প্রতীকী ছবি।
গাড়িতে যাচ্ছিলেন আদালতে। তৃণমূল নেতা কুরবান শা খুনের মামলার শুনানিতে হাজিরা দিতে যাওয়ার পথে সেই সাক্ষীকেই জাতীয় সড়ক থেকে চালক-সহ অপহরণের অভিযোগ উঠল মামলায় মূল অভিযুক্ত বিজেপি নেতা আনিসুর রহমানের অনুগামীদের বিরুদ্ধে। ঘণ্টা সাতেক তল্লাশির পরে বিকেলে খোঁজ মিলল দুই অপহৃতের। ততক্ষণে এ দিনের শুনানি শেষ।
কুরবান হত্যা মামলার অন্যতম সাক্ষী তাঁর আপ্ত সহায়ক শেখ ইমরান আলি। মামলায় কাজকর্ম তিনিই দেখভাল করেন। শুক্রবার তমলুক জেলা আদালতে শুনানি ছিল। সকাল পৌনে ৯টা নাগাদ মামলার নথি নিয়ে পাঁশকুড়ার মাইশোরা থেকে কুরবানের দাদা আফজল শা-র গাড়িতে তিনি তমলুক রওনা দেন। সঙ্গে ছিলেন আফজলের গাড়ির চালক কমল মণ্ডল। অভিযোগ, পঞ্চমদুর্গা এলাকায় সামনে ও পিছনে দু’টি বাইকে চারজন ইমরানদের গাড়ি ধাওয়া করে। ইমরানের দাবি, চারজনই আনিসুর অনুগামী। জানাবাড় এলাকায় ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে ওঠার মুখে ইমরানদের গাড়ির পথ আটকায় আরও জনা দশেক লোক। তারা কমলকে মারধর করে এবং চারজন ইমরানদের গাড়িতে উঠে ওই গাড়িতেই তাঁদের নিয়ে মেচগ্রাম রওনা দেয়।
ইমরানের জানান, মেচগ্রাম মোড়ের কিছুটা আগে হোটেলে নিয়ে গিয়ে তাঁর থেকে কুরবান হত্যা মামলার নথি এবং ফোন কেড়ে নেয় দুষ্কৃতীরা। পরে তাঁকে ও কমলকে অন্য একটি গাড়িতে ডেবরার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। ইমরানের কথায়, ‘‘আমাদের বলা হয়, আনিসুর এ দিন জামিন পাওয়ার পরে ছেড়ে দেওয়া হবে। আমি বা আফজলদা ভবিষ্যতে আদালতে গেলে আমাদের খুন করা হবে বলেও ওরা হুমকি দিয়েছে।’’
ততক্ষণে তল্লাশিতে নেমেছে পুলিশ। কুরবান হত্যা মামলার তদন্তকারী অফিসার অজয় মিশ্রকে তদন্তের জন্য নিয়ে আসা হয়। তমলুকের এসডিপিও একটি দল নিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরে তল্লাশিতে যান। তমলুকের সার্কেল ইনস্পেক্টর, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার— প্রত্যেকেই এক-একটি এলাকায় খোঁজ শুরু করেন।
পুলিশ সূত্রের খবর, ডেবরা আন্ডারপাস থেকে দুষ্কৃতীরা গাড়ি নিয়ে চলে যায় হাওড়ার বাগনানে। সেখান থেকে ফের আসে মেচগ্রামে। তারপর কখনও ঘাটাল, কখনও দাসপুর ঘুরে আবার মেচগ্রাম। তখন বিকেল গড়িয়েছে। আদালতেও শুনানি পর্ব মিটেছে। তবে বিচারক এ দিন জেলবন্দি আনিসুরের জামিন খারিজ করেছেন। শেষে দুষ্কৃতীরা পাঁশকুড়ার পীতপুরে পুলিশকে দেখে ইমরানদের রেখে পালায় বলে দাবি।
পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুনীল যাদব বলেন, ‘‘অপহৃতদের ঘাটাল-পাঁশকুড়া রাজ্য সড়কের পাশ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ ধৃত শেখ হাবিবুর রহমান আনিসুরেরই অনুগামী। অনুমান, পুলিশের নজর এড়াতে দূরে না পালিয়ে অপহরণস্থলের আশেপাশেই দিনভর গাড়িতে ঘুরেছে দুষ্কৃতীরা। ঘটনায় লিখিত অভিযোগ করেছেন আফজল। তিনি বলেন, ‘‘আমি আগেই এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলাম।’’ আফজলের গাড়ি ছাড়াও আরেকটি যে গাড়ি দুষ্কৃতীরা ব্যবহার করেছিল, সেটিও উদ্ধার করেছে পুলিশ।