সিবিআই দফতর। —ফাইল চিত্র।
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির টাকা ব্যবসায় ঢেলেই গত এক দশকে বেহালার নির্মাণ ব্যবসায়ী সন্তু গঙ্গোপাধ্যায় ফুলেফেঁপে ওঠে বলে সিবিআই তদন্ত সূত্রে জানা গিয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, নিয়োগ দুর্নীতিতে ইডি ও সিবিআইয়ের মামলায় হেফাজতে থাকা শাসক দলের প্রাক্তন যুব নেতা শান্তনু বন্দোপাধ্যায় এবং কুন্তল ঘোষের মতো প্রভাবশালীদের যোগসাজশে সন্তুর রমরমা বাড়ে। ওই প্রভাবশালীদের মারফত অযোগ্যদের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার লুটের টাকা নিয়ে সন্তু নিজের ব্যবসায় ঢালে বলে জানা গিয়েছে। ২০১৪ সালের টেট ফেল করা প্রার্থীদের সন্তু চাকরি পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে বলেও তদন্তকারীদের সূত্রের খবর। সূত্রটি জানাচ্ছে, প্রভাবশালীদের ক্ষমতাবলে অতিরিক্ত একটি তালিকা তৈরি করে অযোগ্য প্রার্থীদের মোটা টাকার বিনিময়ে চাকরি পাওয়ার ব্যবস্থা করেছিল সন্তু। তদন্তকারীদের দাবি, নিয়োগের মামলায় জেল হেফাজতে থাকা প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, শাসক দলের প্রাক্তন দুই যুব নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কুন্তল ঘোষ ও সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওই নির্মাণ ব্যবসায়ীর ঘনিষ্ঠ ছিল। আর ওই প্রভাবশালী যোগে নিজে নিয়োগ দুর্নীতির একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেছিল সন্তু।সোমবার সন্তুকে গ্রেফতার করা হয়। মঙ্গলবার আদালতে পেশ করে তাকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে সিবিআই। পাশাপাশি ইডির মামলায় হাই কোর্ট থেকে সদ্য জামিনপ্রাপ্ত শান্তনুকেও মঙ্গলবার সিবিআই হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তদন্তকারীদের কথায়, নিয়োগ দুর্নীতিতে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর একাধিক মিডলম্যান বা যোগসূত্র ছিল। তাদের মধ্যে অন্যতম সন্তু। শান্তনু ও কুন্তল মারফত অযোগ্য প্রার্থীদের নামের তালিকা ও চাকরি বিক্রির টাকা সন্তুর কাছে পৌঁছত। সন্তু নামের তালিকা পার্থর কাছে পৌঁছে দিত। আর হাতে আসা টাকাটা সে নির্মাণ ব্যবসায় বিনিয়োগ করত বলে প্রাথমিক সূত্র পাওয়া গিয়েছে। প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতিতে প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থর সঙ্গে সন্তু, কুন্তল, শান্তনু ও সুজয়কৃষ্ণেরা একটি চক্রের শরিক ছিল বলে আদালতে নথি পেশ করেছে সিবিআই। তদন্তকারীদের অনুমান, নিয়োগ দুর্নীতির চাকরি বিক্রির পার্থর ভাগের কালো টাকার একটা অংশই সন্তু মারফত নির্মাণ ব্যবসায় বিনিয়োগ করা হয়েছে।তদন্তকারীদের কথায়, ‘‘অযোগ্য প্রার্থীদের কাছ থেকে চাকরি বিক্রির লক্ষ লক্ষ টাকা নেওয়া হত। তা থেকে নিজেদের ভাগের অংশ রেখে বাকি টাকা ও নামের তালিকা সন্তুর কাছে পাঠিয়ে দিত শান্তনু এবং কুন্তল।’’ তদন্তকারীদের দাবি, নিয়োগ দুর্নীতির মূলচক্রী প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। আর সন্তু ছিল পার্থের ঘনিষ্ঠ। তবে কুন্তল ও শান্তনুর মাধ্যমে টাকা নেওয়া ছাড়া নিজেও সরাসরি অযোগ্য প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদের নামের তালিকা সে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদে পাঠানোর ব্যবস্থা করত। তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, নিয়োগ দুর্নীতির চাকরি বিক্রির লুটের টাকা নিজের বা অন্য কার কার নির্মাণ ব্যবসায় সন্তু বিনিয়োগ করেছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তকারীদের কথায়, ‘‘শান্তনু ও সন্তুর যোগসাজসে প্রায় কয়েকশো অযোগ্য প্রার্থীকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছিল। তারা দু’জনেই এখন সিবিআইয়ের হেফাজতে রয়েছে। বুধবার ওই দু’জনকে আলাদা ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এর পরে দু’জনকে মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’’ প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় এখনও পর্যন্ত চার জন সাক্ষীর গোপন জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রের খবর। ধাপে ধাপে আরও ১০ জনের গোপন জবানবন্দি নেওয়া হবে বলে আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আদালত তা মঞ্জুর করেছে। টাকার বিনিময়ে চাকরি পাওয়া কয়েক জন অযোগ্য প্রার্থীও তাদের মধ্যে রয়েছেন। শান্তনু ও সন্তুকে জেরা করে উঠে আসা তথ্যের ভিত্তিতে পার্থকেও সংশোধনাগারে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।