Mamata Banerjee

Partha Chatterjee Arrest: মুখ্যমন্ত্রীকেই দায় নিতে হবে, সরব বিরোধীরা

পুরস্কারের প্রদানের মঞ্চ থেকে এ ভাবে রাজনৈতিক আক্রমণ শানানোর কড়া সমালোচনা করেছে দুই বিরোধী দল বিজেপি ও সিপিএম।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২২ ০৫:৫৯
Share:

ফাইল চিত্র।

রাজ্যে শিক্ষা ক্ষেত্রে যে কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে এসেছে, তার দায় মুখ্যমন্ত্রীকেই নিতে হবে বলে পাল্টা সরব হল বিরোধীরা। তাদের দাবি, বিপদে পড়ে এখন তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব এবং তাঁর মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দায়ও ঝেড়ে ফেলতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

বঙ্গ-সম্মান পুরস্কার প্রদানের সরকারি মঞ্চ থেকে সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘যদি কেউ চোর হয়, ডাকাত হয়, তৃণমূল কংগ্রেস কাউকে রেয়াত করে না।’’ অন্যায় করলে নিজের দলের কাউকেও তিনি ছেড়ে দেন না বলে মন্তব্য করে বিরোধীদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, তাঁর গায়ে কালি দেওযার চেষ্টা করলে তাঁর হাতেও আলকাতরা আছে! পুরস্কারের প্রদানের মঞ্চ থেকে এ ভাবে রাজনৈতিক আক্রমণ শানানোর কড়া সমালোচনা করেছে দুই বিরোধী দল বিজেপি ও সিপিএম। পাশাপাশিই তাদের বক্তব্য, নিজের ‘ভাবমূর্তি’ রক্ষার জন্য বিরোধীদের আক্রমণ করলেও পার্থ বা অর্পিতা মুখোপাধ্যায়দের কৃতকর্মের দায় মুখ্যমন্ত্রীকেই নিতে হবে। দুর্নীতির প্রতিবাদে এবং অভিযুক্ত মন্ত্রীদের অপসারণের দাবিতে দু’দিন ধরেই পথে নেমেছে বামেরা। মেধা-তালিকার ভিত্তিতে শিক্ষক-প্রার্থীদের নিয়োগ এবং ‘দুর্নীতিগ্রস্ত মন্ত্রিসভা’র মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে কাল, বুধবার কলকাতাতেই তিনটি মিছিলের ডাক দিয়েছে বামফ্রন্ট।

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এ দিন বলেছেন, ‘‘সকলেই জানেন, উনি নিজের ভাবমূর্তি রক্ষা করার জন্য অনেক কিছু বলেন। তবে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দায়ভার তো ওঁকে নিতেই হবে। যে কোনও বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রথমেই যাঁদের কথা বলেন, তাঁরা বক্সীদা (তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী) ও পার্থদা। এখন কে কী করছে জানি না বললে চলবে না!’’ মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ইডি যাঁর বাড়ি থেকে টাকা উদ্ধার করেছে, সেই অর্পিতার সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই। তিনি একটি দুর্গাপুজো উদ্বোধনে গিয়েছিলেন, কোন অনুষ্ঠানে কে থাকবেন, তা তাঁর পক্ষে জানা সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। যার প্রেক্ষিতে বিরোধী দলনেতার পাল্টা বক্তব্য, ‘‘কোন অনুষ্ঠানে কে থাকবে, এটা জানা সম্ভব নয় ঠিকই। কিন্তু ‘অর্পিতাকে অনেক দিন ধরে চিনি’, ‘ওড়িয়া ভাল বলতে পারে’, এগুলোও তো বলতে শোনা গিয়েছে। অর্পিতা বেহালায় জোড়া ফুল নিয়ে প্রচার করবেন, মধ্যমগ্রামে রথীন ঘোষকে ভোট দিতে বলবেন, তার পরে বলা হবে ওকে চিনি না— এ সব শুনবে না কেউ!’’

