ফাইল চিত্র।
একের পর এক অনিয়মের অভিযোগ। মামলার পর মামলা। বছরের পর বছর ধরে আটকে নিয়োগ। আদালতের ভর্ৎসনার মুখেও পড়তে হয়েছে বার বার। তাতেও বিশেষ কোনও লাভ হয়নি! অবশেষে একেবারে নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত নিল কলকাতা হাই কোর্ট। স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানকে পদ থেকে সরানোর সুপারিশ করলেন হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। রাজ্যের কাছে তাঁর প্রস্তাব, শিক্ষা দফতরকে বলব এসএসসি-র চেয়ারম্যানকে সরানো যায় কি না তা তারা খতিয়ে দেখুক। একই সঙ্গে সোমবার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দেন, এসএসসি-র চেয়ারম্যানকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। নিজের পকেট থেকেই ওই জরিমানার টাকা দিতে হবে বলে রায়তে পরিষ্কার জানান বিচারপতি।
২০১৬ সালে নবম ও দশম শ্রেণির নিয়োগের জন্য এসএলএসটি পরীক্ষা হয়। সুমনা লায়েক নামে এক পরীক্ষার্থীর অভিযোগ, তালিকায় আগে নাম থাকা স্বত্ত্বেও তাঁকে নিয়োগ করা হয়নি। অথচ তালিকার নীচে থাকা পরীক্ষার্থীদের নিয়োগ করা হয়েছে। এ নিয়ে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি। নিয়ম মেনে নিয়োগ হয়নি মামলার শুনানিতে তা প্রমাণিত হয়। আদালতের পর্যবেক্ষণ, এসএমএস-এর মাধ্যমে মাত্র তিন দিন আগে কীভাবে দেওয়া হল কাউন্সেলিং বার্তা।
কেন ই-মেইল বা স্পিড পোস্ট করে নিয়োগ সুপারিশ পত্র পাঠানো হয়নি। মামলকারী যে যোগ্য তা মনে করে আদালত। ফলে তাঁকে ফের কাউন্সেলিং বসার সুযোগ দিতে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তার পরই চেয়ারম্যানের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি প্রশ্ন তোলেন, "এত অনিয়মের অভিযোগ কেন। ইনি কোন ধরনের চেয়ারম্যান। কোন যোগ্যতামানের চেয়ারম্যান কাজ করছেন সেন্ট্রাল সার্ভিস কমিশনে।" তার পরই চেয়ারম্যানকে পদ থেকে সরানোর সুপারিশ করেন বিচারপতি। নির্দেশে রাজ্যের প্রতি তাঁর মন্তব্য, এত কিছুর পরও আশা করব পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিক্ষা দফতর ওই ব্যক্তিকে পদে রাখা হবে কি না সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। এবং এই নির্দেশকে গুরুত্ব দেবে। এখানেই না থেমে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের আরও নির্দেশ, চার দিনের মধ্যে এই অর্ডার রাজ্যের মুখ্যসচিব ও শিক্ষা দফতরের প্রধান সচিবের কাছে পাঠাতে হবে হাই কোর্টের রেজিস্টার জেনারেলকে।
এসএলএসটি নিয়োগে অনিয়মে নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই আন্দোলন চলছে। এখনও জারি রয়েছে ওই আন্দোলন। কলকাতার গাঁধী মূর্তির পাদদেশে মাসের পর মাস ধরে ধর্না কর্মসূচি পালন করছেন কয়েকশো চাকরিপ্রার্থী। এ নিয়ে একাধিক মামলাও দায়ের হয় হাই কোর্টে। সোমবার একটি মামলার শুনানিতে এমনই রায় দিল আদালত।