কলকাতা হাই কোর্ট। ফাইল চিত্র।
ঝালদা নিয়ে রাজ্যের দুই সিদ্ধান্তে অন্তর্বর্তিকালীন নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। ১০ ফেব্রুয়ারি আবার দু’পক্ষের বক্তব্য শুনবে উচ্চ আদালত। বিচারপতি অমৃতা সিংহের নির্দেশ, আপাতত পুরসভার চেয়ারম্যান হিসাবে কাজ সামলাবেন নিহত কংগ্রেস নেতা তপন কান্দুর স্ত্রী পূর্ণিমা কান্দু।
কংগ্রেসের শীলা চট্টোপাধ্যায় পুরসভার চেয়ারম্যান হওয়ার পর তাঁর কাউন্সিলর পদই খারিজ করে দেয় প্রশাসন। এ বিষয়ে আগেই আদালতে যাওয়ার কথা জানিয়েছিল কংগ্রেস। শুক্রবার কংগ্রেসের আইনজীবী কৌস্তুভ বাগচী এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। দুপুর ৩টের সময় শুনানির জন্য মামলাটি তালিকাভুক্ত হয়। মামলার শুনানিতে সরকারি কৌঁসুলির উদ্দেশে বিচারপতি অমৃতা সিংহ বলেন, “আদালতের নির্দেশে বৈঠকের মাধ্যমে ১৭ জানুয়ারি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন। ১৮ তারিখ তাকে সরিয়ে দিয়ে নতুন এক জনকে নির্বাচিত করলেন। হেরে যাওয়া রাজনৈতিক দলের থেকে সুদীপ কর্মকারকে নির্বাচিত করলেন। আদালতকে একটু সম্মান করুন।”
সরকারি কৌঁসুলি আদালতকে বলেন, “এরা সকলেই পৌর প্রতিনিধি। পৌর আইন অনুযায়ী যে কোনও প্রতিনিধিকে মনোনীত করতে পারে প্রশাসন।” এই উত্তর শুনে বিচারপতি পাল্টা তাঁর উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, “যাঁরা হেরে গিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে থেকে কেন চেয়ারম্যান মনোনয়ন করা হচ্ছে? প্রশাসনের এত তাড়া কিসের?” এর পরই বিচারপতি সিংহ তাঁর নির্দেশে জানান, পরবর্তী নির্দেশ জারি না হওয়া অবধি ১৮ জানুয়ারি নির্বাচিত চেয়ারম্যানকে সরানোর নির্দেশ উপর স্থগিতাদেশ বজায় থাকবে। তত দিন অবধি পুরসভার দায়িত্ব সামলাবেন কংগ্রেস কাউন্সিলর তথা প্রয়াত কংগ্রেস নেতা তপন কান্দুর স্ত্রী পূর্ণিমা। বিচারপতি আরও জানান, ৮ ডিসেম্বরের যে চিঠির উপর ভিত্তি করে নির্বাচিত চেয়ারম্যানকে সরানো হয়েছে, সেই চিঠি শীলা চট্টোপাধ্যায়কে দেওয়া হয়নি। ১০ ফেব্রুয়ারি মামলাটির পরবর্তী শুনানি হওয়ার কথা।
আদালতের এই সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে কংগ্রেসের আইনজীবী কৌস্তুভ বাগচী জানান, কংগ্রেসের পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও রাজ্যের শাসকদল গায়ের জোরে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে চেয়েছিল। আদালতের শুক্রবারের নির্দেশের পরে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের জয় হল বলে দাবি করেছেন তিনি।
পুরসভায় বহু টানাপড়েনের পর গত মঙ্গলবার পুরপ্রধান হিসাবে শপথ নেন ঝালদা পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শীলা। ঝালদায় কাজ শুরু করে কংগ্রেসের পুরবোর্ড। কিন্তু তার পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রশাসনের নির্দেশে খারিজ হয়ে যায় তাঁর কাউন্সিলর পদই। শীলার জায়গায় ঝালদা পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলর সুদীপকে পুরপ্রধানের দায়িত্ব দেয় রাজ্য সরকার। যা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক দানা বাঁধে।
বুধবার সরকারি নির্দেশ জারি হলেও বৃহস্পতিবার তা প্রকাশ্যে আসে। তার পরেই জরুরি বৈঠকে বসে কংগ্রেস। শীলাকে সরিয়ে তৃণমূল কাউন্সিলর সুদীপকে পুরসভার দায়িত্বে বসানোর পিছনে ষড়যন্ত্র দেখছে কংগ্রেস। এই ‘ষড়যন্ত্রে’র শেষ দেখতে আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিষয়টিকে পাল্টা ‘প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত’ বলে আখ্যা দেয় তৃণমূল।
গত বছর ১৩ মার্চ খুন হন কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু। তার পর থেকেই ডামাডোল শুরু ঝালদায়। আদালতের নির্দেশে বর্তমানে যে খুনের তদন্ত করছে সিবিআই। ১২ আসনের ঝালদা পুরসভায় ৫ জন করে কাউন্সিলর তৃণমূল ও কংগ্রেসের। ২ জন কাউন্সিলর নির্দল হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে তাঁদের মধ্যে একজন যোগ দেন কংগ্রেসে। গত ২১ নভেম্বর আস্থাভোট হয় ঝালদা পুরসভায়। সেখানে নির্দলের সমর্থন নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করে কংগ্রেস। অপসারিত হন তৃণমূলের পুরপ্রধান সুরেশ আগরওয়াল। জবা মাছোয়ার নামে এক কাউন্সিলরকে পুরপ্রধান হিসাবে তুলে ধরে তৃণমূল। সেই মামলা আবার পৌঁছয় আদালতে।
এর আগে আদালত জানিয়েছিল, শীলা বা জবা নন, আগামী এক মাস ঝালদা পুরসভার দায়িত্ব সামলাবেন পুরুলিয়ার জেলাশাসকই। সেই সময় সমস্যার কথা জানিয়ে রাজ্যপালকে চিঠি দিয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। পাশাপাশি, প্রশাসক নিয়োগে রাজ্যের উদ্যোগও আটকে গিয়েছিল আদালতে। সম্প্রতি আদালতে জমা পড়ে জেলাশাসকের পাঠানো রিপোর্ট। সেই রিপোর্ট দেখার পর কলকাতা হাই কোর্ট জানিয়ে দেয়, পুরপ্রধান পদে শপথ নিতে পারবেন শীলা। মঙ্গলবারই তিনি শপথ নেন। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই তাঁর কাউন্সিলর পদ খারিজ করে দেওয়া হয়। অভিযোগ, নির্দল হিসাবে ভোটে জিতে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন শীলা। তার পর তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে পুরপ্রধান হন তিনি। তৃণমূলের তরফে দাবি করা হয়, যা ‘দলত্যাগ বিরোধী আইন’-এর পরিপন্থী।