গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
মনিটর বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।অথচ কম্পিউটারের মূল অংশ অর্থাৎ সিপিইউ নেই বাজেয়াপ্ত জিনিসের তালিকায়! বিধাননগর পুলিশ এবং বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)-এর কাছে বিভিন্ন সময়ে সারদা সংক্রান্ত ৩৬৭টি নথি জমা পড়ে। সেই নথিও বিধাননগরের তৎকালীন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার তুলে দেননি সিবিআইয়ের হাতে! কলকাতা হাইকোর্টে এ বার তাঁর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগই তুলল সিবিআই।
সারদা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাজীব কুমারকে নোটিস পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। সেই নোটিসের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টে মামলা করেছেন কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার রাজীব। বিচারপতি মধুমতি মিত্রের এজলাসে সেই মামলার শুনানি চলাকালীনসিবিআই আইনজীবী ওয়াই জে দস্তুরমঙ্গলবার রাজীবের বিরুদ্ধে ওই সমস্ত অভিযোগ তুলে জানান, এ সব থেকেই স্পষ্ট, তথ্য বিকৃত করা হয়েছে। একই সঙ্গে তিনি জানান, বহু তথ্যই সিবিআইয়ের কাছে গোপন করেছে বিধাননগর পুলিশ এবং সেখানকার তৎকালীন কমিশনার রাজীব।
২০১৩ সালে সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেন ফেরার থাকাকালীন এক লগ্নিকারীর বিধাননগর কমিশনারেটে করা একটি অভিযোগের প্রসঙ্গ এ দিন আদালতে তোলেন দস্তুর। তিনি আদালতকে জানান, ওই অভিযোগে একাধিক ব্যক্তির নাম ছিল। পরবর্তীতে সুদীপ্ত সেন জেরার সময় সিবিআইয়ের কাছে তিনশোরও বেশি নথির কথা জানান, যা বিধাননগর পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছিল। সেই নথি বা তথ্য সিবিআইকে দেয়নি রাজ্য সরকার গঠিত সিট।সিবিআই আইনজীবী এ দিন সওয়াল করেন, তদন্তকারী আধিকারিকরা বিধাননগর পুলিশ এবং সিটের বাজেয়াপ্ত করা নথি এবং জিনিসপত্রের তালিকায় কম্পিউটারের একাধিক মনিটরের উল্লেখ পান। অথচ সেই তালিকায় কোনওসিপিইউয়ের উল্লেখ নেই!
রাজ্যের শীর্ষ ওই আইপিএসকে আক্রমণ করে এ দিন আদালতে সিবিআই আইনজীবী বলেন,‘‘সিট বলেছে তারা অনেককে গ্রেফতার করেছে। কিন্তু কাদের? ছোটখাটো লেনদেন করা চুনোপুঁটিদের গ্রেফতার করেছে সিট।” সিবিআইয়ের তরফে এ দিন আদালতকে দস্তুর এ দিন বলেন, ‘‘এ বছর জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে বিধাননগর পুলিশ ২৭ হাজার পৃষ্ঠার নথি পাঠায় সিবিআইকে। লাল, হলুদ রঙের ওই ফাইলে থাকা নথির কোনও উল্লেখ নেই বিধাননগর পুলিশ বা সিটের বাজেয়াপ্ত করা নথি এবং জিনিসপত্রের তালিকায়। তা হলে আরও কত এ রকম নথি রয়েছে যার আদৌ কোনও তালিকা করেনি পুলিশ!”
সিবিআই আইনজীবী এখানেই থেমে থাকেননি। তিনি শীর্ষ আদালতে রাজীব কুমারের দেওয়া হলফনামার প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ‘‘সেখানে রাজীব কুমার দাবি করেছিলেন যে, তিনি ওই মামলার বিষয়ে কিছুই জানেন না। সারদা-কাণ্ডেবিধাননগর পুলিশের হাতে বাজেয়াপ্ত হওয়া গাড়িগুলিই কেবল তাঁর হেফাজতে ছিল। অথচ সেই রাজীব কুমারকেই যখন রোজভ্যালি মামলায় প্রশ্ন করা হয়, কেন আপনি চিটফান্ড মামলায় রাজ্যের হয়ে বার বার সুপ্রিম কোর্টে ছুটে গিয়েছেন? জবাবে তিনি জানিয়েছিলেন, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে মামলা তদারকি করার দায়িত্ব তাঁকে দেওয়া হয়েছে।’’ দস্তুর প্রশ্ন তোলেন, ‘‘যিনি ওই মামলা সম্পর্কে কিছুই জানেন না, তাঁকে রাজ্য সরকার কী ভাবে তদারকির দায়িত্ব দেয়?’’
আরও পড়ুন: বোরখায় সন্দেহ! ধর্ম পরিচয় জেনেই পুণেতে চিকিৎসককে আক্রমণ মার্কিন নাগরিকের
সোমবার সিবিআইয়ের পক্ষে সওয়াল করতে নেমে দস্তুর প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘‘সারদা মামলায় অভিযুক্ত নেতা-মন্ত্রীদের যখন গ্রেফতার করা হয়েছিল, মুখ্যমন্ত্রী তখন ধর্নায় বসেননি। কিন্তু রাজীবের বাড়িতে সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা হাজির হওয়ার পরে মুখ্যমন্ত্রী ধর্নায় বসে পড়েন। কেন?’’ এ দিন তিনি বলেন, ‘‘১৯ অক্টোবর, ২০১৭, রাজীব কুমারকে নোটিস পাঠানো হলে তিনি পুজোর সময়ে আইনশৃঙ্খলার দোহাই দিয়ে হাজিরা এড়ান। জানিয়েছিলেন, তাঁর কাছে তদন্তকারীদের পাঠাতে। যখন তদন্তকারীরা তাঁর বাড়ি গেলেন তখন তাঁদের বাধা দেওয়া হল, ঢুকতেই দেওয়া হল না।’’ এর পরেই দস্তুরের অভিযোগ, ‘‘রাজীব কুমার গোটা তদন্ত প্রক্রিয়াতেই সিবিআইয়ের সঙ্গে অসহযোগিতা করছেন।’’
এ দিনের শুনানি শেষে রাজীব কুমারের গ্রেফতারির বিরুদ্ধে ‘রক্ষা কবচ’-এর মেয়াদ বুধবার পর্যন্ত বাড়িয়েছেন বিচারপতি মিত্র।