—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
ভারতের সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা একশো পেরিয়েছে বলে দাবি করেছে রাজ্যের বন দফতর। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারি রিপোর্টেই প্রকাশ পেয়েছে যে, সুন্দরবনে অরণ্যের অবস্থা আশাপ্রদ নয়। এই পরিস্থিতিতে বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পে শুধু দক্ষিণরায়ের সংখ্যাবৃদ্ধি নয়, তার আবাস রক্ষাতেও গুরুত্ব দেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন বন্যপ্রাণ এবং পরিবেশ বিশেষজ্ঞেরা। সোমবার আন্তর্জাতিক ব্যাঘ্র দিবসে এই সহাবস্থানের বিষয়টির উপরেই বেশি করে জোর দিতে বলছেন তাঁরা।
২০২১ সালের ফরেস্ট সার্ভে অব ইন্ডিয়ার রিপোর্ট বলছে, পশ্চিমবঙ্গে মোট ম্যানগ্রোভ অরণ্যের পরিমাণ প্রায় ২১১৩ বর্গকিলোমিটার। তার মধ্যে ঘন ম্যানগ্রোভ অরণ্যের পরিমাণ প্রায় ৯৯৪ বর্গ কিলোমিটার। ২০১৯ সালের তুলনায় ২ শতাংশ মোট ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল বাড়লেও বন দফতরের খবর, ২০১৭ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সুন্দরবনে ক্রমাগত ঘন ম্যানগ্রোভ অরণ্য কমেছে। তার ফলে বাঘের মূল আবাসের ক্ষতি হয়েছে। প্রভাব পড়েছে বাস্তুতন্ত্র এবং বাঘের খাদ্য তালিকায় থাকা প্রাণীদের উপরেও। এর ফলেই বাঘেরা বারবার লোকালয়ের কাছে চলে আসছে।
সুন্দরবনে বৃক্ষরোপণ নিয়ে কাজ করা একটি সংস্থার শীর্ষ কর্তা প্রদীপ শাহের মতে, বৃক্ষরোপণের ফলে বনাঞ্চল বাড়লে বাঘের স্বাভাবিক বাসস্থান বাড়বে এবং বাঘের খাদ্যতালিকায় থাকা প্রাণীর সংখ্যাও বাড়বে। তা ছাড়া, এর ফলে গহিন জঙ্গলে (কোর এরিয়া) মানুষের যাতায়াতও কমবে।
ম্যানগ্রোভের ঢাল থাকায় ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের বিপদ থেকে মানুষের বসতিও রক্ষা পাবে। তাই অরণ্য বাড়লে মানুষ এবং বন্যপ্রাণীর সংঘাত কমবে। এই লক্ষ্যেই সাতজেলিয়া-সহ কিছু এলাকায় তাঁরা গাছ লাগিয়েছেন এবং গোসাবা ব্লকের কিছু এলাকায় গাছ লাগানো চলছে বলেও প্রদীপ দাবি করেছেন।
তবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের শিক্ষক পুনর্বসু চৌধুরী বলছেন, ‘‘সুন্দরবনে বৃক্ষরোপণের যথাযথ পরিকল্পনা এবং ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। তবে বাঘ যাতে গভীর অরণ্য ছেড়ে বেরিয়ে না আসে তার জন্য বেড়ার সুরক্ষা প্রয়োজন। গাছ লাগানোর সময় প্রজাতির বৈচিত্র রাখতে হবে। তা হলে সুন্দরবনের সামগ্রিক বাস্তুতন্ত্র রক্ষা হবে।’’
বন দফতরের এক কর্তার অবশ্য দাবি, বাঘ সংরক্ষণের যাবতীয় নিয়ম মেনেই তাঁরা সুন্দরবনে ম্যানগ্রোভ অরণ্যের পরিমাণ বাড়াচ্ছেন। পাশাপাশি মানুষের সঙ্গে যাতে
বাঘের সংঘাত কমে, সে দিকেও নজর দেওয়া হচ্ছে।