সারদা-কাণ্ডে সিবিআইয়ের তদন্তে সহযোগিতা করতে রাজ্য সরকার প্রস্তুত। দাবি করলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আবার একই সঙ্গে তৃণমূল নেত্রী মমতার হুঁশিয়ারি, “রাজনৈতিক প্রতিহিংসা দেখিয়ে লাভ নেই! চিট ফান্ডের টাকায় আমাদের করে খেতে হয় না। আসল অপরাধীদের আড়াল করবেন না। মনে রাখবেন, আমরা কিন্তু মরে যাইনি!” সিবিআইয়ের তদন্তে যে ভাবে সারদার সঙ্গে তৃণমূলের একাধিক নেতা-মন্ত্রীর যোগসাজশ উঠে আসছে, তাতে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্বেগই বৃহস্পতিবার তাঁর মন্তব্যে ধরা পড়েছে বলে বিরোধী শিবির মনে করছে।
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) প্রতিষ্ঠা দিবসে এ দিন মুখ্যমন্ত্রী ফের দাবি করেছেন, তিনি সারদার ব্যাপারে কিছুই জানতেন না। জানতে পারার পরে তাঁর প্রশাসন কাশ্মীর থেকে সারদা-কর্তাকে ধরে এনেছিল। আমানতকারীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকার তহবিলও খুলেছিল। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “সিবিআই নিয়েছে (তদন্ত), ভাল কথা! ভাল করে তদন্ত করুক। আমরা সহযোগিতা করব। আমানতকারীরা যাতে টাকা ফেরত পায়, সেটা তোমরাই দেখবে। আমাদের এখন তো কিছু করার নেই।”
মুখ্যমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে কংগ্রেসের আইনজীবী-নেতা অরুণাভ ঘোষের মন্তব্য, “সিবিআই তদন্ত নিয়ে উনি চাপে আছেন। তাতে যা বলছেন, তার মধ্যে নানা স্ব-বিরোধিতা আছে। সিবিআই তদন্ত করছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে। সিবিআই একটা তদন্তকারী সংস্থা। টাকা ফেরানো তো তার দায়িত্ব নয়। তার মানে কি মুখ্যমন্ত্রী সুপ্রিম কোর্টকেই টাকা দিতে বলছেন?” একই সঙ্গে সহযোগিতার কথা এবং ‘মরে যাইনি’ বলে সিবিআইকে হুঁশিয়ারির প্রসঙ্গে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, “রাজ্য সরকার কেমন সহযোগিতা করছে, প্রতিদিন বোঝা যাচ্ছে!”
সহযোগিতা না-করলে রাজনৈতিক নেতাদেরও যে গ্রেফতারির মুখে পড়তে হবে, এ দিনই কিন্তু তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন স্বয়ং সিবিআই অধিকর্তা রঞ্জিৎ সিনহা। তিনি স্পষ্টই বলেছেন, “যেখানে সন্দেহের যুক্তিযুক্ত কারণ রয়েছে, সেখানেই তল্লাশি চালাচ্ছি। কেউ যদি সহযোগিতা না করেন, তা তিনি রাজনৈতিক নেতাই হোন বা অন্য কেউ, তাঁকে গ্রেফতার করব।”
এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নরমে-গরমে সিবিআই নিয়ে মন্তব্য করলেও অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ অবশ্য কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, “আমরাই দুই বছর আগে চিট ফান্ডগুলির বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত চেয়েছিলাম। পশ্চিমবঙ্গ বরং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরে বাধ্য হয়ে সিবিআই তদন্ত করায়। ভুয়ো অর্থলগ্নি সংস্থাগুলি বহু মানুষকে ঠকিয়েছে। তাদের শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। দোষীদের খুঁজে বার করুক সিবিআই।”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা কিছু মন্তব্য করেন সারদা-কাণ্ডের তদন্ত এবং জিজ্ঞাসাবাদ নিয়েও। যেমন, তাঁর প্রশ্ন অপর্ণা সেনকে কেন ডাকা হল? মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “রাজনৈতিক বিরোধ থাকতে পারে। কিন্তু উনি তো চাকরি করতেন। তাঁর কি দোষ?” সাংবাদিকদেরই বা দোষ কোথায়, প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ছাত্র-সমাবেশের মঞ্চ থেকেই স্পষ্ট জানিয়েছেন, সারদা-কাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পরে সাংবাদিকদের মুখ চেয়ে চ্যানেল টেন চালাতেন তৃণমূল নেতা সমীর (বুয়া) চক্রবর্তী। বলেছেন, “চ্যানেল টেন বুয়া চালাত। এখন বন্ধ।” তারা চ্যানেলের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে টাকা দেওয়া হতো, তা-ও বলেছেন। যা থেকে বিরোধীদের কটাক্ষ, সারদার সম্পত্তির ম্যানেজার যে শাসক দল হয়ে উঠেছিল, মুখ্যমন্ত্রীর কথাতেই তো সে সব স্পষ্ট! কয়েক দিন আগে সারদা-কর্তা সুদীপ্ত সেনও বলেছিলেন, তাঁর সংস্থার অনেক সম্পত্তিরই হাতবদল হয়ে গিয়েছে।
বিরোধীরা প্রত্যাশিত ভাবেই সরকার তথা শাসক দলের উপরে চাপ সৃষ্টির চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নানের দাবি, “অনেক রথী-মহারথী জড়িত বলে আগেই অভিযোগ করেছিলাম। বিধাননগরের পুলিশ তথ্য লোপাট করেছে। তাঁদেরও গ্রেফতার করতে হবে।” রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি রাহুল সিংহের বক্তব্য, ‘‘যারা গরিব মানুষকে ঠকিয়েছে, তাদের শাস্তি হোক।”