শিশু নিখোঁজ-কাণ্ডে সিআইডি-র তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কলকাতা হাইকোর্ট। ছবি: সংগৃহীত।
আরামবাগের নার্সিংহোম থেকে শিশু নিখোঁজ রহস্যের সুরাহা তো দূরের কথা, ধোঁয়াশা যেন বেড়েই যাচ্ছে। এতটাই যে, এই বিষয়ে সিআইডি-র তদন্ত নিয়েও সোমবার প্রশ্ন তুলেছে কলকাতা হাইকোর্ট। আদালতের নির্দেশেই শিশু অন্তর্ধানের এই ঘটনার তদন্তভার নিয়েছে সিআইডি।
উচ্চ আদালত সূত্রের খবর, শিশুটি মারা গিয়েছে বলেই সিআইডি তদন্তে ইঙ্গিত। তবে এই মামলায় আরামবাগের সংশ্লিষ্ট নার্সিংহোমে প্রসবের দায়িত্বে থাকা কোনও চিকিৎসককে অভিযুক্ত করা হয়নি। এই ব্যাপারেই হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিবি রাধাকৃষ্ণন এ দিন প্রশ্ন তোলেন, অপরাধের সূত্রপাত নার্সিংহোমের লেবার রুমে। তা হলে লেবার রুমে থাকা কোনও চিকিৎসক অভিযুক্ত তালিকায় নেই কেন?
সিআইডি এই মামলায় ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪এ ধারা যুক্ত করেছে। কিন্তু হাইকোর্ট এখনও সেই ধারা গ্রহণ করেনি। এ দিনের শুনানিতে প্রধান বিচারপতি রাধাকৃষ্ণন এবং বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ বলেছে, ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করে চূড়ান্ত রিপোর্ট পেশ করতে হবে। তার পরেই তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে আদালত।
সুভাষ লাহা নামে এক ব্যক্তির অভিযোগ, আরামবাগের নলিনী নার্সিংহোমে তাঁর পুত্রবধূ সন্তান প্রসব করেন। কিন্তু তার পর থেকে শিশুটির খোঁজ নেই। এই বিষয়ে আরামবাগ থানায় অভিযোগ জানিয়েও লাভ হয়নি। উল্টে মামলা মিটিয়ে নেওয়ার জন্য পুলিশ চাপ সৃষ্টি করছিল বলে অভিযোগ। তিনি এই নিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলে উচ্চ আদালত সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেয়। সুভাষবাবুর সন্দেহ, শিশুটিকে পাচার করে দেওয়া হয়েছে। সিআইডি সূত্রে জানানো হয়, শিশুটির ওজন খুবই কম ছিল। নলিনী নার্সিংহোম থেকে তাকে অন্য একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসার অভাবে শিশুটি মারা যায়। দেহ ফেলে দেওয়া হয় নদীতে। দেহ উদ্ধার হয়নি। সদ্যোজাত সম্পর্কিত কিছু নথি জাল করা হয়েছে।
সুভাষবাবুর আইনজীবী নীলাদ্রিশেখর ঘোষ আদালতে প্রশ্ন তোলেন, নথিপত্র যদি জাল করা হয়ে থাকে, তা হলে শিশুটির ওজন সংক্রান্ত নথিটিই বা কী ভাবে বিশ্বাস করছেন তদন্তকারীরা? সমাজের একাংশে এই প্রশ্নও উঠছে যে, যদি শিশুটির মৃত্যুই হয়ে থাকে, সে-ক্ষেত্রে মৃত্যু শংসাপত্র-সহ তার দেহ আত্মীয়পরিজনের হাতে তুলে দেওয়া হয়নি কেন? কেন নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হল মৃতদেহ? দেহ লোপাট করার ব্যাপারটাই কি খুনের ইঙ্গিত দেয় না? আদালতের বাইরে নীলাদ্রিশেখরবাবু জানান, দেহ লোপাটের কোনও প্রত্যক্ষদর্শী বা প্রত্যক্ষ প্রমাণও মেলেনি।