তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভিডিয়ো থেকে নেওয়া।
মমতা বলেন, ‘‘জুনিয়র ডাক্তারেরা যখন দেশ জুড়ে আন্দোলন করছিলেন, আমরা কিন্তু কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিইনি। কারণ আমি মনে করেছিলাম ওঁদের আন্দোলনটা সঙ্গত। ওরা ওদের বন্ধুর বিচার চাইছে। কিন্তু দিল্লিতে ডাক্তারদের বিরুদ্ধে এফআইআর করে দিয়েছিল।’’ তার পরই মমতা বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, এখনও পর্যন্ত যাঁরা কাজে যোগ দেননি, তাঁদের বিরুদ্ধে কিছু করবেন না। পরে এটা রাজ্যের উপর ছেড়ে দিলাম। আজ কত দিন হল? আজকেও জুনিয়র ডাক্তারদের মিছিল রয়েছে। আমার তাঁদের প্রতি সমর্থন ছিল, আছে, থাকবে। তবে আমি বলব, আপনারা তো মানবিক। সুপ্রিম কোর্টও অনুরোধ করেছে সবাইকে কাজে যোগ দেওয়ার জন্য। অনেক গরিব লোক চিকিৎসা না পেয়ে মারা গিয়েছে। গরিবেরা কোথায় যাবে? অনেক পরিষেবা আপনারা (জুনিয়র ডাক্তার) দেন। আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি, আপনারা আন্দোলন করেছেন কিন্তু আমরা কোনও ব্যবস্থা নিইনি। কোনও ব্যবস্থা নেব না। কিন্তু এ বার আস্তে আস্তে কাজে যোগদান করুন। আমি কোনও পদক্ষেপ করতে চাই না।’’
মমতা বলেন, ‘‘কাল যাঁরা যাঁরা হামলা করেছেন, তাঁদের খুঁজে বার করা হবে। আমি চাই, সকলের শাস্তি হোক। কোর্ট কী করবে আমি জানি না। তবে মানুষ শাস্তি দেবে।’’ তার পরই মমতা বলেন, ‘‘আমি মানুষকে এ কথা বলব না যে, আইন হাতে তুলে নিন।’’
মঙ্গলবার ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজে’র ডাকা ‘নবান্ন অভিযান’ নিয়ে তোপ মমতার। তিনি বলেন, ‘‘কাল (মঙ্গলবার) কারা এসেছিল? ছাত্রছাত্রীরা তোমাদের কারও সঙ্গে নেই। শুভ সমাজ নেই। বাংলার লোক হলে কি নবান্ন, রাজভবন চিনত না? আমি তো কাল দেখলাম রাজভবনের দক্ষিণ গেটেও ঢিল মেরেছে। এরা কারা? এরা কোথা থেকে এসেছে? কেউ যদি মনে করেন বাইরে থেকে এসে বাংলাকে অশান্ত করবেন, তাঁরা মনে রাখবেন বাংলা অচল হয় না।’’
মেয়ো রোডের সভা থেকে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে আক্রমণ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘আমি জানি, রাজাবাবু কিছু করবেন না। যদি তিনি (বিলে স্বাক্ষর) না করেন, তবে মেয়েরা রাজভবনে গিয়ে বসে থাকবে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকবে। এই বিল সই করতে হবে। রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে দিয়ে দায়িত্ব সারলে হবে না। আপনার রাজভবনের এক জন মহিলা কর্মীকে নির্যাতন করেন। সেই মেয়েটা বিচার পায়নি।’’
মমতা বলেন, ‘‘আগামী সপ্তাহে স্পিকারকে বলে বিধানসভায় বিশেষ অধিবেশন ডাকব। ১০ দিনের মধ্যে ‘ধর্ষকের ফাঁসি চাই’ এই বিল এনে পাশ করে রাজ্যপালের কাছে পাঠাব।’’
মমতা বলেন, ‘‘আজকে যাঁরা কামদুনির কথা বলেন, তাঁদের বলি কামদুনির ঘটনাতেও আমরা ফাঁসি চেয়েছিলাম। হাই কোর্টের রায়ে দু’জনের যাবজ্জীবন হয়েছিল।’’ তার পরই তিনি বলেন, ‘‘অনেক চোর-ডাকাতকে এখন ছেড়ে দেওয়া হয়। আমার কাছে অনেক ফাইল আসে, বলা হয় ১০-১২ বছর কেটে গিয়েছে ছেড়ে দেওয়া হোক। কেন অত্যাচারীদের ছেড়ে দেওয়া হবে? ধর্ষকদের কেন ছাড়া হবে? এটা কিসের নিয়ম। প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করলাম ন্যায় সংহিতা নিয়ে।’’
