Sandeshkhali Incident

সন্দেশখালির ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে, সুশাসন দিন

মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। ছত্তীসগঢ়ের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী চিঠিতে আশাপ্রকাশ করেছেন, রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে মমতা দ্রুতই পদক্ষেপ করবেন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৫:৩৭
Share:

বাঁ দিক থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিষ্ণুদেও সাই — ফাইল চিত্র।

সন্দেশখালিতে ‘জনজাতি সম্প্রদায়ের মহিলাদের উপর অত্যাচার’ চলছে! আদিবাসীদের কাছ থেকে জমি ‘কেড়ে’ নেওয়া হয়েছে! এমন অভিযোগ করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিলেন ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণুদেও সাই। মঙ্গলবার ওই চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিজেপিশাসিত ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী চিঠিতে আশাপ্রকাশ করেছেন, রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে মমতা দ্রুতই পদক্ষেপ করবেন। শাহজাহান শেখদের বিরুদ্ধেও সক্রিয় হবে সরকার। এ নিয়ে সরব হয়েছেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ, সাংসদ সাকেত গোখলে এবং নেত্রী সুস্মিতা দেব। বিষ্ণুদেওকে কুণালের কটাক্ষ, ‘‘আপনি নিজের চরকায় তেল দিন!’’

Advertisement

ফেব্রুয়ারির শুরু থেকেই আবার উত্তপ্ত হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালি। তৃণমূল নেতা শাহজাহান, উত্তম সর্দার, শিবপ্রসাদ হাজরাদের গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন গ্রামবাসীদের একাংশ। সেখানে সামনের সারিতে দেখা গিয়েছে মহিলাদের। বিরোধী শিবিরের অভিযোগ, ওই মহিলাদের হেনস্থা করা হয়েছে। অভিযোগের আঙুল তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের দিকে। প্রথম থেকে এ নিয়ে সরব বিজেপি। এ বার ছত্তীসগঢ়ের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী এই বিষয়ে চিঠি দিলেন মমতাকে।

পশ্চিমবঙ্গে মহিলা এবং জনজাতি সম্প্রদায়ের উপর ‘অত্যাচার’ নিয়ে সরব চিঠিতে হয়েছেন বিষ্ণুদেও। তিনি মমতার উদ্দেশে লিখেছেন, ‘‘গত কয়েক দিন ধরে পশ্চিমবঙ্গের মা-বোনেদের সঙ্গে যে অন্যায়ের ঘটনা প্রকাশ্যে আসছে, তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। মনকে কষ্ট দেয়। আপনার রাজ্যে সন্দেশখালিতে ৫০-এরও বেশি জনজাতি সম্প্রদায়ের মহিলার উপর অত্যাচার, হাজার আদিবাসীর কাছ থেকে জমি কেড়ে নেওয়া, এমনকি, ১০০ দিনের কাজের টাকাও জোর করে ছিনিয়ে নেওয়ার মতো যে ঘটনা ঘটছে, তা-ও অত্যন্ত নিন্দনীয়।’’

Advertisement

জাতীয় তফসিলি জাতি কমিশন সন্দেশখালি পরিদর্শন করে একটি রিপোর্ট জমা দিয়েছে। রাষ্ট্রপতি শাসনের সুপারিশও করেছে তারা। বিষ্ণুদেওয়ের চিঠিতে তার উল্লেখ রয়েছে। তিনি চিঠিতে জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় তফসিলি কমিশন যে রিপোর্ট দিয়েছে, তা অত্যন্ত ‘ভয়ানক’। এর পরেই ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ থেকেই নারীর ক্ষমতায়নের আন্দোলন শুরু হয়েছিল। ইতিহাস তা মনে রেখেছে। স্বামী বিবেকানন্দ, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুভাষচন্দ্র বসু, শ্যামপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ভূমি এই পশ্চিমবঙ্গ। বাংলার সংস্কৃতি গোটা বিশ্ব জানে। আপনার রাজ্যে যে অত্যাচারের ঘটনা প্রকাশ্যে আসছে, তা সভ্য সমাজ সহ্য করতে পারে না।’’

