আরজি কর-কাণ্ডের তদন্তে সিবিআই। — ফাইল চিত্র।
আবার নির্যাতিতার বাড়িতে গেল সিবিআই। চিকিৎসকের বাবা-মা জানিয়েছেন, বুধবার তাঁদের বাড়িতে এসেছিলেন সিবিআইয়ের দুই আধিকারিক। কিছু তথ্য সংগ্রহ করে চলে গিয়েছেন। পাশে থাকার আশ্বাসও দিয়েছেন তদন্তকারীরা। সেই আশ্বাসে ভরসা রাখছেন নির্যাতিতার বাবা-মা। তবে দ্রুত তদন্তের নিষ্পত্তি হওয়ার দাবিও তুলেছেন তাঁরা। পাশাপাশি চিকিৎসকের বাবা-মা জানিয়েছেন, আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদ চলুক। কিন্তু গুলি চালানোর মতো ঘটনা বা মানুষের দুর্ভোগ কাম্য নয়।
আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের যে অভিযোগ উঠেছে, কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে তার তদন্ত করছে সিবিআই। এর আগেও নির্যাতিতার বাড়িতে গিয়েছিলেন সিবিআইয়ের আধিকারিকেরা। তাঁর ডায়েরি-সহ কিছু জিনিসপত্র তদন্তের স্বার্থে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন তদন্তকারীরা। বুধবার সকালে আবার দুই আধিকারিক গিয়েছেন নির্যাতিতার বাড়ি। নির্যাতিতার বাবা-মা জানিয়েছেন, দু’জন আধিকারিক এসে কিছু তথ্য নিয়ে গিয়েছেন। তদন্তকারীরা নিজেদের সেরাটা দেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা। সেই আশ্বাসে নির্যাতিতার বাবা-মা আশা রাখছেন। তদন্তকারীদের সঙ্গে আর কী কথা হয়েছে, তা বিশদে জানাতে চাননি নির্যাতিতার অভিভাবকেরা। তবে তদন্তের যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেই দাবি তুলেছেন তাঁরা। পাশাপাশি, রাজ্যে বিজেপির ডাকা বন্ধ নিয়েও মুখ খুলেছেন নির্যাতিতার বাবা-মা।
বিজেপির ডাকা বন্ধে রাজ্য জুড়ে বিক্ষিপ্ত অশান্তির অভিযোগ উঠেছে। ভাটপাড়ায় বিজেপির দুই নেতার গাড়িতে গুলি চালানোর অভিযোগ করেছেন দলের প্রাক্তন সাংসদ অর্জুন সিংহ। এই বিষয়ে নির্যাতিতার বাবা-মা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, কোনও রকম হিংসার ঘটনা কাম্য নয়। নির্যাতিতার বাবার কথায়, ‘‘সকলে আন্দোলন করছেন। প্রতিবাদ চলুক, কিন্তু কারও প্রাণহানি হোক চাই না। মানুষের দুর্ভোগ চাই না। কোনও দুর্ঘটনা হলে আরও খারাপ লাগবে। দুঃখ বাড়বে আমাদের।’’
তাঁরা কি এই বন্ধের পক্ষে? জবাবে নির্যাতিতার বাবা বলেন, ‘‘বনধের পক্ষে বা বিপক্ষে কোনও কথা বলব না। বন্ধ আমরা সমর্থন করিনি, আবার ব্যর্থ হোক সেটাও চাই না।’’ চিকিৎসকের মায়ের দাবি, প্রতিবাদ চলুক। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা চাই প্রতিবাদ চলুক। যে ভাবে হোক, চলুক। সারা বিশ্ব জুড়ে লোকজন ঝাঁপিয়ে পড়ছেন। এ ভাবেই চলুক প্রতিবাদ।’’
তৃণমূলের ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের মঞ্চ থেকে বুধবার দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা দাবিকেও সমর্থন জানিয়েছেন নির্য়াতিতার বাবা-মা। অভিষেক প্রশ্ন তুলেছেন, কেন তদন্তে এত সময় নিচ্ছে সিবিআই? সেই প্রশ্নকে সমর্থন জানিয়ে নির্যাতিতার বাবা বলেন, ‘‘অবশ্যই তিনি ভাল কথা বলছেন। আমরাও তা-ই বলছি সিবিআইকে, তাড়াতাড়ি বিহিত করুন। আপনাদের এত সুনাম।’’ তাঁরা সাধারণ মানুষকে সিবিআইয়ের উপর চাপ বৃদ্ধি করার জন্য আর্জি জানিয়েছেন।
তদন্তের প্রসঙ্গে পুলিশের উপরও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন নির্যাতিতার বাবা। তিনি বলেন, ‘‘একটা জায়গার উপর আশা তো রাখতেই হবে। প্রথমে পুলিশের উপর ভরসা রেখেছিলাম। কিন্তু তাদের কাজকর্ম পরবর্তী কালে দেখতে পাচ্ছিলাম! তখন চাইছিলাম, ভাল কোনও এজেন্সিকে এই তদন্তভার দেওয়া হোক। হাই কোর্ট সিবিআইকে ভাল মনে করেছে বলে দায়িত্ব দিয়েছে।’’ তিনি এ-ও জানিয়েছেন, ৯ অগস্ট দুপুর সাড়ে ৩টের আগে আরজি করের সেই সেমিনার হলে তাঁরা প্রবেশ করতে পারেননি, যেখানে পড়েছিল তাঁদের মেয়ের দেহ। নির্যাতিতার বাবার কথায়, ‘‘আমাদের খবর দেওয়া হয়, মেয়ে সুইসাইড করেছে। সাড়ে ৩টের আগে ওই ঘরের ভিতর ঢুকতে পারিনি। বডি দেখতে পারিনি।’’ এখন সিবিআই দ্রুত তদন্তের নিষ্পত্তি করুক, সেটাই চান নির্যাতিতার বাবা-মা।