আরজি কর-কাণ্ডে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে রাজ্য সরকার। টিএমসিপির সভা থেকে এমনই জানালেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘যা ঘটেছে, তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু তার পরে যাতে দেরি না হয়, কোনও ভুলত্রুটি না হয় সেটাই দেখার। আমরা চেয়েছিলাম সাত দিনের মধ্যে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের মাধ্যমে বিচার। ব্যবস্থা করে দিতাম।’’
মমতা বলেন, ‘‘আমি আইনজীবীদের বলব, কোর্টে বিজেপিকে ছেড়ে দেবেন না। মানুষ যাতে কোর্টে গিয়ে বিচার পায়, সেটাই দেখবেন।’’
পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করলেন মমতা। মঙ্গলবারের ‘নবান্ন অভিযানে’ পুলিশ সংযত থেকেছে বলে জানান তিনি। মমতার কথায়, ‘‘আমি কালকের জন্য পুলিশকে স্যালুট জানাই। সংযত থেকেছে। নিজের রক্ত দিয়েছে। কিন্তু বিজেপির চক্রান্তের ফাঁদে পা দেয়নি।’’
মমতা বলেন, ‘‘কিসের বন্ধ? যদি বন্ধ করতে হয় তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে বন্ধ করো। যিনি আজ পর্যন্ত শুধু এজেন্সি লাগিয়ে মানুষের উপর অত্যাচার করা ছাড়া কিছুই করেননি।’’ অসম, মণিপুর, উত্তরপ্রদেশের উদাহরণ টানলেন মমতা।
টিএমসিপির সমাবেশ বানচাল করার চেষ্টা করেছে বিজেপি, তোপ মমতার। তিনি বলেন, ‘‘আজকে আমাদের ছেলেমেয়েরা যাঁরা আসছিল, তাঁদের আটকে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। বন্ধ ডেকে ট্রেন আটকে দেওয়া হয়েছে।’’
আরজি কর-কাণ্ডে বিজেপির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘আসল আন্দোলনের মুখ ঘোরানোর চেষ্টা করছে বিজেপি। আজকে জেনেশুনে বন্ধ ডেকেছে। ওদের বডি চাই। আমরা বিচার চাই, দোষী ব্যক্তির শাস্তি চাই। আর ওরা আসল আন্দোলনে জল ঢেলে দিয়েছে। বাংলাকে বদনাম করার খেলায় নেমেছে। আমি তাদের ধিক্কার জানাই।’’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নির্যাতিতদের উৎসর্গ করছি আজকের দিনটা। দেশ জুড়ে নির্যাতিতা এবং তাঁদের পরিবারকে উৎসর্গ করছি।’’
বুধবার তৃণমূলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপির প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে মেয়ো রোডে সমাবেশের আয়োজন করেছেন সংগঠনের সদস্যরা। সেই সমাবেশে উপস্থিত হলেন মমতা। মঞ্চ থেকে তিনি কী বার্তা দেন, সেটাই দেখার।
আরজি কর হাসপাতালে ধর্ষিতা ও খুন হওয়া চিকিৎসকের প্রতি তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) প্রতিষ্ঠা দিবস উৎসর্গ করেছেন মমতা। পাশাপাশি, সারা দেশে যত মহিলা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তাঁদের সকলের প্রতি দুঃখপ্রকাশ করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। ছাত্র-যুবদের উদ্দেশে সামাজিক দায়িত্ব পালনেরও বার্তা দিয়েছেন মমতা।
আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে এবং মঙ্গলবার ‘ছাত্র সমাজ’-এর ‘নবান্ন অভিযান’ কর্মসূচিতে ‘পুলিশি সন্ত্রাস’-এর অভিযোগ তুলে বুধবার বাংলায় বন্ধ পালন করছে বিজেপি। সকাল থেকেই কলকাতা থেকে জেলায় জেলায় বন্ধ ঘিরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে শুরু হয়। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বিক্ষিপ্ত অশান্তির খবরও মেলে। সেই আবহেই ধর্মতলার মেয়ো রোডে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমাবেশ। সেই সমাবেশে বক্তৃতা করবেন তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।