— প্রতীকী চিত্র।
চায়ের গুণমান নিয়ে বিতর্ক কিছু কম হয়নি অতীতে। কেন্দ্রের নির্দেশমাফিক গুঁড়ো চায়ের নিলাম ঘিরেও আপত্তির প্রবণতা ছিল নানা মহলে। ফলে চায়ের গুণমান পরীক্ষা হচ্ছিল না সে-ভাবে। চা মজুত কেন্দ্রে হানা দিয়ে চা-পর্ষদ (টি-বোর্ড) এমন কিছু চায়ের নমুনা পেয়েছিল, যাতে মারাত্মক কীটনাশক ছিল বিপুল পরিমাণে। এতে জনস্বাস্থ্যে ব্যাপক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা এবং রফতানি ধাক্কা খাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। শনিবার কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের নেতৃত্বে হওয়া একটি বৈঠকে চা-পর্ষদকে নিয়মিত গুণমান পরীক্ষা চালিয়ে যেতে এবং পদক্ষেপ করতে ছাড়পত্র দিয়েছে কেন্দ্র। একই সঙ্গে গুঁড়ো চায়ের নিলাম বাধ্যতামূলক এবং তা চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার ছাড়পত্রও দেওয়া হয়েছে।
অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা-সহ চা পর্ষদের কর্তা, পর্ষদ সদস্যদের নিয়ে ওই দিন বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। সেখানে ছিলেন এ রাজ্যের চা-প্রতিনিধিরাও। কারণ, চা উৎপাদনে পশ্চিমবঙ্গ এবং অসমের গুরুত্ব অপরিসীম। সূত্রের দাবি, সেখানে কেন্দ্র স্পষ্ট করে দিয়েছে, কোনও ভাবেই চায়ের গুণমান নিয়ে আপস করা হবে না। বলে দেওয়া হয়েছে, প্রতি বছর ৩০ নভেম্বর থেকে কয়েক মাস বাধ্যতামূলক ভাবে বন্ধ থাকবে চা-বাগান এবং কারখানা। পর্ষদের নির্দেশের পরে তা খুলবে। বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা, এই শীতের মরসুমে ‘ডায়ারনাল ডরম্যান্সি’ অর্থাৎ, রোদের অভাবে বাগানের চা-গাছে নতুন পাতা আসে না। ফলে এখন পাতা তুললে তাতে পুরনো এবং কম গুণমানের পাতার জোগান বাড়ে। ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে গাছে নতুন এবং উৎকৃষ্ট মানের পাতা আসা শুরু হয়। কেন্দ্রের নির্দেশ, তখন থেকে আবার চা-পাতা তোলা যাবে। অভিযোগ ছিল, এই নিয়ম আগে থাকলেও, তা সর্বত্র মেনে চলা হচ্ছিল না।
কেন্দ্র বৈঠকে জানিয়েছে, একশো শতাংশ গুঁড়ো চায়ের নিলাম চলবে এবং তা বাধ্যতামূলক। চায়ের গুণমান পরীক্ষার কাজও চালিয়ে যাবে দেশের খাদ্যসুরক্ষা এবং গুণমান নিয়ন্ত্রক সংস্থা (‘ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অব ইন্ডিয়া’ বা এফএসএসএআই)। চা পরীক্ষার সেই ফলাফল ওয়েবসাইটে আপলোড করে জনগণকে জানানোর ব্যবস্থা করতে হবে। কারও কোনও সন্দেহ থাকলে তিনি অভিযোগ দায়েরও করতে পারবেন। নিষিদ্ধ কীটনাশকের প্রয়োগ রুখতে চা মজুতকেন্দ্রে হানা জারি থাকবে বলেও স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে বৈঠকে। এমন নমুনা পেলেই, সংশ্লিষ্টের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে। চা-গবেষণা সংস্থাগুলিও একত্রে কাজ করবে এ ব্যাপারে। এক কর্তার কথায়, “কেন্দ্রের লক্ষ্য, চায়ের গুণমান একশো শতাংশ ত্রুটিমুক্ত রাখা। এতদিন ধরে চা-পর্ষদ যে পদক্ষেপগুলি করেছে, তা কেন্দ্রের মান্যতা পেয়েছে।”
প্রসঙ্গত, বেশ কয়েক মাস আগে উত্তরবঙ্গের অনেকগুলি চা উৎপাদক সংস্থা এবং মজুতকেন্দ্রে হানা দিয়ে প্রায় ২০ হাজার ৬৬৩ কেজি চা বাজেয়াপ্ত করেছিল চা পর্ষদ। তাতে অন্তত ২২ প্রকারের নমুনা চিহ্নিত করে পাঠানো হয়েছিল ‘ন্যাশনাল অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ড ফর টেস্টিং অ্যান্ড ক্যালিব্রেশন ল্যাবরেটরিজ়’ বা এনএবিএল অনুমোদিত পরীক্ষাগারে। চা-পর্ষদের সচিব লিখিত ভাবে এফএসএসএআই-কে জানিয়েছিলেন, প্রত্যেকটি নমুনা এফএসএসএআই-এর মানদণ্ডে পৌঁছতে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ, সেগুলিতে অ্যাশটামিপ্রিড, ইমিডাক্লোপ্রিড এবং মোনোক্রোটোফস-সহ অনেক ধরনের নিষিদ্ধ কীটনাশকের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তার পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত। ফলে সেই চা জনস্বাস্থ্যের দিক থেকে বিপজ্জনক হয়ে উঠছিল। বিদেশে চা-রফতানিতেও তৈরি করছিল প্রতিবন্ধকতা। চায়ের কাপের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রের এই পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞমহল।