তদন্তের শ্লথ গতির জন্য তাদের বার বার ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হচ্ছে উচ্চ আদালতে। ফাইল চিত্র।
পশ্চিমবঙ্গের মতো একটি রাজ্যে একের পর এক মামলায় তদন্তের দায়িত্ব ঘাড়ে চাপায় অনেক দিন ধরেই তাদের অফিসারদের দম ফেলার ফুরসত নেই বলে সিবিআইয়ের খবর। তার উপরে তদন্তের শ্লথ গতির জন্য তাদের বার বার ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হচ্ছে উচ্চ আদালতে। একসঙ্গে অনেক মামলা নিয়ে হিমশিম অবস্থার কথা সিবিআই সূত্রে স্বীকারও করে নেওয়া হয়েছে। তাদের বক্তব্য, গরু পাচার, কয়লা পাচার, ভোট-পরবর্তী হিংসা, নিয়োগ দুর্নীতির মামলার তদন্তের জন্য তদন্তকারীদের অনবরত কলকাতা ছেড়ে ছুটতে হচ্ছে জেলায়। অনেক সময় চলে যাচ্ছে তাতে। তাই এ বার রাজ্যের প্রায় সব জেলায় অস্থায়ী শিবির গড়ছে সিবিআই। কাজের সুবিধার্থে সেই সব শিবিরের প্রতিটিতে দুই কোম্পানি করে কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখার বন্দোবস্ত হচ্ছে।
পাহাড়প্রমাণ কাজ দ্রুত করার জন্যই জেলায় জেলায় অস্থায়ী শিবিরের ব্যবস্থা, এই যুক্তি অবহেলা করার মতো নয়। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে সেই সব শিবিরে আধাসেনা মোতায়েনের উদ্যোগকে ঘিরে। বিভিন্ন নির্বাচনে শান্তি রক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী নামানোর দাবি ওঠে এবং অনেক সময়েই ভোটে তাদের মোতায়েন করা হয়। বাংলায় পঞ্চায়েত ভোট অদূরেই। তার আগে বিভিন্ন তদন্তের নামে প্রতিটি জেলায় সিবিআই শিবিরে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের পিছনে অন্য কোনও রহস্য আছে কি না, সেই সন্দিগ্ধ জল্পনা চলছে বিভিন্ন শিবিরে।
সিবিআই জানিয়েছে, নির্বাচনোত্তর হিংসার মামলায় আগে থেকেই উত্তরবঙ্গ, পূর্ব মেদিনীপুর ও দুর্গাপুরে অস্থায়ী শিবির খুলে তদন্ত চলছে। সম্প্রতি বীরভূমের গরু পাচারের মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রতন কুঠি নামে একটি অতিথি নিবাসে অস্থায়ী শিবির করা হয়েছে। একই ভাবে অন্য সব জেলাতেও শিবির গড়া হচ্ছে তদন্তে গতি আনার জন্য। সিবিআইয়ের দাবি, কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে নির্বাচন-পরবর্তী হিংসার তদন্ত চলছে। সেই মামলা এবং নিয়োগ দুর্নীতি মামলার শিকড় ছড়িয়ে আছে সারা বাংলায়। তদন্তের ঢিমে গতি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছে আদালত। বুধবারেই এসএসসি বা স্কুল সার্ভিস কমিশনের বিরুদ্ধে নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় গঠিত ‘সিট’ বা স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম ভেঙে দিয়ে নতুন সিট গঠন করেছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
তদন্তকারীদের বক্তব্য, কলকাতার নিজাম প্যালেস এবং সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআইয়ের আঞ্চলিক অফিস থেকে তদন্তের তদারক করতে অনেক সময় চলে যাচ্ছে। সেই কারণে দ্রুত তদন্ত এবং পরিকাঠামোগত সমস্যার সমাধানে প্রতিটি জেলায় অস্থায়ী শিবির করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ওই সব অস্থায়ী শিবিরে তদন্তকারী অফিসারদের পাশাপাশি দুই কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সঙ্গে সমন্বয় গড়ে তোলা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সিবিআই। আগামী দু’মাসের মধ্যেই জেলায় জেলায় অস্থায়ী শিবির চালু করার তোড়জোড় চলছে বলে ওই কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সূত্রের খবর।