—ফাইল চিত্র।
অর্থ লগ্নি সংস্থা সারদার আর্থিক কেলেঙ্কারিতে সংস্থার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন এবং অন্যতম ডিরেক্টর দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের ফোনের কল ডিটেলস রেকর্ড (সিডিআর) লোপাট তো হয়েছেই। সিট বা বিশেষ তদন্ত দলের হেফাজতে থাকাকালীন সুদীপ্ত ও দেবযানীকে জেরার ভিডিয়ো রেকর্ডিংয়ের সিডি-ও পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, কুণাল ঘোষকে জেরার সিডি এবং সিট-কে দেওয়া তাঁর সিডি কোথায় গেল, সেটাও রহস্য!
সুদীপ্ত, দেবযানী এবং তাঁদের গাড়িচালক অরবিন্দকুমার চৌহানকে ২০১৩ সালের ২৩ এপ্রিল কাশ্মীরের সোনমার্গে গ্রেফতার করেন সিটের গোয়েন্দারা। পরে গ্রেফতার করা হয় কুণালকে। কাশ্মীর থেকে কলকাতায় এনে সুদীপ্ত, দেবযানী ও অরবিন্দকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে সিট। সেই জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব ভিডিয়োয় তুলে রাখা হয়েছিল বলে সিবিআই-কে জানান সিটের তদন্তকারীদের একাংশ। সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা জানান, কিন্তু সেই সিডি-র কোনও হদিস পাওয়া যাচ্ছে না।
সিবিআই সূত্রের খবর, শিলংয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সময় সিটের অন্যতম কর্তা রাজীব কুমারের মুখোমুখি বসানো হয়েছিল কুণালকে। রাজীবের সামনেই কুণাল বলেন, ‘‘আমি সারদার কয়েকটি আর্থিক দুর্নীতির নথি ও তিনটি সিডি জিজ্ঞাসাবাদের সময় সিটের তদন্তকারীদের হাতে তুলে দিয়েছিলাম। সিডি ও নথি দেওয়া-নেওয়ার বিষয়টি ভিডিয়োয় রেকর্ডিং করা হয়েছিল। এখন সিটের তদন্তকারীরা ওই সিডি ও নথির কথা অস্বীকার করছেন।’’ সিবিআইয়ের এক কর্তা জানান, তার পরেই রাজীবকে সিডি-র বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি ওই সিডি-র বিষয় তিনি কিছুই জানি না। তৎকালীন গোয়েন্দা-প্রধান অর্ণব ঘোষ এবং নিচু তলার অফিসারেরা এই বিষয়ে বলতে পারবেন।’
সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা জানান, শুধু কুণাল নয়, সুদীপ্ত-দেবযানীকেও ক্যামেরার সামনেই জেরা করা হয়েছিল বলে তাঁরা জানিয়েছেন। অর্ণব-সহ সিটের আট অফিসারকে ওই সিডি-র বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। অর্ণবকে সিডি দেওয়া হয়েছিল বলে জানান ইনস্পেক্টরেরা। আর অর্ণব জানান, তা রাজীবকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু রাজীব বলছেন, তিনি কিছুই জানেন না।
সিবিআইয়ের জেরায় সুদীপ্ত ও দেবযানী জানান, তাঁরা বেশ কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে সিটের কাছে অভিযোগ করেছিলেন। সারদার গুরুত্বপূর্ণ নথি কোন অফিসের কোথায় রয়েছে, সিট-কে তা-ও জানান তাঁরা। তাঁদের বয়ান অনুযায়ী সারদার বিভিন্ন অফিসে তল্লাশি চালিয়েছিল সিট। সিবিআইয়ের এক কর্তা বলেন, ‘‘সারদার সঙ্গে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের যোগাযোগ সংক্রান্ত বিভিন্ন নথির কথাও সিট-কে জানিয়েছিলেন সুদীপ্ত ও দেবযানী। প্রভাবশালী-যোগের নানা নথি নষ্ট করা হয়ে থাকতে পারে।’’ ওই কর্তা জানান, সারদার টাকা লুটে প্রভাবশালীদের নাম উল্লেখ করা সত্ত্বেও তাঁদের বিরুদ্ধে সম্ভবত কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমনও হতে পারে, প্রভাবশালীদের আড়াল করতেই সেই সব সিডি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। উদ্দেশ্য, সারদার সঙ্গে প্রভাবশালীদের যোগাযোগের প্রমাণ লোপাট করা। সিবিআইয়ের এক কর্তার কথায়, প্রয়োজনে রাজীব, অর্ণব এবং সিটের ইনস্পেক্টরদের মুখোমুখি বসিয়ে ওই সব সিডি-র বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। তাতেও যদি ওই সিডি-র হদিস না-মেলে, তা হলে প্রয়োজনে পুরো বিষয়টি আদালতে জানানো হবে।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।