প্রতীকী চিত্র।
নদিয়ায় মৃত কিশোরীর বাবা-মা, দুই জেঠা, দুই জেঠিমা ও এক জেঠতুতো দাদাকে কৃষ্ণনগরে পিডব্লিউডি বাংলোয় সিবিআইয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে বুধবারও জিজ্ঞাসাবাদ করল সিবিআই। মৃতার পরিবারকে ভয় দেখানো হয়েছিল কি না, তা হয়ে থাকলে কারা তাতে জড়িত ছিল এবং কারা কেন তড়িঘড়ি মৃতদেহ পুড়িয়ে প্রমাণ লোপাট করে দিল, সে ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করতে চাইছে তারা।
পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে মৃতার মা জোর করে মৃতদেহ পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেছিলেন। যদিও গ্রামের বাসিন্দাদের অনেকই দাবি করেছেন যে ওই পরিবারের ডাকেই পাড়াপড়শি শ্মশানে গিয়েছিলেন। তা বাদেও মৃতার বাবা-মা নানা সময়ে হুমকির কথা বলেছেন। স্থানীয় তৃণমূল নেতারা তা অস্বীকার করছেন ঠিকই, তবে গোটা পর্বে তাঁরা ওই পরিবারটির থেকে দূরত্ব রেখে চলেছেন। এক মাত্র জেলার সাংসদ মহুয়া মৈত্র ছাড়া শাসক দলের কোনও বড় নেতাও তাঁদের বাড়িতে যাননি।
কিশোরীর বাড়ি যেখানে, সেই এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলের চঞ্চল বিশ্বাসের দাবি, কিশোরী মারা যাওয়ার দিন দুই-তিন পর তিনি স্থানীয়দের কাছ থেকে জানতে পারেন যে রক্তক্ষরণের ফলে ‘স্ট্রোক’ হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। তখনই তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন, কেন তার মৃতদেহের ময়নাতদন্ত না-করিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হল। তবে এ নিয়ে আর তিনি বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করেননি। তাঁর বাড়ি মৃতার বাড়ি থেকে কিলোমিটার দুয়েক দূরে জানিয়ে তিনি বলেন, “৯ এপ্রিল দুপুরে থানার বড়বাবু আমাকে প্রথম ফোন করে অভিযোগের বিষয়টি জানান। আমি পরদিন সকালে সমরেন্দুর বাড়িতে গিয়ে তার সঙ্গে কথা বলি। যদিও সে দাবি করেছিল যে তার ছেলে মেয়েটির সঙ্গে কেবল মাত্র বিরিয়ানি খেয়েছিল এবং বিকেল ৫টার সময়ে চলেও গিয়েছিল। আমি বেশি কথা না বাড়িয়ে চলে আসি।” তাঁর দাবি, এই নিয়ে ওই এলাকায় নানা বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ায় তিনি মেয়েটির বাড়িতে যাননি। শুধু সাংসদ যে দিন পরিবারটির সঙ্গে দেখা করতে যান, তিনিও সঙ্গে গিয়েছিলেন।
একই দাবি করছেন তৃণমূলের স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী ও উপপ্রধান। তাঁদের দুজনেরই বাড়ি কিশোরীর বাড়ি থেকে দেড়-দুই কিলোমিটার দূরে। উপপ্রধান প্রহ্লাদ ঘোষ বলছেন, “সাংসদ যে দিন এসেছিলেন সে দিনই ওদের বাড়িতে যাই। পরেও এক বার গিয়েছিলাম, কিন্তু কারও দেখা পাইনি।’’ চাইল্ড লাইনের হস্তক্ষেপে ঘটনার পাঁচ দিন পরে পুলিশে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। প্রহ্লাদের দাবি, “আমি সে দিনই প্রথম বিষয়টি জানতে পারি। তা-ও খবর দেখে। আমার সঙ্গে সমর গয়ালির কোনও কথা হয়নি।” পঞ্চায়েত প্রধান হেমলতা বিশ্বাসের স্বামী দিলীপ বিশ্বাসও বলছেন, “ওই এলাকার সদস্য চঞ্চল বিশ্বাস আমাকে প্রথম বিষয়টি জানান। সাংসদের সঙ্গে গিয়েছিলাম। তার আগে এবং পরেও এক দিন যাই, কিন্তু বাড়িতে কেউ ছিল না। পুলিশ তাদের নিয়ে গিয়েছিল।”
স্থানীয় বাসিন্দা তথা পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সদস্য শিপ্রা দাসের ভাই সুদীপ দাসের বিয়ে হয়েছে সমরেন্দুর মেয়ের সঙ্গে। ফলে অনেকেই ঘুরিয়ে তাঁর দিকেও আঙুল তুলছেন। বিজেপির দাবি, তিনিই রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টায় অন্যতম কান্ডারি ছিলেন। যদিও সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে শিপ্রার দাবি, “আমি ১০ এপ্রিল বিষয়টা প্রথম শুনি। আমার ছেলে টিভিতে খবর দেখে আমাকে বলে। তার পর থেকে সমরবাবুর সঙ্গে আমার কোনও যোগাযোগ নেই।” তাঁর ব্যাখ্যা,“অন্য রকম বিতর্ক হতে পারে বলে আমি মেয়েটার বাড়ি যাইনি। শুধু মহুয়া মৈত্রের সঙ্গে এক বার গিয়েছি। আমিও চাই, প্রকৃত দোষীরা সাজা পাক।”
স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক আশীস বিশ্বাসের পাল্টা দাবি, “ওরা তো অস্বীকার করবেই। কিন্তু আমাদের কাছে তথ্য আছে যে সমর গয়ালিকে বাঁচাতে তৃণমূলের নেতা-জনপ্রতিধিরা সক্রিয় হয়েছিল।” তবে তিনিও জানিয়েছেন, চাইন্ড লাইনের লোকজন পরিবারটিকে নিয়ে গিয়ে থানায় অভিযোগ করানোর পরেই তিনি প্রথম বিষয়টি জানতে পারেন। বিধায়কের বিশ্বাস, “সিবিআই তদন্ত করে সেই সত্য ঠিকই প্রকাশ করবে।”