সন্দীপ ঘোষ। —নিজস্ব চিত্র।
সন্দীপ ঘোষের ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ফোন থেকে আর জি করে চিকিৎসক ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনার সূত্র খুঁজছে সিবিআই। তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর, ৯ অগস্ট সকাল সকাল প্রশাসনের শীর্ষ স্তরে ঘনিষ্ঠ এক ‘প্রভাবশালী’ ডাক্তারকে ফোন করেছিলেন সন্দীপ। সিবিআই সূত্রে দাবি, শুধু ওই ডাক্তারই নন, আরও কয়েক জনকে সেই সকালে ফোন করেন সন্দীপ।
অথচ ইমার্জেন্সি ভবনের চার তলায় চেস্ট মেডিসিনের সেমিনার ঘরে কোনও ডাক্তারের মৃত্যুর খবর, এত সকালে তিনি পাননি বলেই সিবিআইয়ের কাছে সন্দীপের বয়ানে উঠে এসেছে। সিবিআই বলছে, সন্দীপ সকালে ৯টার পরে ওই মৃত্যুর খবর জানতে পারেন বলে তাদের জানান। তা হলে তার অনেকটা আগে সেই ‘প্রভাবশালী’ ডাক্তারকে তিনি কেন ফোন করতে গেলেন?
আর জি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপের মোটামুটি এক মাসের ফোনের নথি গোয়েন্দারা খুঁটিয়ে দেখেন বলে খবর। তাতে এমন সাত-তাড়াতাড়ি প্রভাবশালীদের ফোন করাটা খানিক অন্য রকম ঠেকছে তদন্তকারীদের। তাঁদের দাবি, সাধারণত এত সকালে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্তাদের সন্দীপ ফোন করতেন না। অথচ, সিবিআই সূত্রে খবর, সন্দীপ সে-দিন সকাল ৭টার পরেই ওই প্রভাবশালী ডাক্তার, রাজ্যের কয়েক জন স্বাস্থ্যকর্তা এবং আর জি করের আধিকারিককেও ফোন করেন। কেন? এ বিষয়ে এখনও সন্দীপের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নয় সিবিআই। নানা সংশয়ের জট খুলতে সন্দীপের পলিগ্রাফ পরীক্ষা এখনও চলছে।
সংশয়ের ফাঁক দেখলেই এখন তদন্তকারীরা পলিগ্রাফ পরীক্ষার শরণ নিচ্ছেন। যেমন, এই খুনের মামলায় অভিযুক্ত তথা ধৃত সঞ্জয় রায়ের গুরুদেবপ্রতিম পুলিশ আধিকারিক চতুর্থ ব্যাটেলিয়নের এএসআই অনুপ হালদারের পলিগ্রাফ পরীক্ষারও আর্জি মঙ্গলবার জানায় সিবিআই। অনুপকে শিয়ালদহ কোর্টে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি নিজেও পলিগ্রাফে সায় দিয়েছেন বলে সিবিআই জানায়। সন্ধ্যায় অনুপকে ফের সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় সিবিআই। টালা থানার কয়েক জন আধিকারিকের সঙ্গেও এ দিন কথা বলে সিবিআই।
নিহত চিকিৎসক ছাত্রীর পরিচিত চার জন জুনিয়র ডাক্তারেরও পলিগ্রাফ পরীক্ষা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত আর জি করের ১০-১৫ জন জুনিয়র ডাক্তার ও চিকিৎসক-আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলে বয়ান নথিবদ্ধ করেছে সিবিআই। সিবিআইয়ের দাবি, তদন্তে যা যা তথ্য উঠে এসেছে, তাতে নিহত ছাত্রীর আর জি কর প্রশাসনের খুব একটা সুনজরে না থাকারও আভাস মিলছে। মৃতার ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে কথা বলে আর জি করের পঠনপাঠন, মূল্যায়ন রীতি নিয়ে তাঁর ক্ষোভ ছিল বলেই সিবিআইয়ের ধারণা। এখন প্রশ্ন, তাঁর মর্মান্তিক মৃত্যুর পিছনে কি সেই সব ক্ষোভ বা কোনও সংঘাতের যোগসূত্র হয়েছে? সত্যিই কি আর জি করের নম্বর পদ্ধতিরও কিছু গোলমেলে দিক ছিল? সেই জট খুলতেও এখন সিবিআই মরিয়া। দরকারে আর জি করের আরও কয়েক জন জুনিয়র ডাক্তারের পলিগ্রাফ পরীক্ষা করা হতে পারে বলেও তদন্তকারীদের সূত্রের খবর।