নিয়োগ মামলায় ধৃত সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের আগাম জামিন মামলায় সিবিআইয়ের ভূমিকার সমালোচনা করল কলকাতা হাই কোর্ট। —ফাইল চিত্র।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’র আগাম জামিন মামলায় কলকাতা হাই কোর্টের সমালোচনার মুখে পড়ল সিবিআই। আদালত প্রশ্ন তুলল, দেড় বছর পরে কেন ‘কাকু’কে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন পড়ল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার?
বৃহস্পতিবার বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি গৌরাঙ্গ কান্তের ডিভিশন বেঞ্চের বক্তব্য, এত দিন কেন ‘কাকু’কে জিজ্ঞাসাবাদের কথা মনে হল না সিবিআইয়ের? ডিভিশন বেঞ্চের প্রশ্ন, অভিযুক্ত জামিন পেতে পারেন ভেবেই কি সিবিআই তাঁকে হেফাজতে চাইছে? বিচারপতি বাগচীর মন্তব্য, ‘‘দেড় বছর ধরে অভিযুক্ত ইডির মামলায় হেফাজতে রয়েছেন। এখন ওই মামলায় হাই কোর্ট থেকে উনি জামিন পেতে পারেন। তাই কি সিবিআই ঝাঁপিয়ে পড়ল? তদন্ত করার হলে এত দিন তারা কী করছিল?’’
সিবিআই অবশ্য ‘কাকু’র আগাম জামিন চেয়ে মামলার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আদালতে। তদন্তকারী সংস্থার যুক্তি, অভিযুক্তকে আগেই ‘শোন অ্যারেস্ট’ করা হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন বলে তাঁকে হেফাজতে নেওয়া যায়নি। এই অবস্থায় তিনি কী ভাবে আগাম জামিনের মামলা করতে পারেন? পাল্টা সুজয়কৃষ্ণের আইনজীবী জানান, ওই বিষয়ে বক্তব্য জানানোর সময় দেওয়া হোক। শুক্রবার মামলার পরবর্তী শুনানি। ফলে বৃহস্পতিবার ‘কালীঘাটের কাকু’র আগাম জামিন মামলায় কোনও হস্তক্ষেপ করল না আদালত।
প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হতে পারেন, এমন আশঙ্কা করে বুধবার আগাম জামিন চেয়ে কলকাতা হাই কোর্টে আবেদন করেছিলেন কালীঘাটের ‘কাকু’। গত সোমবার প্রাথমিক নিয়োগ মামলার তদন্তের স্বার্থে ‘কাকু’কে আদালতে হাজির করানোর আবেদন করেছিল সিবিআই। কিন্তু বুকে ব্যথার কারণে মঙ্গলবার সিবিআই বিশেষ আদালতে হাজিরাই দিতে পারেননি তিনি। জেলের তরফে জানানো হয়, ভার্চুয়ালি তিনি হাজির থাকতে পারেন। কিন্তু আদালত জানায়, সিবিআই যে হেতু তাঁকে হেফাজতে চাইছে, তাই সশরীরে আদালতে হাজির করাতে হবে। সেই মতো বৃহস্পতিবার, অর্থাৎ ২৮ নভেম্বর সুজয়কৃষ্ণকে আদালতে হাজির করানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারক। তার পরেই বুধবার হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন কাকু।
নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ২০২৩ সালের ৩০ মে সুজয়কৃষ্ণকে গ্রেফতার করেছিল ইডি। এখন জেলে রয়েছেন তিনি। তাঁকে হেফাজতে চেয়েছে সিবিআই। যদিও মঙ্গলবার সুজয়কৃষ্ণ আদালতে হাজির হতে না-পারায় তাঁকে হেফাজতে পায়নি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ইডির হাতে গ্রেফতারির পর দীর্ঘ দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। মাঝে হাসপাতালে হৃদ্যন্ত্রের অস্ত্রোপচারও হয়েছিল তাঁর। তাঁর কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ নিয়েও টানাপড়েন হয়। এর পর চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি আচমকাই জোকা ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ‘কালীঘাটের কাকু’র কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তার পর ফের এসএসকেএমে ফিরিয়ে আনা হয় তাঁকে। এ বার তাঁকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করতে চাইছে সিবিআই।
ইডির মামলায় এর আগেই জামিন চেয়ে হাই কোর্টে আবেদন করেছিলেন সুজয়কৃষ্ণ। বিচারপতি শুভ্রা ঘোষের এজলাসে ওই মামলার শুনানি শেষ হয়েছে। রায় ঘোষণা স্থগিত রয়েছে। তারই মধ্যে নতুন মামলায় স্বস্তি পেতে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন সুজয়কৃষ্ণ।