দমকলমন্ত্রী সুজিত বোসের বাড়ির বাইরে কেন্দ্রীয় বাহিনী। —নিজস্ব চিত্র।
সন্দেশখালিকাণ্ডের এক সপ্তাহ পেরিয়েছে। শুক্রবার সকালে তিন জায়গায় নতুন করে অভিযানে নেমেছে ইডি। কিন্তু সন্দেশখালি এবং বনগাঁর ঘটনার থেকে ‘শিক্ষা’ নিয়ে শুক্রবারের অভিযানে অতি সাবধানী কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু, বরাহনগরের তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায় এবং উত্তর দমদম পুরসভার কাউন্সিলর সুবোধ চক্রবর্তীর বাড়িতে অতিরিক্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে হানা দিতে দেখা গেল ইডি আধিকারিকদের। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সঙ্গে অভিযানে গেলে সব সময়ই বন্দুক লক্ষ্য করা যায় বাহিনীর হাতে। শুক্রবার বাহিনীর হাতে আত্মরক্ষার জন্য রয়েছে ঢাল এবং মাথায় হেলমেট। বাহিনীর বেশির ভাগ সদস্যের হাতে লাঠিও রয়েছে।
ইডির অভিযোগ ছিল, সন্দেশখালিতে অভিযানে দিয়ে স্থানীয় পুলিশের সহযোগিতা পাননি আধিকারিকেরা। কিন্তু শুক্রবার, যে তিন জায়গায় ইডি আধিকারিকেরা তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছেন, সেখানে উপস্থিত রয়েছে স্থানীয় পুলিশও।
ঠিক এক সপ্তাহ আগে অর্থাৎ, গত শুক্রবার সকালে রেশন দুর্নীতি মামলার তদন্ত করতে বনগাঁ এবং সন্দেশখালিতে হানা দিয়েছিল ইডি। কিন্তু তল্লাশি অভিযানে গিয়ে কার্যত মার খেতে হয় কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার আধিকারিকদের। সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখের বাড়ির কাছাকাছি গিয়ে মারমুখী জনতার রোষে পিছু হটতে হয় কেন্দ্রীয় বাহিনীকেও। তাঁদের ঘিরে ধরেন স্থানীয় মানুষজন। লাঠি, ইট-পাটকেল নিয়ে ইডি আধিকারিকদের উপর চড়াও হন স্থানীয় বাসিন্দা এবং তৃণমূল নেতার অনুগামীরা। আক্রান্ত হন ইডির তিন অফিসার। তাঁদের মধ্যে এক জনের আঘাত ছিল গুরুতর। সেই সময় ইডির অফিসারদের ল্যাপটপ, মোবাইল, ব্যাগ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ, ঝামেলার সময় ওই দলের মধ্যে থাকা কেউ ইডির ল্যাপটপ, মোবাইল এবং ব্যাগ সরিয়ে নিয়েছেন। কারণ, সন্দেশখালি থেকে ফেরার সময় আর এই সমস্ত জিনিস খুঁজে পাননি ইডির কর্তারা। এর পর মারমুখী জনতার হাত থেকে কোনও মতে ‘বেঁচে ফেরেন’ ইডি আধিকারিক এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্যেরা। কয়েক জনকে অটো ধরে পালাতে দেখা যায়। পরে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয় ইডির তিন আধিকারিককে।
ওই একই দিনে বনগাঁতেও বাধার মুখে পড়তে হয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকদের। বনগাঁর প্রাক্তন পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্যকে গ্রেফতারের সময় স্থানীয়দের ক্ষোভের মুখে পড়ে ইডি। সন্দেশখালির মতো বনগাঁতেও ইডিকে সামনে থেকে বাধা দেওয়া হয়। শঙ্করকে গাড়িতে তোলার সময় একটা থান ইট গিয়ে পড়ে ইডির গাড়িতে।
ইডি সূত্রে খবর, সন্দেশখালি এবং বনগাঁ ‘মডেল’-এর যাতে আর পুনরাবৃত্তি না হয়, সেই কারণেই শুক্রবারের তদন্ত অভিযানে অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সাবধানী কেন্দ্রীয় বাহিনীও। সূত্রের খবর, সন্দেশখালির পর কেন্দ্রীয় বাহিনীর অভ্যন্তরীণ নির্দেশ, এ বার থেকে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সঙ্গে অভিযানে গেলে রীতিমতো প্রস্তুত হয়ে যেতে হবে। মাওবাদী উপদ্রুত এলাকায় অভিযানে যাওয়ার সময় যেমন প্রস্তুতি থাকে, এ ক্ষেত্রেও সে রকমই প্রস্তুতি রাখতে হবে।
প্রসঙ্গত, পুর নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে দমকলমন্ত্রী সুজিতের বাড়িতে ইডি হানা দিয়েছে। সকাল সাতটা নাগাদ মন্ত্রীর লেকটাউনের দু’টি বাড়িতে হানা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকেরা। শুক্রবার সকালে পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতি মামলার আরও দুই জায়গায় তল্লাশি চালাচ্ছে ইডি। তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায় এবং উত্তর দমদম পুরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সুবোধ চক্রবর্তীর বাড়িতে হানা দিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তাপস বরাহনগরের তৃণমূল বিধায়ক। তাঁর বউবাজারের বাড়িতে হানা দিয়েছে ইডি। অন্য দিকে, সুবোধ উত্তর দমদম পুরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। আগে উত্তর দমদম পুরসভার চেয়ারম্যানও ছিলেন সুবোধ। শুক্রবার সকাল পৌনে সাতটা নাগাদ বিরাটির খলিসাকোটা পল্লীতে তাঁর বাড়িতে ঢোকে ইডি আধিকারিকদের দল।