প্রতীকী ছবি।
সভাস্থলে হাজির শিক্ষক, পুলিশ, জনপ্রতিনিধিরা। সভার আয়োজন সংক্রমণের মাপকাঠিতে উদ্বেগের জেলাতেই! উত্তর ২৪ পরগনার তিন পুর এলাকার সভামঞ্চ থেকে কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্কের বার্তা— করোনাকে হারাতে পারেন আক্রান্তের প্রতিবেশীই!
সরকারি পরিকাঠামোয় ভাইরাসের সঙ্গে মোকাবিলায় পরিকল্পনা, নির্দেশিকা রয়েছে। উপসর্গহীন বা মৃদু উপসর্গযুক্ত রোগীরা যাতে হাসপাতালে শয্যা আটকে না রাখেন সে জন্য বিভিন্ন পুর এলাকায় তৈরি করা হচ্ছে ‘সেফ হোম’। কিন্তু সে সব রূপায়ণে প্রতিবন্ধকতাও কম নেই। এই আবহে স্বাস্থ্য দফতরের সম্মতি নিয়ে সংক্রমিত এলাকায় জনমত তৈরির কাজে নেমেছে ‘কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্ক’ (সিসিএন)। সরকারি চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী, যোগীরাজ রায়, কার্ডিয়োলজিস্ট অরিজিৎ ঘোষের নেতৃত্বে সিসিএন-এর সঙ্গে রয়েছেন কোভিডজয়ী চিকিৎসক সায়ন্তন চক্রবর্তী, হাওড়ার অমৃতা পান্ডা এবং এভারেস্টজয়ী পর্বতারোহী সত্যরূপ সিদ্ধান্তরা।
শুক্রবার অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভা থেকে যাত্রা শুরু হয়েছিল। অশোকনগরে আসার কারণ স্পষ্ট করে দিয়ে অভিজিৎ বলেন, ‘‘সামাজিক ভীতির জন্য অনেকে জ্বর নিয়ে ঘরে বসে রয়েছেন। আক্রান্তের চিকিৎসা সুনিশ্চিত করতে হলে সবার আগে পাড়াকে তৈরি করতে হবে!’’ সেই প্রস্তুতির প্রথম ধাপ হল ‘সেফ হোম’-এ সহমত অর্জন। দ্বিতীয় ধাপ স্থানীয় ক্লাব, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় ‘কোভিড যোদ্ধাদের’ দল তৈরি করা।
অশোকনগরের পরে বারাসত এবং মধ্যমগ্রামের সভাতেও আগমনের অভিমুখ এ ভাবেই স্পষ্ট করে দেওয়া হল। নিজের উদাহরণ তুলে ধরলেন অমৃতা। হাওড়ার তরুণী নিজে ছাড়াও তাঁর পরিবারের আরও তিন আক্রান্ত সদস্য ‘হোম আইসোলেশনে’ ছিলেন। ওই বাড়িতেই বাবা, দিদি এবং তাঁর দু’বছরের শিশু আক্রান্তের তালিকায় ছিলেন না। ‘হোম আইসোলেশনের’ এর চেয়ে ভাল নজির আর কী হতে পারে! ডব্লিউবিসিএস অফিসার সঙ্গীতা বন্দ্যোপাধ্যায় বড়ুয়ার বাবা করোনা আক্রান্ত হয়ে কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। নিজেও করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। হার না মেনে এই যুদ্ধে কী ভাবে জেতা যায়, সে কথা জানালেন তিনি।
কোভিডজয়ীদের বার্তা শুনে আড় ভাঙতে শুরু করে। অশোকনগরের সভায় উপস্থিত জনপ্রতিনিধি জানতে চান ‘সেফ হোমে’ কী কী রাখা প্রয়োজন? শিক্ষক সমাজের প্রতিনিধি বলেন, ‘‘তা হলে তো পরিযায়ী শ্রমিকেরা সুস্থ হলে তাঁদেরও ভয় পাওয়ার কারণ নেই! থানার বড়বাবু বলেন, ‘‘এখানে অনেকগুলো ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ আছে। সচেতনতা প্রচারে তাঁদেরও তো কাজে লাগানো যেতে পারে!’’ এ সব শুনে সিসিএনের সম্পাদক সত্যরূপ বলেন, ‘‘করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন এমন ১৫-২০ জনের নাম দিন না! সচেতনতা বার্তায় কী করতে হবে আমরা বলে দেব।’’ চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী যোগ করেন, প্রয়োজনে তাঁদের পালস্ অক্সিমিটার দেওয়া যেতে পারে। আক্রান্তদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে দেহে অক্সিজেনের মাত্রা দেখার পাশাপাশি তাঁরা কেমন আছেন, সে বিষয়ে খোঁজ নেবেন এই কোভিডজয়ীরা।
বারাসতে সায়ন্তন যখন জানান, আক্রান্ত হওয়ার দু’সপ্তাহের পরে আর পরীক্ষার দরকার নেই, সভাস্থলে উপস্থিত সমাজের এক প্রতিনিধি বলেন, ‘‘তাই নাকি? এটা জানতাম না।’’ ‘সেফ হোমের’ প্রয়োজন উপলব্ধি করার পরে সভাস্থল থেকেই এলাকার নার্সিংহোম, যশোর রোড সংলগ্ন অনুষ্ঠান-বাড়িগুলিকে এ কাজে ব্যবহারের প্রস্তাব উঠে আসে।
সমাজের সর্বস্তরে কী ধরনের প্রশ্ন সদুত্তরের অপেক্ষায় রয়েছে, সহমত অর্জনের সভাগুলিতে তার আভাস মেলে। মধ্যমগ্রাম পুরসভার চিকিৎসক ঐন্দ্রিল ভৌমিকের যেমন প্রশ্ন ছিল, ‘‘প্রতিদিনই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সকলে জানতে চাইছেন কী করব?’’ কী বলবেন, তা জানিয়ে চিকিৎসককে আশ্বস্ত করল সিএনএন। মধ্যমগ্রাম পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মী জানান, বস্তি অঞ্চলে সহযোগিতা মিললেও বহুতলে করোনা নিয়ন্ত্রণের কাজে বেগ পেতে হচ্ছে। তবু তাঁর গলায় ভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধে হার না মানার জেদ। এই জেদ তৈরির জন্যই সংক্রমিত জেলা সফরে বেরিয়েছে কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্ক।