ফাইল চিত্র।
দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জেলে বসে লেখা সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনের চিঠি এখনই তাঁদের তদন্তের আওতায় পড়বে না বলে মনে করছেন সিবিআই কর্তারা।
তাঁদের দাবি, এই চিঠি (চিঠির যে প্রতিলিপি আনন্দবাজারের কাছে রয়েছে, যার সারবত্তা আনন্দবাজার যাচাই করেনি) সরাসরি সিবিআইকে লেখা হয়নি। ফলে, সংবাদ মাধ্যমে বেরোনো খবরের ভিত্তিতে তা ধর্তব্যের মধ্যে নিতে পারে না তদন্তকারী সংস্থা। তবে, প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে সরকারি ভাবে বিষয়টি তদন্ত করার জন্য সিবিআইকে অনুরোধ করলে তখন তা বিবেচনা করে দেখা হবে। এ ছাড়াও আদালত নির্দেশ দিলেও এ নিয়ে সিবিআই তদন্ত করতে পারে। তবে, তদন্ত করার আগে সরকারি ভাবে জেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জানতে চাওয়া হবে যে সত্যিই ওই চিঠি সুদীপ্ত লিখেছেন কিনা। প্রয়োজনে তাঁর হস্তাক্ষরও পরীক্ষা করে দেখা হবে।
চিঠির প্রতিলিপি অনুযায়ী, রাজ্যের চারটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার অভিযোগ করেছেন সুদীপ্ত। সিবিআই সূত্রের খবর, জেলে থাকার সময়ে বহু বার সুদীপ্তকে জেরা করেন তদন্তকারীরা। এ বারের চিঠিতে যে ভাবে টাকার নির্দিষ্ট অঙ্ক বলে দিয়ে সুদীপ্ত অভিযোগ করেছেন, সিবিআইয়ের সামনে কখনও তিনি সেই নির্দিষ্ট টাকার অঙ্ক বলেননি।
আরও পড়ুন: জেলে চার লগ্নিকর্তার চার রোজনামচা
আরও পড়ুন: ভোটার তালিকার কাজেও দোরগোড়ায় জেলা প্রশাসন
তা ছাড়াও এ বারের চিঠিতে এমন কিছু নেতার নাম রয়েছে, যা আগে জেরার সময়ে সুদীপ্ত তাঁদের জানাননি বলেও সিবিআইয়ের একটি অংশ জানিয়েছে। সিবিআই সূত্রের খবর, আদালতের নির্দেশে বা প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের অনুরোধে তারা যদি এই চিঠির সারবত্তা নিয়ে তদন্তেও নামে, তা হলে কীসের ভিত্তিতে সুদীপ্ত এই অভিযোগ করেছেন তা তাঁর কাছ থেকে জানতে চাওয়া হবে।
সিবিআই কর্তাদের দাবি, কারও নাম করে নির্দিষ্ট অঙ্ক বলে যদি অভিযোগ করা হয় তা হলে তার সপক্ষে কিছু তো প্রামাণ্য নথি দেখাতে হবে। এ ক্ষেত্রে সুদীপ্ত সেই টাকা কোথা থেকে পেলেন এবং কী ভাবে সেই টাকা সংশ্লিষ্ট নেতাদের কাছে পৌঁছে দিলেন সে বিষয়েও উঠে আসবে। যদি টাকা লেনদেনের কোনও সুস্পষ্ট নথি না থাকে তা হলে কোন ব্যক্তির মাধ্যমে তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে, সে প্রশ্নও উঠবে। সিবিআইয়ের এক কর্তার কথায়, “দুম করে অভিযোগ করে দিলেই তো হল না। প্রামাণ্য নথি থাকতে হবে।” আবার সাড়ে সাত বছর জেলে থাকার পরে আচমকা এখন এই চিঠি তিনি কেন লিখলেন, তার পিছনে কোনও কারণ আছে কিনা, বা এই চিঠি বাইরে এলে বিশেষ কারও কারও সুবিধা হবে কি না, তদন্ত হলে তাও খতিয়ে দেখা হবে বলে সিবিআইয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে।
তদন্তকারী সংস্থার এক শীর্ষ কর্তার বক্তব্য, তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ জেলে বসে যখন ৯১ পাতার চিঠি লিখেছিলেন, তখন তিনি বিচারাধীন বন্দি ছিলেন। রাজ্যের করা একটি মামলায় নিজের দোষ স্বীকার করে সুদীপ্ত এখন সাজাপ্রাপ্ত বন্দির তালিকায় চলে গিয়েছেন। যদিও তাঁর বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের করা মামলায় এখন বিচার শুরু হয়নি। কিন্তু, জেলের খাতায় সুদীপ্ত এখন সাজাপ্রাপ্ত বন্দি। ফলে, তাঁর করা অভিযোগের গুরুত্ব তুলনায় কম। দ্বিতীয়ত, এই অভিযোগ সুদীপ্ত কুণালের মতো সরাসরি আদালতে করেননি। ফলে, সে ক্ষেত্রেও গুরুত্ব কমে যেতে বাধ্য।
সম্প্রতি সিবিআইয়ের হাতে সারদা তদন্ত সংক্রান্ত একটি অডিয়ো টেপ এসেছে। তার ভিত্তিতে অবিলম্বে জেলে গিয়ে সুদীপ্ত ও তাঁর সহযোগী, এই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত দেবযানী মুখোপাধ্যায়কে জেরা করার জন্য সিবিআই আদালতের কাছ থেকে অনুমতি চেয়েছে। অনুমতি পেলে সেই জেরার সময়ে কি এই চিঠির প্রসঙ্গ উঠবে? সিবিআইয়ের যুক্তি, তার আগেই যদি এই বিষয় নিয়ে তদন্তের নির্দেশ বা অনুরোধ আসে তখন সেই প্রসঙ্গেও জেরা করা হতে পারে।