কলকাতা হাইকোর্ট। —ফাইল চিত্র
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রীকে শুল্ক দফতর বিমানবন্দর-কাণ্ডে যে সমন পাঠিয়েছিল তা বেআইনি বলে জানাল কলকাতা হাইকোর্ট। বুধবার ওই সমনকে কার্যত খারিজ করে দিল কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ। এ দিন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ রায় দিয়েছেন, কেন্দ্রীয় শুল্ক দফতর তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায় (নারুলা)-কে যে সমন পাঠিয়েছিল তা তারা আইনত পাঠাতে পারে না।
এই মামলার সূত্রপাত ২০১৯-এ। ওই বছরের ১৬ মার্চ রুজিরা তাঁর দিদি মেনকা গম্ভীরের সঙ্গে ব্যাঙ্কক থেকে কলকাতায় ফেরেন। কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের করা রিট পিটিশনে রুজিরা জানিয়েছেন, ওই দিন তিনি কলকাতা বিমানবন্দরে নামার পর শুল্ক দফতরের কর্মীরা তাঁর কাছে ঘুষ চান। তিনি তা দিতে অস্বীকার করলে তাঁকে মালপত্র সমেত বিমানবন্দরের রেড চ্যানেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁদের মালপত্র প্রথমে এক্স-রে মেশিন এবং পরে খুলে তল্লাশি করা হয়। কোনও ধরনের বেআইনি জিনিস বা নিষিদ্ধ পদার্থ তাঁদের কাছে পাওয়া যায়নি। এর পরে শুল্ক দফতরের কর্মীরা তাঁদের কাছ থেকে জোর করে টাকা আদায় করার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ।
হাইকোর্টে দায়ের করা আবেদনে রুজিরা জানিয়েছেন, তিনি এর পর নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (এনএসসিবিআই) থানায় গিয়ে শুল্ক কর্মীদের বিরুদ্ধে তোলাবাজি এবং ভয় দেখানোর অভিযোগ দায়ের করেন। আদালতে রুজিরা জানিয়েছেন, তিনি এফআইআর করেন শুল্ক দফতরের বিরুদ্ধে। ওই বছরেরই ২২ মার্চ শুল্ক দফতরের সহকারি কমিশনার এস কে বিশ্বাস এনএসসিবিআই থানায় রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মেনকা গম্ভীরের বিরুদ্ধে ভয় দেখানোর অভিযোগ দায়ের করেন। তার ক’দিন পর ২৬ মার্চ দু’জনকে শুল্ক দফতরে হাজিরা দেওয়ার জন্য সমন পাঠানো হয়।
আরও পড়ুন: প্রশমনের উদ্যোগের মধ্যেও সেনা প্রস্তুতি ধরা পড়ল উপগ্রহ চিত্রে
আদালতে করা আবেদনে রুজিরার আইনজীবী সঞ্জয় বসু জানান, থানায় দায়ের করা অভিযোগে কোথাও বেআইনি ভাবে সোনা বিদেশ থেকে আনা বা শুল্ক না দিয়ে নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি সোনা নিয়ে আসার কোনও উল্লেখ ছিল না। অথচ কোনও রকম বয়ান বা বাজেয়াপ্ত করার নথি ছাড়াই রুজিরাকে শুল্ক দফতর সমন পাঠায়। তার ভিত্তিতে সঞ্জয় বসু ওই সমন খারিজ করার আবেদন জানান আদালতে।
আরও পড়ুন: কথাবার্তা চলছে, আমরা আর কোনও সংঘর্ষ চাই না, বলল বেজিং
প্রথমে বিচারপতি নির্দেশ দেন, রুজিরাকে হাজিরা দিতে হবে শুল্ক দফতরে এবং তদন্তে সাহায্য করতে হবে। সেই সঙ্গে আদালত আইনি রক্ষাকবচ দিয়ে জানায়, শুল্ক দফতর রুজিরাকে গ্রেফতার করতে পারবে না। সঞ্জয়বাবু বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘আমরা ওই নির্দেশের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন জানাই। ডিভিশন বেঞ্চ হাজিরা দেওয়া স্থগিত রেখে সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারপতিকে দ্রুত শুনানি সেরে মামলা নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেয়। পর পর ৩০টি শুনানির পর এ দিন রায় শোনায় আদালত। সঞ্জয়বাবু বলেন, ‘‘আদালত সমন খারিজ করে দেওয়ার পাশাপাশি জানিয়েছে, শুল্ক দফতর প্রথমে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানায়, তার পর ওই একই মামলায় নিজেরা তদন্ত শুরু করতে পারে না। তেমনই আইন অনুযায়ী যে সমন করছে, সে অন্য কারও কাছে হাজিরা দিতে বলতে পারে না।” সঞ্জয়বাবু বলেন, ‘‘এই দুইয়ের ভিত্তিতে সমন খারিজ করেছে আদালত।’’ অন্য দিকে শুল্ক দফতর সূত্রে খবর, তাঁরা এই রায়ের বিরুদ্ধে পুনরায় আদালতে আবেদন জানাবে।