২০০৪ সালে পেনশনের দাবি নিয়ে কোর্টে এসেছিলেন একটি মাদ্রাসার চার জন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। ফাইল চিত্র।
পেনশন পাওয়ার মিলল বটে! কিন্তু মাঝে কেটে গিয়েছে ১৮ বছর। ২০০৪ সালে পেনশনের দাবি নিয়ে কোর্টে এসেছিলেন একটি মাদ্রাসার চার জন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। বহু লড়াই শেষে কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ থেকে মামলার রায় যত দিনে বেরোলো তত দিনে তিন জন পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন। বেঁচে রয়েছেন মাত্র এক জন। ওই চার জনের আইনজীবী এক্রামুল বারি জানিয়েছেন, তিন জন মৃত শিক্ষকের পরিবার পেনশন পাবেন।
আদালতের খবর, পূর্ব বর্ধমানের বরজপোতা হাই মাদ্রাসার চার শিক্ষক নুরে আলম, নুর আলম, আব্দুল মোমিন এবং মুন্সি কাশেম আলি সরকারি পেনশন স্কিমে আসতে চেয়ে শিক্ষা দফতরের সার্কুলার অনুযায়ী, সুদ-সহ টাকা তাঁদের বেতন থেকে ট্রেজ়ারিতে জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু শিক্ষা দফতর আবেদন বাতিল করে। কারণ, টাকা ফেরত দেওয়ার সময়সীমার শেষ হওয়ার দু মাস পরে তাঁরা আবেদন করেছিলেন। ২০০৪ সালে শিক্ষা দফতরের বিরুদ্ধে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন।
কলকাতা হাই কোর্টের তৎকালীন বিচারপতি ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০০৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি রায় দেন, ওই শিক্ষকদের পেনশন স্কিমের আওতায় ধরতে হবে। সময়সীমার দু মাস পরে টাকা ফেরত দেওয়ার পেনশন দেওয়ায় সমস্যা নেই। বামফ্রন্ট সরকারের শিক্ষা দফতর বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের রায়ের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে আর্জি জানায়। ডিভিশন বেঞ্চ বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিয়ে মামলার শুনানি শুরু করে। কিন্তু সেই মামলা শেষ হতে হতে ২০২২ সাল গড়িয়ে যায়। সম্প্রতি বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় এবং বিচারপতি বিশ্বরূপ চৌধুরীর ডিভিশন বেঞ্চে মামলার চূড়ান্ত শুনানি হয় এবং ডিভিশন বেঞ্চ বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের রায় বহাল রাখে।
এক্রামুল জানান, পেনশন না-পেয়ে শিক্ষকেরা অর্থকষ্টে ভুগছিলেন। তিন জন মারাও গিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, “শিক্ষক সমাজের উন্নতিতে শিক্ষা দানে জীবন উৎসর্গ করেন। কিন্তু তিন জন শিক্ষক জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত পেনশন পেলেন না। বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতায় মামলাকারীর হতাশা ছাড়া বোধ হয় আর কিছু থাকে না।”