ফাইল চিত্র।
প্রথম দর্শনে বিশাল ঝোলা-সহ কাবুলিওয়ালা রহমতকে ছেলেধরা সন্দেহ করে মিনি কী রকম সিঁটিয়ে গিয়েছিল, রবীন্দ্রগল্পে তার বর্ণনা আছে। কাবুলিওয়ালা সেজে এখন যাঁরা কলকাতায় ঢুকছেন, তাঁদের ঘিরে অন্য সন্দেহ গাঢ় হচ্ছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের। তাঁদের আশঙ্কা, পাকিস্তান থেকে আসা ওই যুবকদের উদ্দেশ্য ‘অন্য রকম’ হতেই পারে। কাবুলিওয়ালারা মূলত আফগানিস্তান থেকে আসেন। কিন্তু ওই সব যুবক আসছেন পাকিস্তান থেকে। তাই তাঁদের ঘিরে ঘোরালো হচ্ছে সন্দেহ।
শুধু সন্দেহ নয়, ধরপাকড়ও শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, বিদেশি হয়ে কাবুলিওয়ালার বেশ ধরে ওই সব যুবক এখানে সুদে টাকা খাটান কী ভাবে? রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অনুমতি ছাড়া টাকা লেনদেনের এমন ব্যবসা তো বেআইনি! অভিযোগ, এখান থেকে সুদ হিসেবে রোজগার করা কয়েক কোটি টাকা হাওয়ালা মারফত চলে যাচ্ছে বিদেশে। সেটাও আইনবিরুদ্ধ। আরও অভিযোগ, আফগানিস্তান বা অন্য দেশ থেকে এসে বেআইনি ভাবে ভারতীয় পরিচয়পত্র বানিয়ে পাকাপাকি ভাবে এ দেশে থেকে যাওয়ারও চেষ্টা করছেন অনেকে। কলকাতা এবং আশেপাশে অন্তত দু’হাজার কাবুলিওয়ালা এ ভাবে টাকা ধার দেওয়ার ব্যবসা চালাচ্ছেন।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা তিন কাবুলিওয়ালাকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। কিন্তু এই ধরনের কোনও পাকিস্তানিকে এখনও গ্রেফতার করা যায়নি। ভবানীপুর এলাকায় ধৃত কাবুলিওয়ালার কাছ থেকে পাওয়া গিয়েছে ভারতীয় ভোটার কার্ড। তাতে নাম রয়েছে মহম্মদ আসলাম। নাগপুরের কোনও ঠিকানা দেখিয়ে তিনি ভারতীয় পরিচয়পত্র জোগাড় করেছিলেন। আফগানিস্তানেরও পরিচয়পত্র পাওয়া গিয়েছে তাঁর কাছে। তাতে তাঁর নাম আহমেদ শাহ। দু’টি পরিচয়পত্রেই ছবি এক।
একবালপুর থানা এলাকায় ধরা পড়েছেন খাদাই আন্দার নাজার নামে এক ব্যক্তি এবং তাঁর ছেলে একমাতুল্লা আন্দার। তদন্তে জানা গিয়েছে, খাদাইয়ের চিকিৎসার নাম করে তাঁরা দিল্লি আসেন। তার পরে কলকাতায় এসে সুদে টাকা খাটানোর ব্যবসা ফেঁদে বসেন। তাঁদের বাড়িতে একটি সিন্দুকে প্রায় আট লক্ষ ভারতীয় টাকা এবং পশতো ভাষায় লেখা একটি খাতা পাওয়া গিয়েছে। যাঁরা টাকা ধার নিয়েছেন, তাঁদের নাম ও ছবি ছিল সেই খাতায়। ঋণগ্রহীতাদের আসল পরিচয়পত্রও নিয়ে রেখেছিলেন তাঁরা। আরও একটি সিন্দুক-সহ ঘরটি সিল করে দিয়েছে কলকাতা পুলিশ।
মধ্য কলকাতার একটি রেস্তরাঁয় মেহমুদ্দিন নামে এক কাবুলিওয়ালার সঙ্গে কথা হচ্ছিল। ১০ হাজার টাকা ধার দিলে মাসে ৪০০ টাকা সুদ নেন তিনি। জানালেন, এখন বিভিন্ন লোককে তাঁর প্রায় ৪০ হাজার টাকা ধার দেওয়া আছে। এ ছাড়াও কাপড়ের ব্যবসা আছে। মেহমুদ্দিন ভারতীয় নাগরিক নন। তাঁর কাছে পশতুন কার্ড রয়েছে। তাঁর দাবি, সেই কার্ড নিয়ে অনির্দিষ্ট কাল ভারতে থাকা যায়। ওই কার্ড নিয়ে মেহমুদ্দিন প্রায় ৩০ বছর ধরে বসবাস করছেন জ্যোতি সিনেমা হলের পিছনের ডেরায়।
পেস্তা-বাদাম-খোবানি ফেরি করার পাশাপাশি চড়া সুদে টাকা ধার দেওয়ার ব্যবসা চালানোর জন্য আফগানিস্তান থেকে রহমত-মেহমুদ্দিনদের কলকাতায় আনাগোনা দীর্ঘকালের। তাঁদের বিরুদ্ধে এত দিন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন?
গোয়েন্দাদের বক্তব্য, এ ভাবে টাকা লেনদেন বেআইনি এবং সেটা এত দিন প্রশাসনের চোখের সামনেই ঘটছিল। ইদানীং হাওয়ালার অভিযোগ উঠছে। অভিযোগ উঠছে পাক যোগেরও। তাই ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে।