ফাইল চিত্র।
শুভেন্দু অধিকারীর এক সময়ের দেওয়া তথ্য ব্যবহার করেই তাঁর বক্তব্য খণ্ডন করলেন অর্থ দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।
বাজেট নিয়ে বিধানসভায় দু’দিনের আলোচনার শেষে মঙ্গলবার জবাবি বক্তৃতা করেন চন্দ্রিমা। যার নির্যাস— কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের প্রাপ্য বকেয়া মেটালে রাজ্য উন্নয়নের কাজ নিশ্চিন্তে করতে পারবে। রাজ্যের যারা বিরোধী দল, সেই বিজেপিই কেন্দ্রের শাসক দল। সুতরাং, তাদের বিধায়কদেরও কেন্দ্রের কাছে এ ব্যাপারে দাবি জানানো উচিত। এই বক্তব্য পেশ করতে গিয়েই চন্দ্রিমা অধুনা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুকে মনে করান, তৃণমূল সরকারের মন্ত্রী থাকাকালীন তিনি বলেছিলেন, বিভিন্ন প্রকল্পে কেন্দ্র আগে ৯০ শতাংশ টাকা দিত। রাজ্য দিত বাকি ১০ শতাংশ। পরে কেন্দ্রের ভাগ কমে ৭৫ শতাংশ এবং রাজ্যের ভাগ বেড়ে ২৫ শতাংশ হয়। তার পরে কেন্দ্র এবং রাজ্য— দু’পক্ষই ৫০ শতাংশ করে টাকা দেবে বলে ঠিক হয়। কিন্তু কেন্দ্রের কাছ থেকে সেই ৫০ শতাংশ টাকাও পাওয়া যায় না। এই প্রেক্ষিতেই বিরোধীদের উদ্দেশে চন্দ্রিমার মন্তব্য, “৯০ হাজার কোটি টাকার উপর কেন্দ্রের কাছ থেকে আমাদের প্রাপ্য। সেই টাকা ওরা দিচ্ছে না। কেন্দ্রকে বাংলার কথা বলুন।”
কেন্দ্র কোন প্রকল্পে বরাদ্দ কমিয়ে কত করেছে, তারও খতিয়ান এ দিন বিধানসভায় পেশ করেন চন্দ্রিমা। বিধানসভার ভিতরে এবং বাইরে বিজেপি নিয়মিত অভিযোগ করে, কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্পের নাম বদলে অন্যায় ভাবে কৃতিত্ব নেয় রাজ্য। চন্দ্রিমা এ দিন সেই প্রসঙ্গে জানান, রাজ্য যে হেতু প্রকল্পের ৫০ শতাংশ অর্থ বহন করছে, সুতরাং নাম দিতে কোনও অসুবিধা নেই। তাঁর কথায়, “প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার নাম কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী আবাস যোজনা রাখা হয়নি!” অন্য দিকে, শুভেন্দু এ দিন বাজেট নিয়ে বক্তৃতায় ঋণ প্রসঙ্গ তুলে রাজ্যকে খোঁচা দিয়েছেন। তিনি বলেন, “কেন্দ্র যদি বাজার থেকে ঋণ নেওয়ার সীমা না বাড়াত, তা হলে রাজ্য সরকার জানুয়ারি মাসে সরকারি কর্মীদের বেতন দিতে পারত না।” তাঁর আরও কটাক্ষ, “মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্যে বলেছেন, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, স্বাস্থ্যসাথী এই সব প্রকল্প চালানোর পরে রাজ্যের হাতে আর টাকা থাকছে না। সুতরাং, সেতু, রাস্তা, হাসপাতাল— এ সব চাওয়া যাবে না। মুখ্যমন্ত্রীর এই সত্য স্বীকার করার সাহসকে কুর্নিশ জানাই।”
লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে ৫০০০ টাকা দেওয়া, অস্থায়ী শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন ১৮ হাজার টাকা করা, ছ’মাসের মধ্যে শূন্য পদ পূরণ-সহ এক গুচ্ছ দাবিও তোলেন শুভেন্দু। চন্দ্রিমা বক্তৃতায় বলেন, “যদি কেন্দ্রের কাছ থেকে বকেয়া টাকা আনতে পারেন, যা যা বলছেন, সব কাজই রাজ্য সরকার করতে পারবে। রাজ্য সরকার উন্নয়নের কাজ করতে বদ্ধপরিকর।” তাৎপর্যপূর্ণ হল, তখন শুভেন্দুকে নিজের আসনে বসেই বলতে শোনা যায়, “দেব না টাকা।”
চন্দ্রিমা এ দিন বাজেট নিয়ে জবাবি বক্তৃতায় ইপিএফে সুদ কমানো প্রসঙ্গে কেন্দ্রকে বিঁধেছেন। তিনি বলেন, “যে-ই বিজেপি চার রাজ্যের ভোটে জিতল, অমনি মানুষকে উপহার দিল ইপিএফে সুদ কমানো। বিজেপি বিধায়করা তা নিয়ে কিছু বলছেন না কেন?” কেন্দ্রকে চন্দ্রিমার আরও খোঁচা, “ওদের কাছে কৃষি হল কৃষক মারো আর শিল্প হল, ধনকুবেরদের পকেট ভরো।”শুভেন্দু এ দিন বাজেট নিয়ে ছাঁটাই প্রস্তাব আনতে চান। কিন্তু স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় তা খারিজ করে দেন। পরে বাইরে শুভেন্দু বলেন, “শাসক পক্ষ ভোটাভুটি এড়াতে চেয়েছে বলেই আমাদের ছাঁটাই প্রস্তাব খারিজ করা হয়েছে।”