গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
তদন্তে দেরি নিয়ে প্রায় সব আদালতেই সমালোচনার মুখে পড়েছে সিবিআই। বুধবার তার জবাব দিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। আলিপুর আদালতে নিয়োগ মামলার শুনানি চলাকালীন সিবিআই বলল, ‘‘তদন্তে অগ্রগতি হচ্ছে। আমাদের অফিসারেরা ঘুমিয়ে নেই।’’
বুধবার আলিপুরের জাজেস কোর্টে শুনানি ছিল নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মামলার। আদালতে সশরীরে হাজিরা দেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী। শুনানি চলাকালীন বিচারকের কাছে পার্থকে জেলে গিয়ে জেরা করার আবেদন জানায় সিবিআই। বিচারক তার কারণ জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার আইনজীবী ওই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘‘প্রত্যেক দিন আমাদের তদন্তের অগ্রগতি হচ্ছে। তাতে নতুন তথ্যও উঠে এসেছে। সেই তথ্য যাচাই করতেই আমরা জেলে গিয়ে জেরা করতে চাইছি। হাই কোর্টকে রিপোর্টও দিচ্ছি। আমাদের তদন্তকারী অফিসারেরা ঘুমিয়ে নেই।’’
এর কিছু পরেই এজলাস থেকে বেরিয়ে আসেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ। আদালত চত্বরে উপস্থিত সাংবাদিকেরা তাঁর কাছেই সরাসরি বিষয়টি জানতে চান। প্রশ্ন করা হয়, সিবিআই আবার আপনাকে জেরা করতে চাইছে জেলে গিয়ে। আপনি কি সহযোগিতা করবেন? প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই জবাব দেন পার্থ। বলেন, ‘‘আমি সব সময়েই সহযোগিতা করি।’’ তবে প্রশ্ন সেখানেই থামে না। পার্থের কাছে জানতে চাওয়া হয়, সিবিআই নাকি বলেছে ওরা আরও নতুন তথ্য পেয়েছে? আদৌ কি পেয়েছে? শুনে পার্থ সামান্য মাথা নেড়ে মুখ নামিয়ে বলেন, ‘‘আমি তো শুনিনি, কোনও তথ্য পেয়েছে বলে।’’
বুধবার আদালতে শুনানিতে পার্থ এসেছিলেন একটি নীল রঙের ছাপা পাঞ্জাবি আর সাদা পাজামা পরে। এর আগে বিভিন্ন সূত্রে খবর এসেছিল পার্থ কিছুটা অসুস্থ। যদিও প্রাক্তন মন্ত্রীকে শারীরিক অসুস্থতার প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে তিনি কিছু বলেননি। তবে আদালত চত্বরে সিঁড়ি ভাঙতে এবং গাড়ির পা-দানিতে পা রেখে আসনে বসতে যে তাঁর যে অসুবিধা হচ্ছে, তা বোঝা যাচ্ছিল।
খুবই ধীর পদক্ষেপে পুলিশকর্মীদের হাত ধরে এগোচ্ছিলেন রাজ্যের শাসকদলের এককালের মহাসচিব পার্থ। তাঁকে এর পর প্রশ্ন করা হয় সিবিআইয়ের সাম্প্রতিক তল্লাশি অভিযান নিয়েও। জানতে চাওয়া হয়, সিবিআই দিন কয়েক আগে রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে। এ নিয়ে কি কিছু বলতে চান তিনি? প্রশ্ন শুনে নামিয়ে নেওয়া মুখ এক মুহূর্তের জন্য তুলে সোজাসুজি তাকিয়েছিলেন পার্থ। কিন্তু তার পর আর মুখে কোনও শব্দ উচ্চারণ করেননি। মাথা নেড়ে জানিয়ে দেন, এ ব্যাপারে তিনি কিছু বলতে চান না।
পরে বুধবার সন্ধ্যায় নিয়োগ মামলা নিয়ে নির্দেশ দেয় আলিপুর আদালত। পার্থ-সহ অশোক সাহা, কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় এবং চন্দন মণ্ডল আলিপুরের বিশেষ সিবিআই আদালতে পেশ করা হয়েছিল। আদালত জানিয়ে দেয় ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত জেলেই থাকবেন পার্থরা। উল্লেখ্য, ২৪ অক্টোবর দুর্গাপুজোর শেষ দিন। দশমী। ফলে পার্থদের পরবর্তী শুনানি হবে দ্বাদশীর দিন।