কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
সন্তান বিরল রোগে আক্রান্ত। স্বামীও পঙ্গু। এই অবস্থায় সংসার সামলে দূরের কর্মক্ষেত্রে পাড়ি দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। কর্তৃপক্ষের কাছে তাই বাসস্থানের নিকটবর্তী কোনও স্কুলে বদলির আবেদন জানিয়েছিলেন মুর্শিদাবাদের বালি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা বনানী ঘোষ। কিন্তু অভিযোগ, বার বার আবেদন সত্ত্বেও কর্ণপাত করেননি কর্তৃপক্ষ। জেলায় নিযুক্ত স্কুল পরিদর্শক কিছুতেই বদলিতে রাজি হননি। তাঁকে পদ থেকে অপসারণের নির্দেশ দিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
সংশ্লিষ্ট স্কুল পরিদর্শকের বিরুদ্ধে শুধু অমানবিকতার অভিযোগই নয়, আদালতে ভুল তথ্য পরিবেশন করার অভিযোগও রয়েছে। বিচারপতি তাঁকে এ বিষয়ে স্কুলের তথ্য হলফনামা আকারে জমা দিতে বলেছিলেন। সেই হলফনামায় নিয়ম-বহির্ভূত ভাবে তথ্য দিয়েছেন অভিযুক্ত। এর পরেই বিচারপতি জানান, আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে স্কুল পরিদর্শককে তাঁর পদ থেকে অপসারণ করতে হবে। পাশাপাশি, মামলাকারী শিক্ষিকাকে তিন সপ্তাহের মধ্যে বাসস্থানের নিকটবর্তী স্কুলে বদলি করার নির্দেশও দিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।
মামলাকারী নদিয়ার কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা। মুর্শিদাবাদের স্কুলে পড়াতে যেতে যাতায়াতে মোট ১২৪ কিলোমিটার পথ তাঁকে অতিক্রম করতে হয়। তাঁর সন্তান বিরল রোগে আক্রান্ত। রোগের কারণে শিশুটি দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। মামলকারীর আইনজীবী উজ্জ্বল রায় আদালতে জানান, এই রোগে রোগীর ফুসফুস এবং হৃদ্পিণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আক্রান্তের মৃত্যু হয়। ওই শিক্ষিকার স্বামী ৬০ শতাংশ প্রতিবন্ধী, তাই তাঁর পক্ষেও অসুস্থ সন্তানের দেখভাল করা সম্ভব নয়, জানান আইনজীবী। তাঁর দাবি, শিক্ষিকার আবেদন মেনে না নিলে শিশুটির ক্ষতি হবে।
স্কুল পরিদর্শক বদলিতে রাজি না হওয়ায় নিরুপায় হয়েই হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মামলাকারী। আদালত সংশ্লিষ্ট স্কুল পরিদর্শকের কাছে হলফনামা চায়। এ ক্ষেত্রে স্কুলের স্থায়ী শিক্ষিকাদের নামের তালিকা জমা দেওয়াই নিয়ম। কিন্তু অভিযোগ, স্কুল পরিদর্শক স্কুলের পার্শ্বশিক্ষিকাদের নামও আদালতে জমা দিয়েছিলেন। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ, শিক্ষিকার বদলির বিরোধিতা করতে গিয়ে সঠিক রিপোর্ট দেননি স্কুল পরিদর্শককে। বদলি আটকাতে তিনি পার্শ্বশিক্ষকদের নাম দিয়েছেন, যা নিয়ম-বহির্ভূত। বিচারপতি বলেন, ‘‘সত্যিই এটি একটি বিরল রোগ। এই রোগের কথা আমি জানি। শুধু অবাক হচ্ছি, স্কুল পরিদর্শককে সব জানানোর পরেও তিনি বদলির বিরোধিতা করছেন।’’ এ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বিচারপতি নিজের পূর্বের একটি মামলার রায়ের অংশ তুলে বলেন, ‘‘যে জন্মেছে, সে জন্মানোদের সাহায্য চায়...।’’
আগামী ৫ ডিসেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি। সে দিন রাজ্যকে রিপোর্ট জমা দিয়ে নির্দেশ কার্যকরের বিষয়ে আদালতে জানাতে হবে। আদালতের নির্দেশের পর মামলাকারী শিক্ষিকা বলেন, ‘‘বার বার আবেদন করেও কোনও সুরাহা হয়নি। আদালতের এই নির্দেশ নিয়েও গড়িমসি হতে পারে। শিক্ষা দফতরের কাছে আমার অনুরোধ, মহামান্য আদালতের নির্দেশ দ্রুত কার্যকর করা হোক।’’