সিবিআই আদালতে তাপস পাল। মঙ্গলবার ভুবনেশ্বরে। — নিজস্ব চিত্র
‘প্রভাবশালী’দের নাম ফাঁস করার ধার-কাছ দিয়েও গেলেন না। বরং এজলাসে দাঁড়িয়ে বিচারককে এক এক করে জানালেন, তিনি কতটা ‘অসুস্থ।’ মক্কেলের সিবিআই হেফাজত রুখতে ব্যাট ধরলেন তাঁর কৌঁসুলিও।
তবু শেষরক্ষা হল না। মঙ্গলবার ভুবনেশ্বরের বিশেষ আদালত তৃণমূল সাংসদ তাপস পালকে ফের তিন দিনের জন্য সিবিআই হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। রোজ ভ্যালি-কাণ্ডে কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো তাঁকে গ্রেফতার করেছে গত শুক্রবার।
তবে দাদার কীর্তির নায়ক এ দিন কথা রাখেননি। সোমবার তিনি বলেছিলেন, মঙ্গলবার আদালতে সওয়াল শুরুর আগেই রোজ ভ্যালি-কাণ্ডে জড়িত ‘প্রভাবশালী’দের নাম প্রকাশ্যে আনবেন। এ দিন তেমন কোনও পথে তিনি পা বাড়াননি।
গত শুক্রবার কলকাতার সিজিও কমপ্লেক্সের অফিসে দীর্ঘ জেরা শেষে গ্রেফতারের পরে সে দিনই রাতে সিবিআই তাপসকে উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে ওড়িশা রাজধানীতে। কারণ, রোজ ভ্যালি সংক্রান্ত মামলাটি রুজু হয়েছে সেখানেই। শনিবার তাঁকে ভুবনেশ্বরের কোর্টে তোলা হলে বিচারক তিন দিনের সিবিআই হেফাজত দেন। সেই তিন দিনে তাপসকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে বহু তথ্য উঠে এসেছে বলে তদন্তকারীদের দাবি।
প্রথম দফার হেফাজতের মেয়াদ ফুরনোর পরে এ দিন অভিযুক্ত সাংসদকে ফের আদালতে পেশ করা হয়। এ দিন দুপুর তিনটে নাগাদ তাপসকে ভুবনেশ্বর বিশেষ সিবিআই কোর্টে তুলে তদন্তকারীরা চার দিনের হেফাজত চেয়ে আবেদন করেছিলেন। বিচারক প্রশান্ত মিশ্র তিন দিনের হেফাজত মঞ্জুর করেন।
এবং এ ক্ষেত্রে ‘অসুস্থতা’র যুক্তি ধোপে টেকেনি। বস্তুত এ দিন শুনানি শুরুর আগে থেকেই নিজের শারীরিক অবস্থা নিয়ে সরব ছিলেন তাপস। কোর্ট চত্বরে এসে সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আমি অসুস্থ। হাঁটতে খুব কষ্ট হচ্ছে।’’ এর পরে মাথার টুপি খুলে এজলাসে ঢুকে যান। বিচারক প্রশান্ত মিশ্র তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘সিবিআই হেফাজতে কেমন রয়েছেন?’’ তাপস হাত জোড় করে বলেন, ‘‘হুজুর, আমি খুবই অসুস্থ। ক’বছর আগে হুগলির পাণ্ডুয়ায় এক পথ দুর্ঘটনায় পায়ের দু’টো হাড়ে চিড় ধরেছিল। এখনও যন্ত্রণা হয়। অনেক ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চলি।’’ বিচারক তাপসের কাছে জানতে চান, সিবিআই হেফাজতে তাঁর স্বাস্থ্যের দিকে ঠিকঠাক নজর দেওয়া হচ্ছে? সাংসদ জবাব দেন, ‘‘হ্যাঁ হুজুর। দেওয়া হচ্ছে।’’
তাপসের শারীরিক পরিস্থিতিকে বর্ম করে সিবিআই হেফাজত ঠেকাতে তাঁর কৌঁসুলি সুচিত মহান্তিও চেষ্টার কসুর করেননি। ‘‘সাংসদের শরীর ভাল নয়। ডায়াবেটিসের পেশেন্ট। ইনসুলিন চলছে। তার উপরে পায়ে চোট।’’— সওয়ালে বলেন তিনি। কৌঁসুলির দাবি, ‘‘আমার মক্কেলকে জিজ্ঞাসাবাদের নাম করে ডেকে এনে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওঁর রোজ ভ্যালি থেকে টাকা আত্মসাতের কোনও দরকার ছিল না। হেফাজতে রাখার কোনও প্রয়োজন নেই।’’ অসৎ উদ্দেশ্য থাকলে তাপস পাল রোজ ভ্যালির ডিরেক্টর পদ ছাড়তেন না বলেও মন্তব্য করেন তাঁর কৌঁসুলি।
অন্য দিকে পাল্টা যুক্তি সাজায় সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার কৌঁসুলিরা সওয়ালে জানান, সাংসদকে জেরা চলছে। রোজ ভ্যালির আর্থিক প্রতারণার শিকড় অনেক গভীরে। সাংসদের শরীর ও স্বাস্থ্যের দিকে নজর রেখে তদন্তের তাগিদে ফের তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি। শুনানি চলাকালীন কাঠগ়ড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা তাপসের মাথা ঘুরে যায় এক বার। এ দিন বিকেল পাঁচটা নাগাদ তাপসকে আদালত থেকে ফের ভুবনেশ্বর নয়াপল্লির সিবিআই অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী নন্দিনী ও মেয়ে সোহিনী।