা বললে মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে বলেন, ‘‘আপনার ও বারাসতের সাংসদের তহবিল থেকে এই কাজ করে নিন।’’
বসিরহাট মহকুমার মীনাখাঁর বিধায়ক ঊষা মণ্ডল রাস্তা মেরামতির কথা তুলতে সরকারের আর্থিক অবস্থা আরও স্পষ্ট করে দেন মুখ্যমন্ত্রী। উষা বলেন, ‘‘ইয়াসের পর থেকে এলাকার রাস্তা ভাঙা পড়ে আছে। সেগুলি মেরামতি করা দরকার। কিন্তু হচ্ছে না।’’ তখন কিছুটা হাল্কা সুরেই মমতা বলেন, ‘‘ওই অঞ্চলে তো ভেড়ি আছে। ওখানকার ভেড়ির মালিকদের সামর্থ্য রয়েছে। তাঁরা রাস্তা তৈরির কাজে এগিয়ে আসুন না।’’
এ দিনের বৈঠকে আমডাঙার বিধায়ক রফিকুর ইসলাম বলেন, ‘‘দিদি, ভয় করছে তবু বলছি। আমডাঙার হাসপাতালে এক জনও স্ত্রীরোগের চিকিৎসক নেই। ফলে সমস্যা হচ্ছে।’’ এ ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য দেরি করেননি। বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য সচিবের মত জানতে চান। এবং কিছুক্ষণের মধ্যে বৈঠকেই জানিয়ে দেন, আমডাঙা হাসপাতালে এক ঘণ্টার মধ্যেই এক জন চিকিৎসক যোগ দিচ্ছেন।’’ রাজারহাট- গোপালপুরের বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায় একটি হাসপাতাল ও আলোর কথা বললেও মুখ্যমন্ত্রী তা নিজের মতো করে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।