অভিযুক্ত তৃণমূল কর্মী রাজীব বসু রায়। নিজস্ব চিত্র।
তোলাবাজির ৩৫ লক্ষ টাকা না-দেওয়ায় হুগলির দাদপুরে একই সংস্থা নির্মিত দু’টি প্রকল্পের দুই কর্মী এবং এক ইঞ্জিনিয়ারকে মারধর করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল শুক্রবার সকালে। সংস্থার মালিক, কলকাতার শিল্পপতি মহেশ আগরওয়াল মুখ্যমন্ত্রী, শিল্পমন্ত্রী, জেলা (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার এবং শাসক দলের নেতাদের কাছে এই মর্মে লিখিত অভিযোগ জানিয়ে প্রতিকার চেয়েছিলেন। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অবশ্য পুলিশ দাদপুরেই দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে লাগোয়া একটি ডেরা থেকে ওই তিন জনকে উদ্ধার করে। তবে, অভিযুক্তদের কাউকে ধরতে পারেনি।
ওই শিল্পপতির অভিযোগ, শাসক দলের স্থানীয় বিধায়কের ঘনিষ্ঠ দাবি করে জনৈক রাজীব বসু রায় নামে এক ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরেই হুমকি দিচ্ছিল। সেই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। শিল্পপতি বলেন, ‘‘একটি প্রকল্পকে দাঁড় করাতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। কিন্তু এই ধরনের ঝামেলা হলে ভুল বার্তা যায়। সেই কারণেই আমি বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী, শিল্পমন্ত্রী এবং শাসক দলের নেতাদের জানিয়েছি।’’ শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ সব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্যে যে শিল্পায়নের চেষ্টা হচ্ছে, তাতে জল ঢেলে দেওয়ার চেষ্টা। এ সব বরদাস্ত করব না। কঠোর হাতে দমন করব। পুলিশ, প্রশাসনকে বলছি এদের ধরে দৃষ্টান্তমূলক কঠোর শাস্তি দিতে। যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা আর কেউ ঘটাতে না সাহস পায়।’’ পুলিশ কড়া পদক্ষেপ করবে বলে জানিয়েছেন জেলা (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার অমনদীপ।
ওই শিল্পপতির অভিযোগ, দুর্গাপুজোর আগে তাঁর কাছে ৫০ হাজার টি-শার্ট চায় রাজীব। যার আনুমানিক দাম ৩৫ লক্ষ টাকা। তিনি টি-শার্ট বা টাকা দিতে আপত্তি জানান। মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, গত ২৮ অক্টোবর রাজীব তাঁদের প্রকল্প এলাকায় গিয়ে হুমকি দিয়ে আসে, ওই টাকা না দিলে ফল ভুগতে হবে। এ দিন সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ ঝাড়খণ্ডের নম্বরের (জেএইচ বিএস ৩৮৬৬) একটি বড় গাড়িতে দলবল নিয়ে সে প্রকল্প এলাকায় চড়াও হয়। কর্মরত দুই কর্মী ও এক ইঞ্জিনিয়ারকে লাঠি-বাঁশ দিয়ে বেধড়ক মারধর করে তুলে নিয়ে যায়। পরে বার্তা পাঠানো হয়, দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে লাগোয়া একটি হোটেলের কাছে তাদের ডেরায় টাকা পৌঁছে দিয়ে ওই সব কর্মীদের ছাড়িয়ে আনতে হবে।
এর পরেই শিল্পপতি পুলিশ প্রশাসনকে সব জানান। স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক অসীমা পাত্র বলেন, ‘‘শিল্পের কাজে কোনও বাধা মানব না। ওসি আমাকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। আমি তাঁকে বলি, ওই প্রকল্পের সাইটে কাজ চলবে। সমস্যা হলে জানাতে। রাজীবকে চিনি। তাতে কী!’’ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আগেও নানা অভিযোগ উঠেছে বলে দাবি করেছেন হুগলির তৃণমূল নেতা দিলীপ যাদব। অভিযোগের ব্যাপারে রাজীবের প্রতিক্রিয়া মেলেনি। এ দিন দুপুরে তাকে ফোন করা হলে অন্য এক জন ধরে দাবি করেন, ‘‘রাজীববাবু ব্যস্ত। ফোন ধরতে পারছেন না।’’ এর পরেই ফোন বন্ধ হয়ে যায়। হোয়াটসঅ্যাপের বার্তাও ফোনে ঢোকেনি।