ব্যাঙ্কশাল কোর্ট চত্বরে ধৃত দুই জেএমবি জঙ্গি। —নিজস্ব চিত্র।
বিভিন্ন মামলায় সাজা হওয়ায় তারা আছে বাংলাদেশের জেলে। জামাত-উল-মুজাহিদিন বাংলাদেশ বা জেএমবি-র এমনই কয়েক জন জঙ্গি নেতার নির্দেশে এ-পার বাংলায় সংগঠনের জাল বিস্তার করা হচ্ছে বলে কলকাতা পুলিশের এসটিএফের তদন্তকারী অফিসারদের দাবি।
এসটিএফ সূত্রের খবর, রবিবার হরিদেবপুরে ধৃত তিন জেএমবি জঙ্গির ডায়েরি থেকে জেএমবি নেতা নাহিদ তসনিম, জেএমবি তথা হুজি নেতা আল আমিনের নম্বর পাওয়া গিয়েছে। ওই দুই জঙ্গি নেতা এখন বাংলাদেশের জেলে আছে। ভারতে ঢুকে জঙ্গি কার্যকলাপ চালানোর পিছনে তাদের মদত ও ছক থাকতে পারে বলে মনে করছেন এসটিএফের কর্তারা।
রবিবার ধৃত জঙ্গি নাজিউর রহমান ওরফে জয়রাম ব্যাপারী, রবিউল ইসলাম, মিকাইল খান ওরফে সাবিরকে জেরা করে এমনই তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। ফেরিওয়ালার ভেক ধরে ওই তিন জন কয়েক বছর ধরে হরিদেবপুরে বসবাস করছিল। তদন্তকারীদের অনুমান, এর আগেও জঙ্গি গোষ্ঠীর কেউ কেউ হরিদেবপুর অঞ্চলে থেকে গিয়েছে। গত বছর লকডাউনের সময় কিছু জেএমবি জঙ্গি কলকাতার উপকণ্ঠে ঘাঁটি গেড়ে থাকতে শুরু করেছিল। জেরায় জানা গিয়েছে, নাজিউরের মতো বেশ কিছু জঙ্গি বাংলাদেশের বিভিন্ন জেল থেকে জামিন পেয়েছে। তাদের প্রাথমিক তালিকা পেয়েছে এসটিএফ। অন্য কয়েকটি জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গেও ধৃতদের প্রত্যক্ষ যোগ ছিল বলে তদন্তকারী গোয়েন্দাদের সন্দেহ।
ধৃতদের জেরা করে গোয়েন্দারা জেনেছেন, জেহাদি কার্যকলাপের ব্যাপারে কলকাতা ও শহরতলির কিছু এলাকায় যুবক-যুবতীদের মগজ ধোলাই শুরু হয়েছিল। বোমা তৈরির প্রশিক্ষণে যুক্ত করা হচ্ছিল যুবতীদেরও। পুলিশ জানায়, বড়িশার এক বৃদ্ধের ভোটার কার্ডের ফোটোকপি থেকেই জাল ভোটার কার্ড তৈরি করে নাজিউর। সাহায্য করেছিল সেলিম ও শাকিল নামে দুই যুবক। নাজিউর আড়াই বছর ধরে কলকাতায় আছে। এর মধ্যে সে বেশ কয়েক বার বাংলাদেশে গিয়ে থাকতে পারে বলেও তদন্তকারীদের অনুমান। তাঁদের সন্দেহ, সেলিম বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে পারে। জেরায় জানা গিয়েছে, ওরা বেশ কয়েক দিন ধরেই রাজ্যের বাইরে যাওয়ার ছক কষছিল। কেন বাইরে যেতে চাইছিল, ধৃতদের জেরা করে তা জানার চেষ্টা চলছে।
তদন্তকারীরা জানান, খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের পরে এ-পার বাংলায় জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) এবং বাংলাদেশে সেখানকার সন্ত্রাস দমন শাখার তল্লাশি অভিযান জেএমবি জঙ্গিদের এক রকম ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছিল। তাদের বহু বড় মাথা গা-ঢাকা দিতে বাধ্য হয়। জেএমবি-র অধিকাংশ বড় নেতাই এখন জেলে। তবে বাংলাদেশে ও সীমান্ত এলাকায় জেএমবি নতুন করে সংঘটিত হওয়ার চেষ্টা করছে বলে গোয়েন্দাদের সন্দেহ। তাঁদের দাবি, এ-পার বাংলায় বোমা বানিয়ে, নাশকতা ঘটিয়ে বাংলাদেশের জেলে থাকা জঙ্গি নেতারা নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। তাদের নির্দেশে তহবিল গড়ে জঙ্গি সংগঠন বাড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে।
হরিদেবপুরে ধৃতদের বিষয়ে প্রাথমিক খোঁজখবর নিয়েছে এনআইএ। এক এনআইএ-কর্তা বলেন, ‘‘কলকাতা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। ওদের হেফাজতে থাকা ওই তিন জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে আমরা আগ্রহী। কলকাতা পুলিশের দেওয়া সময় অনুযায়ী ধৃতদের জেরা করব।’’
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এ দিন বর্ধমানে বলেন, ‘‘বাংলা হল জঙ্গিদের গড়। মণিপুর, পঞ্জাব, এমনকি বাংলাদেশ থেকে জঙ্গিরা তাড়া খেলে এখানেই ঢুকে পড়ে। ‘দিদিমণি’ তাদের খুব ভাল শেল্টার। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোথায় নেমেছে, এটা তার প্রমাণ।’’ তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘এখানে ধরা পড়ছে বলে তো পুলিশের প্রশংসা করা উচিত। লখনউতেও তো জঙ্গি ধরা পড়ছে। তা হলে বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশ জঙ্গিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে বলে ধরে নিতে হবে?’’