ফাইল চিত্র।
কনস্টেবল থেকে কোন জাদুবলে সহগল হোসেন শত কোটি টাকার ধনকুবের বনে গিয়েছেন, তার চুলচেরা তদন্ত তো চলছেই। সেই সঙ্গে সিবিআইয়ের দাবি, তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের ঘনিষ্ঠ অন্য কিছু পুলিশকর্মীর সম্পত্তিও তাদের আতস কাচের নীচে।
আদালতের নির্দেশে দ্বিতীয় দফায় হেফাজতে নিয়ে সহগলকে এখন জেরা করা হচ্ছে। সিবিআইয়ের এক তদন্তকারী অফিসারের দাবি, বহু নতুন তথ্য উঠে এসেছে। বীরভূম সদরের পুলিশ কার্যালয় এবং জেলার বিভিন্ন থানায় কর্মরত, সহগালের মতো প্রভাবশালী-ঘনিষ্ঠ কিছু পুলিশকর্মীর নাম উঠে এসেছে। তাঁরাও বিপুল সম্পত্তির মালিক। তা ছাড়াও পাওয়া গিয়েছে সহগল-ঘনিষ্ঠ একাধিক ব্যবসায়ীর হদিস। তাঁদের নামেও প্রচুর বিষয়সম্পত্তি কেনা হয়েছিল বলে সিবিআইয়ের অভিযোগ। ওই সব সম্পত্তির দলিলও উদ্ধার করা হয়েছে সহগলের হেফাজত থেকে। সেই সব ব্যবসায়ীর খোঁজ চলছে। মুর্শিদাবাদ ও বীরভূমের সহগল-ঘনিষ্ঠ বেশ কিছু ব্যবসায়ী ইতিমধ্যে গা-ঢাকা দিয়েছেন বলে তদন্তকারী অফিসারদের দাবি।
সিবিআই সূত্রের খবর, সহগলকে জেরা করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বীরভূমে রাজ্যের শাসক দলের প্রভাবশালী নেতার ঘনিষ্ঠ পুলিশ অফিসার ও ব্যবসায়ীদের নামের তালিকা করা হয়েছে। মুর্শিদাবাদ ও বীরভূম জেলার ভূমিরাজস্ব দফতরে তাঁদের বিভিন্ন জমি-সম্পত্তির দলিলের বিষয় খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
অনুব্রতের দেহরক্ষী সহগলের বিপুল সম্পত্তির হদিস পাওয়া গিয়েছে বলে সম্প্রতি আসানসোলের বিশেষ আদালতে দাবি করেছে সিবিআই। তারা আদালতে লিখিত ভাবে জানিয়েছে, এ-পর্যন্ত নামে-বেনামে ওই কনস্টেবলের প্রায় একশো কোটি টাকার সম্পত্তির সন্ধান মিলেছে। সহগলের মুর্শিদাবাদের ডোমকলের বাড়ি এবং বোলপুর ও নিউ টাউনের একাধিক ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়ে নগদ টাকা, গয়না ও প্রচুর জমির দলিল উদ্ধার করেছেন তদন্তকারীরা। তাঁদের দাবি, মা, স্ত্রী-সহ বিভিন্ন আত্মীয়ের নামে সম্পত্তি কিনেছিলেন সহগল।
তদন্তকারীরা জানান, বীরভূমের কঙ্কালীতলা এলাকায় একটি পেট্রল পাম্প রয়েছে মাধব কৈবর্ত নামে এক ব্যক্তির নামে। মাধব বোলপুরের বাসিন্দা এবং সহগলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। মাস দেড়েক আগে দু’টি গাড়িতে ফেরার সময় দুর্ঘটনায় সামনের গাড়িতে থাকা মাধব ও সহগলের দু’বছর বয়সি মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানের ভিত্তিতে সিবিআইয়ের দাবি, মাধব আর্থিক ভাবে তেমন সম্পন্ন ছিলেন না। অথচ তাঁর নামে পেট্রল পাম্প রয়েছে। সহগলের টাকাতেই ওই পাম্প খোলা হয়েছিল বলে তদন্তে উঠে এসেছে। সহগলের হেফাজতে বীরভূমে বিভিন্ন জমিরও হদিস পেয়েছে সিবিআই। এক তদন্তকারী জানান, বোলপুরের রবীন্দ্র বীথি বাইপাস লাগোয়া দেড়শো থেকে দু’শো বিঘা জমির দলিলের হদিস মিলেছে। অভিযোগ, সহগল এবং বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও তাঁদের আত্মীয়দের নামে ওই সব জমি কেনা হয়েছে। ওই বিপুল জমির আনুমানিক বাজারদর প্রায় দেড়শো কোটি টাকা বলে দাবি করছেন তদন্তকারীরা।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।