বিষ্ণুদেও চিঠিতে অভিযোগ করেছেন, ‘‘শুধু তুষ্টিকরণ, ভোটের রাজনীতির কারণে এ ভাবে রাজ্যে আদিবাসীদের জীবন সঙ্কটের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। ওঁদের সম্মান, জীবন নিয়ে যে খেলা হচ্ছে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়।’’ এর পরেই তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে এ নিয়ে পদক্ষেপ করার আর্জি জানিয়েছেন। শাহজাহানদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার কথাও বলা হয়েছে চিঠিতে। প্রসঙ্গত, গত ৫ জানুয়ারি সন্দেশখালিতে শাহজাহানের বাড়িতে হানা দেয় ইডি। কেন্দ্রীয় তদন্তাকারী সংস্থার আধিকারিকদের মারধরের অভিযোগ উঠেছিল। তার পর থেকেই নিখোঁজ তৃণমূল নেতা।

এ নিয়ে মুখ খুলেছেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল। তিনি ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘‘আপনি নিজের চরকায় তেল দিন! সন্দেশখালির বিষয়ে কী জানেন? মানুষ ভাল রয়েছেন, সুখে রয়েছেন।’’ কুণাল জানিয়েছেন, কোনও কোনও ব্যক্তি অন্যায় কাজ করেছেন। সরকারের বিরুদ্ধে কোনও ক্ষোভ নেই সাধারণ মানুষের। তিনি এ-ও বলেন, ‘‘সংবেদনশীল সরকার পদক্ষেপ করছে। জমি ফেরত দিচ্ছে। এটা বাম জমানায় ভাবা যেত না। মানুষ ন্যায়বিচার পাচ্ছেন। সন্দেশখালি শান্ত।’’

এর পর রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর প্রসঙ্গ তোলেন কুণাল। তাঁর কথায়, ‘‘আপনাদের (ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী) দলের নেতা শুভেন্দু আদিবাসী কন্যা বিরবাহা হাঁসদাকে ‘জুতোর নীচে থাকে’ বলেন। শুভেন্দুর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার কথা বলুন। দল থেকে তাড়ানোর কথা বলুন।’’ কুণাল এ-ও জানিয়েছেন, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত, অসমে দলিত ও মহিলারা নির্যাতিত। দিল্লিতে কৃষকদের উপর দমন-পীড়ন চলছে। বিষ্ণুদেওকে কুণালের পরামর্শ, ‘‘শুভেন্দুর বিরুদ্ধে পদক্ষেপের পরেই এই চিঠি লেখার নাটক করুন।’’

বিষ্ণুদেওয়ের উদ্দেশে তৃণমূল সাংসদ সাকেত বলেন, ‘‘লোকজন এখনও জানেন না, ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী কে! তিনি নিজেই নিজের কাজ বোঝার চেষ্টা করছেন।’’ ছত্তীসগঢ়ে জনজাতি মহিলা, নাবালিকার গণধর্ষণের চারটি উদাহরণও তুলে ধরেছেন সাকেত। অন্য দিকে সুস্মিতা বলেন, ‘‘জনজাতি সম্প্রদায়ের এক জন মুখ্যমন্ত্রী হয়ে আপনার লজ্জিত হওয়া উচিত যে, নিজের রাজ্যে জনজাতি মহিলা, বিশেষত নাবালিকারা গণধর্ষিত। আর আপনার এত স্পর্ধা যে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দেন!’’

সন্দেশখালিতে এর আগে দু’বার পরিদর্শনে এসেছে জাতীয় মহিলা কমিশন। দ্বিতীয় বার পরিদর্শনকারী দলে ছিলেন চেয়ারপার্সন রেখা শর্মা। তিনি অভিযোগ করেছিলেন, সন্দেশখালিতে নিগ্রহের ঘটনা ঘটেছে। বিজেপি নেতৃত্বও সেই অভিযোগ তুলেছে। যদিও রাজ্য মহিলা কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, তাদের সদস্যেরা যখন সন্দেশখালিতে গিয়েছিলেন, তখন সেখানে কোনও ধর্ষিতার দেখা পাননি।

আগামী ৬ মার্চ উত্তর ২৪ পরগনারই বারাসতে সভা করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে উপস্থিত থাকতে পারেন সন্দেশখালির ‘নির্যাতিতা’-রা। সেই আবহে সন্দেশখালি নিয়ে মমতাকে চিঠি ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রীর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement