পুরনিয়োগ মামলায় তল্লাশি অভিযান সিবিআইয়ের। নিজস্ব চিত্র।
পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতিতে রবিবার একসঙ্গে একাধিক জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালায় সিবিআই। রবিবার সকালেই এই নিয়োগ দুর্নীতিতে প্রথমে সিবিআইয়ের একটি দল যায় রাজ্যের পুরমন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের বাড়িতে। একই সঙ্গে কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্রের বাড়িতেও এই নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে তল্লাশি অভিযানে গিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আর একটি দল। শুধু কলকাতাই নয়, একাধিক জেলাতেও এই নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে চালিয়েছে সিবিআই। রবিবার কলকাতার পাশাপাশি, উত্তর ২৪ পরগনার হালিশহর এবং কাঁচরাপাড়া-সহ মোট ১২ জায়গায় তল্লাশি অভিযানে যায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটি।
ঘটনাচক্রে, গত ২৪ এপ্রিল এই নিয়োগ দুর্নীতির বিষয়ে একটি এফআইআর দায়ের করেছিল সিবিআই। সেই এফআইআরের ভিত্তিতেই এই তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ফৌজদারি ষড়যন্ত্র, প্রতারণা, সংগঠিত ভাবে অপরাধ, অসৎ উদ্দেশে নথি ব্যবহার-সহ ভারতীয় দণ্ডবিধির মোট ছ’টি ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। সেগুলি হল— ১২০ বি, ৩৪, ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮ এবং ৪৭১ ধারা। এ ছাড়াও পাঁচটি দুর্নীতিদমন আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে।
গত এপ্রিলে কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছিলেন পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতিতে তদন্ত করতে পারবে সিবিআই। তাঁর নির্দেশ ছিল, প্রয়োজন মনে করলে নতুন এফআইআর দায়ের করে তদন্ত করতে পারবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটি। সেই নির্দেশ পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়েছিল রাজ্য। তাদের পুনর্বিবেচনার আর্জি খারিজ করে আগের নির্দেশ বহাল রাখেন বিচারপতি অমৃতা সিংহ। পরে সিঙ্গল বেঞ্চের সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে যায় রাজ্য। কিন্তু সেই নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয়নি ডিভিশন বেঞ্চও। তার পরই গত ২৪ এপ্রিল এই নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় একটি এফআইআর করে তদন্তে নামে তারা। উত্তর ২৪ পরগনা-সহ অন্যান্য জেলায় মোট ১৪টি পুরসভায় তল্লাশি চালায় তদন্তকারী সংস্থাটি। ওই সব পুরসভা থেকে নিয়োগ সংক্রান্ত প্রচুর নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে দাবি করা হয়। পুর নিয়োগ দুর্নীতিতে বিভিন্ন পুরসভার শুধুমাত্র চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও এগজ়িকিউটিভ অফিসার জড়িত নন, শাসক দলের স্থানীয় নেতা-সহ একাধিক প্রভাবশালী নেতা ও মন্ত্রীও এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, প্রাথমিক তদন্তের পরে এমনটাই দাবি করেছিল সিবিআই।
প্রসঙ্গত, স্কুলে নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির তদন্ত চালাতে গিয়ে পুরসভায় নিয়োগ তদন্তের বিষয়টি উঠে আসে। অয়ন শীল নামে হুগলির এক প্রোমোটারের সল্টলেকের অফিসে তল্লাশি চালিয়ে বিভিন্ন পুরসভায় নিয়োগ সংক্রান্ত নথি উদ্ধার করেছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। তাঁর ওই অফিস থেকে পুরসভার বিভিন্ন পদে চাকরিপ্রার্থীদের ওএমআর শিট (উত্তরপত্র) পাওয়া গিয়েছে বলেও দাবি করেছিলেন তদন্তকারীরা। শুধু তাই-ই নয়, কাঁচরাপাড়া, টাকি, দক্ষিণ দমদম, হালিশহর, বরাহনগর-সহ বহু পুরসভায় নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতিতে অয়ন জড়িত ছিলেন বলে দাবি করে ইডি।