road blocked

Road Blockade: জল শেষ, বিস্কুটও! ১১ ঘণ্টা অবরোধে গরমে ছটফট করছেন গাড়ির মধ্যে ক্যানসার রোগী

সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া অবরোধ উঠল রাত ৯টা নাগাদ। মোট ১১ ঘণ্টার অবরোধ। প্রশ্ন উঠেছে, কী ভাবে শুরু হল এই অবরোধ? কারা অবরোধের পিছনে?

Advertisement

সুব্রত জানা

ডোমজুড় শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০২২ ০৬:০৫
Share:

ভোগান্তি: অবরোধে আটকে সারি সারি গাড়ি। ছবি: সুব্রত জানা

মুমূর্ষু রোগী ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে রয়েছেন অ্যাম্বুল্যান্সে, গরমে ছটফট করছে গাড়ির মধ্যে থাকা শিশুরা, এক ফোঁটা জলের খোঁজ করছেন বৃদ্ধ বাসযাত্রী— বৃহস্পতিবার জাতীয় সড়কে ১১ ঘণ্টার অবরোধে এ রকম বহু ঘটনার সাক্ষী হয়ে রইল হাওড়ার ডোমজুড়ের অঙ্কুরহাটি এলাকা। সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া অবরোধ উঠল রাত ৯টা নাগাদ। যে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে এই অবরোধ হয়েছে, এর প্রভাব তো সেখানে পড়েছেই, কোলাঘাটের দিকে সড়কের প্রায় ২০ কিলোমিটার অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। পুবে তা দ্বিতীয় হুগলি সেতু ছাপিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে কলকাতায়। মুখ্যমন্ত্রী নিজে এই অবরোধ তোলার জন্য বিকেলে অনুরোধ করেছেন। তার পরেও জট খুলতে রাত ৯টা বেজে গিয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বুঝিয়ে রাতে অবরোধ তোলা হয়।

Advertisement

অবরোধে অতিষ্ঠ লোকজনেরা দিনভর দোষারোপ করেছেন পুলিশ-প্রশাসনকে। অভিযোগ, পুলিশ এ দিন কার্যত দর্শকের ভূমিকা নিয়েছিল। এ দিন সকাল থেকে গরমের সঙ্গে আপেক্ষিক আর্দ্রতাও ছিল যথেষ্ট। ফলে বেলা যত গড়িয়েছে, ততই অসহনীয় গুমোটে প্রাণান্তকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তার মধ্যেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে রয়েছেন অফিসযাত্রী, আনাজ ব্যবসায়ী থেকে ছোট শিশুরা। আটকে পড়ে এক ক্যানসার রোগীর অ্যাম্বুল্যান্সও। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রাস্তার ধারের দোকানগুলিতে রসদে ঘাটতি দেখা দেয়। ফলে খাওয়াদাওয়া তো দূর, দুপুর থেকেই সঙ্গের শিশুর জন্য এক বোতল জল বা একটি বিস্কুটের খোঁজে গিয়ে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে অনেককে।

প্রশ্ন উঠেছে, কী ভাবে শুরু হল এই অবরোধ? কারা অবরোধের পিছনে? পুলিশ প্রশাসন সূত্রের খবর, বিজেপির সাসপেন্ড হওয়া নেত্রী নূপুর শর্মার একটি বক্তব্যের প্রতিবাদে সকাল ১০টা নাগাদ আচমকা কয়েক শো যুবক রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ শুরু করেন। স্থান, কোনা এক্সপ্রেসওয়ে যেখানে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে মিশেছে, তার থেকে কোলাঘাটের দিকে ৩ কিলোমিটার দূরের একটি এলাকা। দ্রুত যানজট ছড়াতে থাকে।

Advertisement

অবরোধের এলাকাটি হাওড়া সিটি পুলিশের অধীনে হলেও যানজট ছড়িয়ে পড়ে হাওড়া গ্রামীণ এলাকায়। হাওড়া সিটি পুলিশ ও জেলা পুলিশের মধ্যে দায় ঠেলাঠেলি শুরু হয়। পরে হাওড়া পুলিশ কমিশনার সি সুধাকর বলেন, ‘‘দুপুর থেকেই অবরোধ তোলার চেষ্টা করেছি। কিন্তু প্রচুর যানবাহন ও যাত্রী রাস্তায় থাকায় সতর্ক ছিলাম। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি যাতে না হয়, সেই কথা মাথায় রেখে পুলিশ জোর করে অবরোধকারীদের সরায়নি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘রাত ৮টার পরে গোটা জাতীয় সড়ক থেকে অবরোধ সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ যদিও আমজনতার বক্তব্য, অবরোধ উঠেছে রাত ৯টায়।

হাওড়ায় গ্রামীণ জেলার ট্র্যাফিক পুলিশ অবশ্য বিকেলের দিকে পাঁচলা ও উলুবেড়িয়া থেকে গাড়িগুলিকে আমতা হয়ে হুগলির দিকে পাঠিয়ে দিতে শুরু করে। হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়া সদর সিটি পুলিশের এলাকায়। সেই রেশ হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশ এলাকায় পড়ে। তখন গাড়িগুলিকে অন্যত্র ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। তাতে যানজট কিছুটা কমে।’’ এক ট্রাকচালক এর মধ্যেই বলেন, ‘‘পুলিশ অন্যত্র গাড়ি ঘুরিয়ে দিচ্ছে, সেটা ভাল কথা। কিন্তু তাতে জ্বালানি বেশি খরচ হচ্ছে। পুলিশ প্রথমেই অবরোধ তুলে দিলে, মানুষকে ভোগান্তির মুখে পড়তে হত না।’’ কেমন সে ভোগান্তি?

পঙ্কজ মাইতি নামে এক ট্রাকচালক বলেন, ‘‘কাঁচা আনাজ নিয়ে ধুলাগড় আনাজ বাজারে যাওয়ার কথা ছিল বেলা ১২টার মধ্যে। এক কিলোমিটার আগে গাড়ি আটকে যায়। বিকেলেও বাজারে পৌঁছতে পারলাম না। লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হল।’’ দূরপাল্লার বাস থেকে নেমে এক দম্পতি ব্যাগ ঝুলিয়ে, শিশুকে কোলে নিয়ে হাঁটতে শুরু করলেন। যাবেন বেহালায়। আবার ঠাকুরপুকুর থেকে ঘরে ফিরছিলেন এক ক্যানসার রোগী। তাঁর অ্যাম্বুল্যান্স ঠায় দাঁড়িয়ে। ভিতরে হাতপাখায় হাওয়া করছেন আত্মীয়।

অবরোধ শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে জল-খাবার শেষ হয়ে যায় গোটা এলাকায়। সেটুকু জোগাড় করে দেওয়ার পর্যন্ত লোক মেলেনি। মেদিনীপুরের বাড়ি থেকে টালিগঞ্জে ফিরছিলেন দেবজ্যোতি সান্যাল। বলেন, ‘‘সন্ধ্যায় ঝড়বৃষ্টিতে কিছুটা স্বস্তি মিললেও সেটা আর এক ভোগান্তি। কী ভাবে যে রয়েছি, বলে বোঝাতে পারব না। মেয়েদের শৌচাগারে যাওয়ার উপায় নেই। পুলিশ কেন ওঠাতে পারল না অবরোধ?’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement