গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
স্কুলে গ্রূপ-ডি বা চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগ মামলায় সিবিআইয়ের হাতে প্রাথমিক তদন্ত বা অনুসন্ধানের ভার দিল কলকাতা হাই কোর্ট। সোমবার বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের একক বেঞ্চ জানায়, স্কুল সার্ভিস কমিশন ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদের হলফনামা অনুসারেই পরিষ্কার, ওই নিয়োগ অস্বচ্ছ ভাবে হয়েছে। এবং এর পিছনে আর্থিক বিষয়ও জড়িত। যে হেতু দু’টি সংস্থাই রাজ্যের তাই এই মামলার অনুসন্ধান করবে সিবিআই। তবে এখন তারা কাউকে গ্রেফতার বা কারোর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিতে পারবে না। আগামী ২১ ডিসেম্বর সিবিআই প্রাথমিক রিপোর্ট আদালতে জমা দেবে। তার পরই পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে আদালত। ফলে আপাতত বলাই যায়, শিক্ষায় দুর্নীতি হয়েছে কি না এখন তা খতিয়ে দেখবে সিবিআই।
সিবিআই তদন্তের বিরোধিতা করে এসএসসি-র হয়ে সওয়াল করেন আইনজীবী কিশোর দত্ত। তিনি সুপ্রিম কোর্টের একাধিক পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন। তা শুনে বিচারপতি মন্তব্য করেন, “আপনার যা বলার আছে তার জন্য পাঁচ মিনিট সময় দেব। কেন বুঝতে চাইছেন না আপনারা মামলায় হেরে গিয়েছেন। আপনাদের হলফনামা থেকে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে নিয়ম মেনে নিয়োগ হয়নি। আমি এর তদন্তের জন্য সিবিআই ঠিক করে নিয়েছি।” এর পরই রাজ্যের আইনজীবীর হয়ে অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) বলেন, “অনুরোধ করছি সিবিআই দেবেন না। রাজ্যের পুলিশের উপর এক বার ভরসা করা হোক। রাজ্যের পুলিশের বিরুদ্ধে একটিও অভিযোগ নেই যে তারা যথাযথ তদন্ত করেনি। সিবিআই তদন্ত একটা সময় গিয়ে থেমে যায়।” তিনি আরও বলেন, “যে কোনও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি দিয়ে তদন্ত করালেও অসুবিধা নেই।” পুলিশ তদন্ত নিয়ে রাজ্য হলফনামা জমা দিতে চায় বলেও আদালতে জানিয়েছেন এজি।
এর পর বিচারপতি বলেন, “যে হেতু এই ঘটনার সঙ্গে রাজ্যের সম্পর্ক জড়িয়ে রয়েছে, তাই রাজ্যের কোনও সংস্থা দিয়ে তদন্ত করা যাবে না।” আদালত আরও জানিয়েছে, সিবিআই-কে একটি তদন্তকারী দল গঠন করতে হবে। ওই দলে মাথায় একজন জয়েন্ট ডিরেক্টর এবং ডিআইজি বা এসপি মর্যাদার কোনও অফিসার থাকবেন। শুধু তাই নয়, দলে থাকা কোনও অফিসার তদন্ত চলাকালীন বেরিয়ে যেতে পারবেন না। তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট ২১ ডিসেম্বর আদালতে জমা দিতে হবে বলেও নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি।
২০১৯ সালে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত প্যানেলের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও প্রচুর নিয়োগ হয়েছে বলে মামলা দায়ের হয় আদালতে। প্রাথমিক ভাবে ওই অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল কমিশনের বিরুদ্ধে। কিন্তু গত বুধবার কমিশন আদালতে জানায়, ওই নিয়োগ সংক্রান্ত কোনও সুপারিশ তারা করেনি। এমনকি, বৃহস্পতিবার এ নিয়ে তারা একটি হলফনামাও জমা দেয়। ফলে প্রশ্ন ওঠে, এসএসসি যদি সুপারিশ না করে, তবে ওই নিয়োগ হল কী ভাবে? আর এতেই জড়িয়ে পড়ে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের নাম। তবে বৃহস্পতিবার আদালতে ওই অভিযোগ অস্বীকার করেন পর্ষদের আইনজীবী। তিনি জানান, পর্ষদ নিজে থেকে কোনও নিয়োগ করেনি। কমিশনের সুপারিশ মেনেই হয়েছে যাবতীয় নিয়োগ। ফলে শুনানি কক্ষেই কমিশন এবং পর্ষদের মধ্যে একে অপরের প্রতি দোষারোপের পালা শুরু হয়ে যায়।