Advertisement

বালুরঘাটে এ দিন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও বলেছেন, ‘‘পার্থবাবু তৃণমূল দলেরও যেমন মহাসচিব পদে রয়েছেন, তেমনই মন্ত্রিত্বেও তাঁকে রেখে দিতে হচ্ছে। ভয় একটাই, পার্থ যদি মুখ খোলেন, তা হলে তৃণমূল দলের প্রায় সবাইকেই ভুবনেশ্বরে গিয়ে থাকতে হবে!” শিক্ষক নিয়োগে অল্প কিছু ভুল-ভ্রান্তির যে কথা মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, তাকে বিঁধে রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘সরকারি চাকরি দেওয়ার নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া আছে। তার মধ্যে একটাও বিচ্যুতি হলে সেটা সরকারের ব্যর্থতা। দু’শোটা হলে অপরাধ! এ ক্ষেত্রে তো তার পরেও কয়েকটা শূন্য যোগ করতে হবে!’’ আর শুভেন্দুর কটাক্ষ, ‘‘আপনি (মুখ্যমন্ত্রী) একটা ‘মিথ্যাশ্রী’ ঘোষণা করুন। প্রথম আপনিই পাবেন। দরকার হলে বিধানসভায় সর্বদল প্রস্তাব আনুন, আমরা সমর্থন করব!’’

মুখ্যমন্ত্রী নিজেকে ‘আড়াল’ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন বলে দাবি করে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের বক্তব্য, ‘‘সবে তো শুরু! কোনও কেলেঙ্কারি বেরোলেই উনি আগে নিজেকে নিরীহ দেখানোর চেষ্টা করেন। সারদা বা নারদ-কাণ্ডেও তা-ই করেছিলেন। পার্থকে চিনি না, এটা শুধু বলেননি। কিন্তু তিনি তো মুখ্যমন্ত্রীর কিচেন ক্যাবিনেটের সদস্য। কে কী করছে জানতাম না, এটা বলে উনি দায় ঝেড়ে ফেলতে পারেন না।’’ সেলিমের অভিযোগ, ব্রিটিশ আমলে যেমন খাজনার কালেক্টর ছিল, তেমনই এখন পঞ্চায়েত ও পুরসভা থেকে একেবারে উপর তলা পর্যন্ত তৃণমূলের ‘কালেক্টর’রা টাকা তুলছে। একা পার্থবাবুর বিষয় নয়, শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে নতুন প্রজন্মের ক্ষতি করা হচ্ছে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকের মতে, এ সবের ‘মধ্যমণি’ মুখ্যমন্ত্রীই। মদন মিত্রদের বেলায় ‘আমরা সবাই চোর’ বলে রাস্তা নেমেছিলেন, রাজীব কুমারকে সিবিআই তলব করায় মুখ্যমন্ত্রী রাস্তায় ধর্না দিয়েছিলেন অথচ পার্থের বেলায় কিছুই হল না কেন, সেই প্রশ্নও তুলেছেন সেলিম। তাঁর মন্তব্য, ‘‘চুরি বিদ্যা মহাবিদ্যা যদি না পড়ো ধরা! এটা তৃণমূলের সকলকে মনে রাখতে হবে। ধরা পড়লে কিন্তু কেউ দেখবে না। ধরা পড়ার পরে মহাসচিব যখন ফোন করেছেন, কেউ ফোন তোলেনি।’’

প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেসের আব্দুল মান্নানেরও বক্তব্য, ‘‘উদ্বেগে ভুগে মুখ্যমন্ত্রী এখন দিশাহীন কথা বলছেন। যে অর্পিতার পরিচিতি সম্পর্কে নিজেই অনুষ্ঠানে বলে এসেছেন, এখন তাঁকে বলছেন চিনি না! আর যা হচ্ছে, সব দায় চাপাচ্ছেন বিরোধীদের ঘাড়ে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement