DA

ডিএ মামলায় কোর্টে ফের ধাক্কা রাজ্যের, পুনর্বিবেচনার আর্জি খারিজ

গত ২০ মে এই দুই বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছিল যে, তিন মাসের মধ্যে রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডিএ মিটিয়ে দিতে হবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৭:০৮
Share:

রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডিএ মিটিয়ে দিতে হবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে। ফাইল চিত্র।

মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) মামলার রায় পুনর্বিবেচনার জন্য কলকাতা হাই কোর্টে আর্জি জানিয়েছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু বৃহস্পতিবার সেই আর্জি খারিজ করে দিল বিচারপতি হরিশ টন্ডন এবং বিচারপতি রবীন্দ্রনাথ সামন্তের ডিভিশন বেঞ্চ।

Advertisement

গত ২০ মে এই দুই বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছিল যে, তিন মাসের মধ্যে রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডিএ মিটিয়ে দিতে হবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে। মহার্ঘ ভাতা দিতে হবে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার অনুযায়ী। তাঁদের কাছেই ওই রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়েছিল রাজ্য। এখন সেই আবেদন খারিজ হওয়ায় আগের নির্দেশই বহাল রইল। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, এ দিন এই মামলায় হাই কোর্টে ফের ধাক্কা খাওয়ার পরে এ বার সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারে রাজ্য। তবে সেখানেও রাজ্যের আর্জি টিকবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান আইনি মহলের অনেকে।

হাই কোর্ট তিন মাসের মধ্যে বকেয়া ডিএ মিটিয়ে দিতে বলার পরেও রাজ্য সেই নির্দেশ পালন না করায় মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী-সহ সরকারি কর্তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করেছে দু’টি কর্মী সংগঠন (কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ় এবং কর্মচারী পরিষদ)। সেই মামলায় কেন আদালত অবমাননার রুল জারি করা হবে না, তার কারণ দর্শাতেও এ দিন নির্দেশ দিয়েছে বিচারপতি টন্ডন এবং বিচারপতি সামন্তের ডিভিশন বেঞ্চ। ৪ নভেম্বরের মধ্যে সরকারি কর্তাদের এই সংক্রান্ত বক্তব্য হলফনামার আকারে জমা দিতে হবে। মামলাকারীদের কোনও বক্তব্য থাকলে, তা-ও ৭ নভেম্বরের মধ্যে হলফনামার আকারে জমা দিতে হবে। মামলার মূল শুনানি হবে ৯ নভেম্বর।

Advertisement

আদালতে ধাক্কা

• ডিএ মামলার রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি খারিজ হাই কোর্টে

• গত ২০ মে-র রায়ই বহাল রাখল আদালতের ডিভিশন বেঞ্চ

• কোর্টের নির্দেশ, খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার অনুসারে ডিএ দিতে হবে

• মেটাতে হবে বকেয়া ডিএ

• সূত্রের খবর, সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারে রাজ্য

এ দিন ডিভিশন বেঞ্চ আর্জি খারিজ করে দেওয়ার পরে রাজ্যকে বিঁধেছেন বিরোধীরা। তাঁদের কটাক্ষ, খেলা-মেলায় টাকা দিলেও, নিজের কর্মীদের ডিএ পাওয়ার পথে বাধা দিতেই কি না মামলা লড়ছে রাজ্য! তৃণমূলের পাল্টা দাবি, বাধা দেওয়ার প্রশ্ন নেই। মুখ্যমন্ত্রী সরকারি কর্মীদের প্রাপ্য মেটানোর বিষয়ে আন্তরিক।

এ দিন পুনর্বিবেচনার আর্জিতে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের মূল বক্তব্য ছিল, আগের রায়ে কিছু ভ্রান্তি রয়েছে। এ ছাড়া, ডিএ মামলায় রাজ্য প্রশাসনিক ট্রাইবুনালে (স্যাট) কিছু রায়ের উদাহরণ রাজ্য দিয়েছিল। কিন্তু তা ডিএ মামলায় হাই কোর্টে পেশ করা হয়নি। তিনি সেগুলি পেশ করে জানান, মূল মামলায় ওই নথিগুলি পেশ করলে হয়তো রায় ভিন্ন হতে পারত। তবে আইনজীবীদের একাংশের পর্যবেক্ষণ, মহার্ঘ ভাতাকে ডিভিশন বেঞ্চ এর আগে সরকারি কর্মীদের ‘মৌলিক অধিকার’ বলে বর্ণনা করেছিল। পুনর্বিবেচনার আর্জির সওয়ালে এজি সেই বিষয়ে সরাসরি বিরোধিতা করেননি।

কোষাগারের হাল

• চলতি অর্থবর্ষে আনুমানিক রাজস্ব ঘাটতি ২৮,২৭৯ কোটি টাকা

• রাজকোষ ঘাটতির পরিমাণ হতে পারে প্রায় ৬২,৩৯৭ কোটি টাকা

• ধার শোধের সম্ভাব্য অঙ্ক ৭০ হাজার কোটি

• মূল কল্যাণ প্রকল্পগুলিতে সম্ভাব্য ব্যয় ৪০ হাজার কোটি টাকা মতো

• রয়েছে বেতন-পেনশনের মতো বাধ্যতামূলক খরচ। বিভিন্ন খাতের নিত্য খরচ

• আদালতের রায় মেনে ৩১% ডিএ দিতে খরচ হতে পারে প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা

কনফেডারেশনের তরফে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এবং ফিরদৌস শামিম কোর্টে জানান, রাজ্যের যুক্তি আদালতগ্রাহ্য হতে পারে না। রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি সীমিত। পুরো মামলা নতুন করে শোনার সুযোগ নেই। কর্মচারী পরিষদের আইনজীবী কল্লোল বসুও আর্জি খারিজের পক্ষে সওয়াল করেন।

সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে আদালত জানিয়েছে, গত বারের রায়ে ভ্রান্তি নিয়ে রাজ্যের যে ধারণা, তা ঠিক নয়। যে নতুন নথি পুনর্বিবেচনার আর্জিতে দেওয়া হয়েছে, তা-ও রায়ের ক্ষেত্রে কোনও প্রভাব ফেলে না। তাই আর্জি খারিজ করা হল।

রায় ঘোষণার পরে সংবাদমাধ্যমে কল্লোল বলেন, ‘‘রাজ্য ডিএ নিয়ে যে মনোভাব দেখাচ্ছে, তা কল্যাণকামী রাষ্ট্রের মতো নয়।’’ ফিরদৌস বলেন, ‘‘ডিএ যে সরকারি কর্মীদের অধিকার, তা বার বার প্রমাণ হচ্ছে। এই নিয়ে ছ’বার আদালতে জয়ী হলেন কর্মীরা।’’

এ প্রসঙ্গে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘এই রায় স্বাগত।... ওঁর (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) সরকার কর্মীদের ডিএ দিতে চায় না, আবার আদালতে হলফনামা দিয়ে বলে ডিএ বকেয়া নেই!’’ রায়গঞ্জে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘ডিএ বাবদ সরকারি কর্মীদের দেড় লক্ষ কোটি টাকা বঞ্চনা করা হয়েছে। ওই টাকা খেয়ে ফেলেছে কালীঘাট! আদালতের নির্দেশ অমান্য করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী, মুখ্যসচিব ও অর্থসচিবের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’’

বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্য, “রাজ্যকে বার বার বলছি, খেলা-মেলা করছেন আপত্তি নেই। কিন্তু যাঁরা ডিএ থেকে বঞ্চিত,... কেন্দ্রের সঙ্গে ৩০ শতাংশেরও বেশি ফারাক হয়ে যাচ্ছে তাঁদের।’’

তৃণমূলের মুখপাত্র তাপস রায়ের অবশ্য দাবি, ‘‘রাজ্য কখনও বলেনি যে, সরকারি কর্মীদের মহার্ঘ ভাতা দেবে না। মুখ্যমন্ত্রী (সমাজের) অন্য সব অংশের মতো সরকারি কর্মীদের প্রাপ্য মেটানোর বিষয়ে আন্তরিক। সব বিবেচনা করে রাজ্য পদক্ষেপ করবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement