প্রতীকী ছবি।
কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের কাছে এখনও জিএসটি ক্ষতিপূরণ বাবদ ২,৩৯৩ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের। অর্থ মন্ত্রক গত সপ্তাহে নভেম্বর মাস পর্যন্ত রাজ্যগুলিকে জিএসটি ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দিয়েছে। তার পরেও ২০১৯-২০-র ডিসেম্বর-জানুয়ারি ও ২০২০-র ফেব্রুয়ারি-মার্চ বাবদ মোট ২,৩৯৩ কোটি টাকা বাকি।
শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, শুধু ডিসেম্বর-জানুয়ারির জন্যই রাজ্যগুলিকে এখনও ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি জিএসটি ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দিতে হবে। প্রথা অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যেই এই ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অর্থনীতির ঝিমুনির ফলে রাজ্যগুলির জিএসটি থেকে আয় কম হয়েছে। প্রত্যাশা মাফিক রাজস্ব আয় বাড়েনি। তেমনই পরিবেশ বা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক বা বিলাসবহুল পণ্যে জিএসটি-অতিরিক্ত সেস বাবদও বিশেষ আয় হয়নি। ওই সেস বাবদ আয়ের তহবিল থেকেই রাজ্যের ক্ষতিপূরণ মেটানোর কথা। কিন্তু তহবিলের এখন হাঁড়ির হাল।
অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে নভেম্বর পর্যন্ত জিএসটি-অতিরিক্ত সেস বাবদ ৯৬,১২৭ কোটি টাকা আয় হয়েছে। কিন্তু নভেম্বর পর্যন্ত রাজ্যগুলিকে ক্ষতিপূরণ দিতেই ১.৩৪ লক্ষ কোটি টাকা বেরিয়ে গিয়েছে। বাড়তি অর্থ এল কোথা থেকে? মন্ত্রক সূত্রের জবাব, আগের দুই অর্থ বছরের আয় থেকে তহবিলে প্রায় ৪৭ হাজার কোটি টাকা রয়ে গিয়েছিল। তা দিয়েই কাজ চালানো হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে জিএসটি থেকে আয় কমেছে। মার্চ মাসের প্রায় এক সপ্তাহ লকডাউন ছিল। ফলে আরও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এ বার সেই সঞ্চয়ও ফুরিয়ে গেলে কী হবে? অর্থ মন্ত্রকের জবাব, মার্চের ছবি দেখে নিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের বৈঠক ডাকবেন। জিএসটি পরিষদ এ জন্য বাজার থেকে ধার করতে পারে কি না, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা হবে।
শনিবারই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে সব রাজ্যের অর্থমন্ত্রীরা জিএসটি ক্ষতিপূরণ-সহ কেন্দ্রের থেকে যাবতীয় পাওনা মিটিয়ে দেওয়ার দাবি তোলেন। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র সিংহ জানান, ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত তাঁর প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা পাওনা। আর এক কংগ্রেসি রাজ্য ছত্তীসগঢ়েরও প্রায় ১,৫৫১ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। করোনা-মোকাবিলায় অতিরিক্ত আর্থিক প্যাকেজেরও দাবি তোলেন তাঁরা। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম বলেন, “কেন্দ্রের থেকে রাজ্যগুলি খুবই কম অর্থ পেয়েছে। জিএসটি ক্ষতিপূরণ বকেয়া। রাজ্য দুর্যোগ ত্রাণ তহবিলে প্রথম কিস্তি শুধু মিলেছে। করোনা-মোকাবিলায় স্বাস্থ্য পরিকাঠামো খাতে ১৫ হাজার কোটি টাকার ভাগটুকু মিলছে।” অর্থ মন্ত্রকের চিন্তা, অক্টোবর-নভেম্বরে রাজ্যগুলিকে জিএসটি ক্ষতিপূরণ বাবদ ৩৪ হাজার কোটি টাকার বেশি মেটানো হয়েছে। ডিসেম্বর-জানুয়ারিতেও একই অঙ্ক মেটাতে হবে। তার বন্দোবস্ত করতে না করতেই ফেব্রুয়ারি-মার্চের বকেয়া মেটানোর দাবি উঠে যাবে।