Sand Smuggling

বালি-মোরাম ‘পাচার’, আটক ন’টি গাড়ি

বর্তমানে ঝাড়গ্রাম জেলায় চারটি সরকার অনুমোদিত বালি খাদান রয়েছে। তার মধ্যে বিনপুর-১ ব্লকে আছে দু’টি। গোপীবল্লভপুর-২ ও নয়াগ্রাম ব্লকে একটি করে খাদান আছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:৩৭
Share:

অবৈধ ভাবে তোলা হচ্ছে বালি। —ফাইল চিত্র।

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেও বেআইনি ভাবে বালি ও মোরাম ‘পাচার’ চলছেই। ছবিটা জঙ্গলমহলের জেলা ঝাড়গ্রামের। বালি বোঝাই গাড়ি চলছে ‘ক্যারিং অর্ডার’ (বালি পরিবহণের অনুমতি পত্র) ছাড়াই। তার প্রমাণও মিলছে হাতে নাতে। একদিনেই অভিযান চালাতেই বালি ও মোরাম বোঝাই ৯টি গাড়ি ধরল ঝাড়গ্রাম ব্লক ভূমি ও ভূমি দফতর। এরমধ্যে আটটি বালিবোঝাই ও একটি মোরাম বোঝাই ছিল।

Advertisement

জানা গিয়েছে, সোমবার সকালে কলকাতা-মুম্বই জাতীয় সড়কে গুপ্তমণির কাছে একটি মোরাম বোঝাই ডাম্পার খারাপ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সেটি ত্রিপল দিয়ে ঢাকা ছিল। ভূমি দফতর সূত্রে খবর, জেলায় মোরাম খাদানের অনুমতি নেই। শুধুমাত্র সরকারি কাজের জন্য গুপ্তমণি এলাকার কাছে শর্তসাপেক্ষে একটি খাদানের অনুমতি দিয়েছে ভূমি দফতর। তবে সেখান থেকে মোরাম নিয়ে যাওয়ার সময়ে চালকের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকা উচিত। তবে ওই ডাম্পারের চালকের কাছে কোনও কাগজ ছিল না। খবর পেয়ে সেই ডাম্পার আটক করে ভূমি দফতর।

বেআইনি বালি খাদান নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভূমি দফতরের বিরুদ্ধে একাংশের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছিলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘আমি পরিষ্কার বলেছিলাম যত বালির জায়গা রয়েছে টেন্ডার করে দাও। যত বেআইনি ভাবে খাদান চলছে আটকে দাও।’ মুখ্যমন্ত্রীর সেই নির্দেশের পরে আরও সক্রিয় হয় ভূমি দফতর। রবিবার রাত থেকে ঝাড়গ্রাম ব্লকের ভূমি দফতর ও ঝাড়গ্রাম থানার পুলিশের যৌথ অভিযান শুরু হয়। রবিবার রাত থেকে সোমবার সকালের মধ্যে বালিবোঝাই লরি ও ডাম্পার মিলিয়ে আগুইবনিতে চারটি, বাঁকশোলে দু’টি গাড়ি ধরা হয়। মানিকপাড়া বিট হাউসের পুলিশ রবিবার গভীর রাতে বালিভাসা এলাকায় দু’টি বালিবোঝাই লরিকে ধরে। এই লরিগুলোর কারও কাছেই ‘ক্যারিং অর্ডার’ ছিল না।

Advertisement

বর্তমানে ঝাড়গ্রাম জেলায় চারটি সরকার অনুমোদিত বালি খাদান রয়েছে। তার মধ্যে বিনপুর-১ ব্লকে আছে দু’টি। গোপীবল্লভপুর-২ ও নয়াগ্রাম ব্লকে একটি করে খাদান আছে। গোপীবল্লভপুর-১, ঝাড়গ্রাম ব্লক, সাঁকরাইল ব্লকে কোনও সরকারি খাদান নেই। তবে কয়েক মাস আগে গোপীবল্লভপুর-১ ব্লকে ‘বেআইনি’ মজুত থাকা বালি বাজেয়াপ্ত করে টেন্ডার করে ভূমি দফতর। যা থেকে ২৯ কোটি টাকার রাজস্বও আদায় হয়। টেন্ডার হওয়ার পরে মজুত থাকা সেই বালি এখন বিক্রি করা হচ্ছে। এক্ষেত্রেও ‘ক্যারিং অর্ডার’ থাকতেই হবে। যদিও ওই ব্লকে নদী থেকে বালি তোলার কোনও অনুমতি নেই। অভিযোগ, ঘুরিয়ে সেটাই হচ্ছে। রাত হলে নদী থেকে বালি তুলে লরি, ডাম্পারে বোঝাই করে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই কোনও ‘ক্যারিং অর্ডার’ থাকছে না। জানা গিয়েছে, এ ক্ষেত্রে ধরা পড়া লরি ও ডাম্পারের প্রায় সবগুলোই গোপীবল্লভপুর থেকেই আসছিল।

আটক করা গাড়িগুলিকে জাতীয় সড়কের পাশে রাখা হয়। সোমবার সেই গাড়িগুলো পরিদর্শন করেন ঝাড়গ্রাম ব্লকের ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক কল্লোল বিশ্বাস। গত সপ্তাহেও রামচাঁদ মুর্মু বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বালি বোঝাই দু’টি লরি ধরা পড়েছিল। ঝাড়গ্রাম ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক বলেন, ‘‘পুলিশ ও ভূমি দফতরের যৌথ অভিযানের ফলে মোট ন’টি গাড়ি ধরা পড়েছে। ৯ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ক্যারিং অর্ডার ছাড়াই একই গাড়ি বার বার ধরা পড়লে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’’ অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) লক্ষ্মণ পেরুমল আর বলেন, ‘‘ঝাড়গ্রামের ভূমি দফতর ভাল অভিযান চালিয়েছে। আমাদের প্রতিদিন অভিযান চলছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement