সোমবার সকালে নবান্নে পৌঁছলেন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়।
শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। সোমবার সকাল ১০টায় তাঁর নয়াদিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কর্মিবর্গ দফতরে পৌঁছনর কথা ছিল। কিন্তু তিনি দিল্লি যাননি। বদলে গিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনিক সদর দফতর নবান্নে। তার পরেই তাঁ বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে। এই পদক্ষেপের পর আরও তীব্র হল কেন্দ্র-রাজ্য সঙ্ঘাত। আরও স্পষ্ট করে বললে মোদী-মমতা সঙ্ঘাত। কারণ, আলাপন যে দফতরের আইএএস, সেই কর্মিবর্গ দফতর স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অধীন।
সোমবার আলাপন যে দিল্লিতে যাচ্ছেন না, তা সকালেই দীর্ঘ চিঠি লিখে প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি, কেন্দ্রের আলাপনকে বদলির নির্দেশিকা প্রত্যাহার করে নেওয়ার আর্জিও জানান তিনি। কিন্তু সেই আর্জি যে কেন্দ্র মানছে, তা স্পষ্ট হয়ে যায় কিছু ক্ষণের মধ্যেই। যখন কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়, আলাপনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি মুখ্যসচিব পদে আলাপনের কাজের মেয়াদ তিন মাস বাড়াতে বলে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল নবান্ন। রাজ্যের সেই প্রস্তাবে সিলমোহর দিয়েছিল দিল্লিও। দিল্লির পরবর্তী নির্দেশে আলাপনের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রথম নির্দেশটি রদ হল কি না, তা কেন্দ্রের তরফে স্পষ্ট করা হবে। প্রসঙ্গত, মুখ্যসচিব হিসেবে তাঁর কার্যকালের মেয়াদ না বাড়লে সোমবারই আলাপনবাবুর অবসর নেওয়ার কথা ছিল।
কলাইকুন্ডায় প্রধানমন্ত্রীর পর্যালোচনা বৈঠকের সময় মুখ্যসচিব আলাপনের ‘আচরণ’-এর কারণেই তাঁকে দিল্লিতে বদলির সিদ্ধান্ত বলে অসমর্থিক সূত্রের খবর। কারণ, আলাপনকে বদলির কোনও সরকারি কারণ জানানো হয়নি। কেন্দ্রীয় সরকার সূত্রের খবর, আলাপন ওইদিন প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে না থেকে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে চলে গিয়ে ‘প্রোটোকল’ ভেঙেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। রাজ্যে ইয়াসের জেরে ক্ষয়ক্ষতি পরিদর্শনে এসে গত শুক্রবার কলাইকুন্ডা বিমানবন্দরে পর্যালোচনা বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। সেই বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা কথা ছিল মুখ্যমন্ত্রী এবং আলাপনের। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত রিপোর্ট পেশ করলেও দু’জনই দিঘার প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দিতে চলে আসেন। ওই ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আলাপনকে দিল্লিতে বদলির চিঠি পাঠায় কেন্দ্র। অর্থাৎ, কলাইকুন্ডার বৈঠকে না থাকাটাই এই বদলির সম্ভাব্য কারণ।
প্রোটোকল সম্পর্কে ওয়াকিবহালরা জানাচ্ছেন, প্রধানমন্ত্রী রাজ্যে এলে সেখানে রাজ্যপুলিশের ডিজিকে পুরোদস্তুর উর্দি পরিহিত অবস্থায় হাজির থাকতে হয়। তেমনই মুখ্যসচিবকেও থাকতে হয় সরকারি পোশাক ‘বন্ধ-গলা’ পরিহিত অবস্থায়। প্রধানমন্ত্রী রাজ্য ছাড়া পর্যন্ত তাঁদের সেখানে থাকতে হয়। অন্তত প্রোটোকল তেমনই বলে। কিন্তু আলাপন সেদিন ওই পোশাকে ছিলেন না। যা থেকে মনে করা হচ্ছে, তিনি শেষপর্যন্ত মোদীর বৈঠকে থাকতেন না। সেদিন সকাল থেকে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেই ইয়াস-দুর্গত এলাকা খতিয়ে দেখছিলেন। ফলে যৌক্তিক ভাবেই আশা করা যা, তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সফর শেষ হওয়া পর্যন্ত তাঁর সঙ্গেই থাকবেন রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ আমলা হিসেবে। অথবা, মুখ্যমন্ত্রীও চাইবেন তিনি সঙ্গে থাকুন।
তবে এরই পাশাপাশি আলাপনের পক্ষেও অভিমত উঠে আসছে। যা তাঁর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগকে খানিকটা হলেও চ্যালেঞ্জ করতে পারে। প্রোটোকলের সঙ্গে জড়িতরা সেই বিষয়টি বলতে শুরু করেছেন। তাঁদের মতে, প্রধানমন্ত্রীর বিমান অবতরণ করেছিল কলাইকুন্ডায়। যেটি আদতে বায়ুসেনার একটি বিমানঘাঁটি। সাধারণ কোনও বিমানবন্দর নয়। বলা হচ্ছে, সেখানে এই ধরনের প্রোটোকল খাটে না। আপৎকালীন কোনও পরিস্থিতিতেই প্রধানমন্ত্রী বায়ুসেনার বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করেন। যা সাধারণ প্রশাসনের পরিসরের অন্তর্ভূক্ত নয়। সে কারণেই সেখানে সাধারণ প্রশাসনিক প্রোটোকল খাটে না। তা ছাড়া, আলাপনকে বদলি করার আগে রাজ্যের অনুমতিও প্রয়োজন ছিল। বা রাজ্যের সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজনীয়তা ছিল। তা-ও করা হয়নি।
এখন দেখার, আলাপনের বিরুদ্ধে কেন্দ্র কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়। নিলেও সে বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা তথা পশ্চিমবঙ্গ সরকার পাল্টা কী করেন। যা সোমবার বিকেলের মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা রয়েছে।